কবিতাঃ মনোলি সিরিজ
মনোলি-০১
রাতের প্রদ্বীপটাকে জ্বালিয়ে রাখতে পারিনি
পারিনি শরীর কিংবা মনকে আশ্রয়ে রাখতে
বাতাসের অস্ফালন বেয়ে যখন জ্বালাবার ভরশাও শেষ হয়
তখন উন্মত্ত আঁধারে ঢলে পড়া উগ্রঝড়ে বড় দিশেহারা হই
তোর কষ্টতুর ঐ সাগরের ফেণিলের গর্জনের মতো নিঃশ্বাসে,
আমি আজ বড় অসহায় হয়ে যাই; সুশান্ত।
অধিক কিছু তো চাওয়ার ছিলনা
তোর পায়ে সঁপে দেওয়া জীবন-যৌবনের কাব্যিক গল্প
একটু মুক্তবাতাস, আবেগের একটু ছৌঁয়া
কিংবা সংসার সাগরের ছুটে চলা; এছাড়া আর কি চেয়েছি!
অথচ জীবনের বহিঃরশ্মি চোখের সামনে পর্দাটেনে খেলে গেল
তোর আর আমার মুখোমুখি আবেগী নিংশ্বাসটাকে
কখনোই হেমালকের বীষ ছাড়া কিছুই দিল না।
কখনো কার্পণ্য ছিল না মনের টানে;
অযুত বৎসর আমরা একসাথে থাকব
আলোয় ঘর ভরাব কিংবা জোস্নার সাথে সখ্যতা হবে…
অথচ জীবনের রক্ষা কবচ আমাকে ফাঁকি দিতে চাচ্ছে
তোর শরীর কাঁপা প্রশ্বাস আমাকে বার-বার স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
নারে; সব আজ হারিয়ে বসলাম
মনেরগীটে যখন বল পাই না; শরীর অতটুকুতে তখন কি হয়?
গীরিখাতগুলো বড় বেশী গভীর, এই একটু ঢুলব কি টলব
গহ্বরে ম্লান হয়ে যাবে সব অপ্রকাশিত কথা বা স্বপ্নমালা‘রা
আঁধারে তোর পাণে চেয়ে এ থরো-থরো অশ্রুধারাও বুঝি
আর তুই শান্তনায় ভূলাবি না
বড় নিষ্ঠুর পাষানে আজ তুই বুক বেঁধে নিয়েছিস।
না সুশান্ত; এভাবে আমায় ছেড়ে যাসনে,
তোর পায়ে জীবন ঠুকে-ঠুকে মরতে এসে; এ মনোলি
আঁধারে ঠুকে-ঠুকে হৃদয়টাকে ছেদ করবে,
ভালোবাসার এই একটুখানী দোহাই; তুই তা পারিস না
তুই ছাড়া যে এ আমার দেহবর্ণে আজীবনের সংকুলান।
————————————————————–
মনোলি-০২
অযাচিত ভাবনারাও একদিন মুখ থুবড়ে পথে পড়ে,
তখন জীবনপথের আসক্ত বাসনাটুকু আর থাকে না।
পূর্ণচাঁদে গ্রহণদিলে যেখানে শুক্লপক্ষের জোৎস্না ম্লাণ হয়,
জীবনজোৎস্না চাঁদহীন গ্রহণে সেখানে ম্লাণ হবার মত কি খুঁজবে?
দূরবেলায় আমার আচারিসুখ আজ
দিবালোকের কত আলোই না ম্লাণ করে দিচ্ছে,
দূর দিগন্তে বসে এই আমার পাণে চেয়ে চিত্রশিল্পী‘রাও
হয়তো ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হবে এ জীবনের পটচিত্র,
কেননা সেও যে অন্তরক্ষরণ দাহ’তে দাতস্থ।
আজ দীর্ঘ দুটো বৎসর এই তোর সাথে
হাসপাতালের জেনারেল সিটটাতে বসবাস
তুই দূরালোকে চেয়ে আছিস ফাঁকি দেবার আশায়
আর আমায় রেখে যাচ্ছিস নিঃসঙ্গ একাকী জীবনে
দু‘টুকরো সোনালী স্বপ্নের মায়ায়।
বড় ভয় লাগে সুশান্ত;
অযাচিত যাপনবেলায় একাকী একেলা
এ আমার সব হারাবার দারূণ ভয়
শরীরের রঙ্গের যে আবহ দেহকে চাহিদাযোগ্য করে;
সে রং যে আমার মুচেনি;
বিলক্ষন এ জীবনে তাই কতই না অশুভ শনি ইঙ্গিত করে।
তোর বিহীন এ আমার হয়ত কোন ভাষা রবে না,
তাম্রলংকারে অন্ধকারের যে ছবি ভেসে বেড়ায়
প্রতিবাদ যে তার হয় না। পথহারা বিপথগামীর
বাসনারা কি কখনো শক্তিশালী দেয়াল পায়
এ আকড়ে থাকবে বলে?
তুই সব জানিস; তুমি সব বুঝিস,
তবু অবুঝ ভাষায় ফ্যাল-ফ্যাল চেয়ে থাকিস;
বল দেখী আমার নয়ণধারায় এই অনবরত বর্ষণও কি
তোকে একটু চেতনা দেয় না; বলে না তুই ছাড়া
এ মনোলি; একটা মূর্তিমান দেহবোধ ছাড়া কিছুই না!
সবকিছুই আজ দীর্ঘশ্বাসের বীষে মিশে যায়; সুশান্ত
জীবনরেখার অন্তঃগামীর চোরাশি চেরাকাঁটার বীষক্ষরণে
আমার জীবনের লাভ-ক্ষতির সব হিসেব চুকে যায়।
আর আমি! বরষার আকুলতায় ব্যকুল হয়ে পথে বয়ে যাই।
You must be logged in to post a comment Login