- Home
- প্রথম পাতা
- ব্লগ
- উপন্যাস
- গল্প
- মুক্তিযুদ্ধ
- কবিতা
- ভ্রমণ
- চিত্রকলা
- কথাশৈলী
- চলচ্চিত্র
- রম্যশৈলী
- এলোমেলো
শহুরে ঝড় বৃষ্টির রাত । মধ্যরাতের কিছু আগে রাস্তায় নামে তরুণ কবি । তার পরনে কালো রেইনকোর্ট, পায়ে রাবারের জুতো । তাতে ভেজা রাস্তায় ছপ-ছপ শব্দ হয় । চোখের পাতায় জড়ো হয় বরফ-কুচি পানি । টিমটিমে ল্যাম্পপোস্টগুলোর নিচে সে এক টুকরো আঁধারের মতোই খুঁজে নেয় কাঙ্ক্ষিত সেই ডানহিলের প্যাকেটটি ।
ভরাট শরীরের মর্যাদা সর্বত্র । হোক না সে নারীর, নদীর, কিংবা নিকোটিন সামগ্রীর । তাই হয়তো খুব যত্ন পায় প্যাকেটটি । ঠিক কবির বুকের বা পাশে, আহ্লাদে উষ্ণ, প্যাকেটটি হাঁটার ছন্দের সাথেই দুলতে থাকে । খুব নতুন নারীর নতুন পোশাকের মতো কচমচে শব্দ কবির শরীর মনে ভালো লাগার জোয়ার বয়ে যায় ।
ঘরে ঢুকেই প্রথম শলাকায় অভিবাদন সারা হয়ে গেলে লাল টুকটুকে প্যাকেটটির লজ্জা ভঙে, টেবিলের উপর সাবলীল আয়েশেই স্থান নিয়ে নেয়।
রাত বাড়ে। বাড়ে কাগজ কলমের খসখস ,মুঠোফোনে কাউকে আদরের চকমকি শব্দ। পাশে বসে থেকে থেকে ডানহিলের লাল প্যাকেটটি বেগুনি হয়ে যায় । ইচ্ছে হয় নিজেকে উপুড় করে ঢেলে দেয় কাগজে,কবি দেখুক তাতে কেমন আগুন ধরে যায়! এতটা উপেক্ষায় নিজেকে পুরোপুরি পোড়াতে দিলেই বুঝি স্বস্তি প্যাকেটটির।
রাত আরো বাড়ে। বাড়ে ওয়েস্ট বক্সে দলা পাকানো খসরা । মুঠোফোনের তিক্ত প্রলাপ। এবার ঘন ঘন হাত পড়ে প্যাকেটে। ভালো লাগায় আর সুখে বুদ হয়ে প্যাকেটটি সঙ্গম পিপাসী জীবের মতোই এলিয়ে দিতে থাকে তার কপাট , আগুনে ঝাঁপ দেয়া পতঙ্গের মতোই আহুতি দেয় তার শলাকা সম্পদ।
বৃষ্টি থেমে যায়। ধোয়ামোছা ঝকঝকে চাঁদ এবার কবির জানালায় উঁকি দেয় । তার আলোয় বিবসন প্যাকেটটি জ্বল জ্বল করে কবির শরীর-মন আরো টানে । একটি সফল কবিতা তৈরি হতে হতে শূন্য হতে প্রস্তুত হয় প্যাকেটটি ।
রাত ফুরিয়ে যায় । কমে যায় আকাশে নীল রঙের ঘনত্ব। তাই বুঝি বিদায়ী চাঁদের সাদাটে ভাব ফ্যাঁকাসে ঠেকে কবির কাছে। ক্লান্তি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে শেষ শলাকা থেকে তেজ শুষে নেয়। নিঃশেষ প্যাকেটটি যদিও এবার পূর্ণতার চোখে তাকায় কিন্তু আদতে যে শূন্যতা ফুটে উঠে তাঁর চেয়ে অস্বস্তিকর বুঝি আর কিছু নেই। আর তাই হয়তো প্যাকেটটি ওয়েস্ট-বক্সে ফেলার আগে কবি তা মুচড়ে দিতে ভুল করে না
সতর্কীকরণঃ ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
অনেক ভালো লাগলো।
আরো লেখা আসুক শৈলার রাবেয়া
সকাল রয়
নভেম্বর 15, 2014 at 5:50 পূর্বাহ্ন
ধন্যবাদ দাদা
রাবেয়া রব্বানি
নভেম্বর 20, 2014 at 5:16 অপরাহ্ন
গল্পটা পড়ে কেন যেন সাঁইজির এই লাইনটাই মনে পড়লো বারবার : ‘বিন্দুর মাঝে সিন্ধুবাড়ি, মাঝখানেতে অগ্নিগিরি…’
ছোট হলেও কাব্যিক ছন্দে ‘ভরাট শরীরের মর্যাদা সর্বত্র’ যুক্তিযুক্ত মনে হলো গল্পটি পড়ার পর। নজরেই আসে নি প্রথমে, যখন স্থিরতা পেল দৃষ্টি, দেখি- ভরাট দেহের গল্পটি টিমটিমে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্নাত হয়ে সার্থক করে তুলছে এক প্রসবমুখর রাত, ‘একটি সফল কবিতা তৈরি হতে হতে শূন্য হতে প্রস্তুত হয় প্যাকেটটি’র মতো কবির তুখোড় ভাবনা আর ‘ওয়েস্ট বক্সে দলা পাকানো খসরা’র আহুতিতে মিশে থাকে বিনিদ্র রজনী। সবশেষে, আদি থেকে বেড়ে ওঠা মানুষের মনে নি:স্ব-রিক্তের মর্মযাতনার তুচ্ছতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা যে ইঙ্গিত দেয়, তা সত্যিই বিন্দুর মাঝে সিন্ধু গড়বার অনন্য এক প্রচেষ্টা গল্পকারের।
………….
শুভ হোক।
রাজন্য রুহানি
নভেম্বর 16, 2014 at 2:25 অপরাহ্ন
রাজন্য ভাই আগের মতোই আছেন। সৎ এবং পরিশ্রমী পাঠক।
শুভ কামনা জানবেন ।
রাবেয়া রব্বানি
নভেম্বর 20, 2014 at 5:17 অপরাহ্ন
দুর্দান্ত লিখনি! অনুপমেও অনুভূতিতে বিলীন হলেম।
প্রতিটি লাইনই রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম। এই লাইনকটি অনেক ভালো লাগল- “ঠিক কবির বুকের বা পাশে, আহ্লাদে উষ্ণ, প্যাকেটটি হাঁটার ছন্দের সাথেই দুলতে থাকে । খুব নতুন নারীর নতুন পোশাকের মতো কচমচে শব্দ কবির শরীর মনে ভালো লাগার জোয়ার বয়ে যায় ।”
অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য।
শুভকামনা নিরন্তর।
মামুন
নভেম্বর 20, 2014 at 8:25 অপরাহ্ন
অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়লাম, তবে মনে হলো অন্য কোথাও পড়েছি। শুভেচ্ছা।
মাহবুব আলী
নভেম্বর 25, 2014 at 9:20 পূর্বাহ্ন