বক ও চাষী- এ সময়ের গল্প
বক ও চাষী- এ সময়ের গল্প
আহমাদ মুকুল
ডাক…তাড়াতাড়ি কাস্টমার ডাক…তোদের চঞ্চুতে জোর নাই কেন রে? বুড়ো বক তাড়া লাগায় সন্তানদের।
আচ্ছা পিতৃদেব, আমরা জলাশয়ে মৎস্য শিকার থুইয়া কোন ‘ঝিল’ এ আসিয়া পড়িলাম? সুট-কোট পড়িয়া ধার্মিক সাজিলাম কোন হিসাবনিকাশে- ছোট বক তাহার পিতাকে শুধায়। আর এই ঝিলে ‘মতি’ নামক কাউকে তো দেখি না। সব দেখি ‘মফিজ’ ঘুরিয়া বেড়ায়।
মৎসহীন হইয়াছে জলাশয়, তোর নয়নে দেখিস না তাহা? রোষ কষায়িত লোচনে সন্তানেরে শাসায় বকরাজ, অল্প মৎস্য…বহুত জাল, জলধারায় বাধা হাজার, আমাদের ভাগের চুনা পুটির-উপায় কী বাঁচিবার? জাল এড়াইয়া বিল-ঝিলে মাছ ধরা কঠিন। তাই আমরা ‘জাল ভদ্দরনোক’ সাজিয়া বিকিকিনির জালে ক্রেতাগণকে ফাঁসাইবার মতলবে আধুনিক ঝিলে আসিয়া মহাজনের সাথে শামিল হইয়াছি।
কারেন্ট জাল হইতে বিদ্যুতায়নের শিক্ষা লইয়া বকেরা ঠোঁটে কারেন্ট করাত লাগাইয়াছে। আর অর্থলগ্নির নতুন পেশায় নামিয়াছে।
মহাজনের সাথে চুক্তিতে কাগজ(?) বেচা-কেনায় ব্যস্ত সারসসমাজ।
সমস্বরে গান গায়……বেচিব কাগজ কিনিব মাছ…না যাইব দুষিত জলাশয়ের আশ-পাশ………
হন্তদন্ত হইয়া খবর লইয়া আসে জ্যেষ্ঠ বকশাবক, কাল বিকিকিনি কমিশনের রক্ষী আসিবে! ….কিচ্ছুটি হইবে না, নিশ্চিন্তে কাজ কর বলিয়া সবাইকে আশ্বস্ত করে বুড়ো বক।
পরের দিন কেহই আসে না, শান্তিতেই কাজ সমাধা করিতে থাকে বকসমাজ।
অপরাহ্নে চর বকশাবক আবার বার্তা আনে, কাল বড় কর্তা আসিবে।
একইরূপ স্মিত হাসিয়া বুড়া বক কয়- ইনিও ফাঁকা কর্তা। কথায় কাজে মিল ঘটিবে না, দেখিও তোমরা।
এইভাবেই দিনাতিপাত হইতে থাকে। অকালে কেশ পতনে টাক পড়া মনুষ্য মুণ্ডের আকৃতি নিতে থাকে সাধারণের পকেট। চারিদিকে সাজানো হিসাব, বিরান মধ্যাঞ্চল সুকৌশলে ঢাকিয়া রাখা। আর ঐদিকে মহাজনের হিসাবে অর্থের পাহাড় জন্মে।
এমনি এক বৈকালে সন্দেশ নিয়া আসে বকশাবক। হেলাফেলা বলে খবর জারি করে- কাল নাকি ছিদ্রপকেট দরিদ্র লোকজন আসিবে। বাগান ধ্বংসে ক্ষেপিয়াছে তাহারা। বকে’রা বক্র হাসি দেয়, হাড় জিরজিরা বীর-পুঙ্গবদের কথা ভাবিয়া। বিলাসী হাতি ঘোড়া গেল তল…ভূখা নাঙ্গা দেহাতি পার্টি আসিবে মাপিতে জল !!!
চুপচাপ ধ্যানমগ্ন ছিলেন বুড়া বক। মৌনতা ভঙ্গ করিলেন, মনুষ্যজাতি সম্বন্ধে জ্ঞান ধারণ তোমাদের মত বুরবকদের এখনও দূরস্ত।
জলদি পাততাড়ি গুটাও, সমূহ বিপদ সামনে।
ওরে, অবোধ পক্ষিসমাজ, তোরা বুঝিস নাই। কাইল আর প্রতিনিধি পাঠাইবে না মনুষ্যজনগণ। অনেক ঠকিয়াছে তাহারা নির্বাচিত কিংবা নিয়োজিত ঐ সকল সেবকদের অতি আচারে। আগামীকাল হয়তো গরীব-দুঃখি জনগন নিজেদের বুঝ নিজেরাই বুঝিয়া লইতে আসিবে। ইহারা ক্ষেপিলে নিস্তার নাই, ইতিহাস তাহাই কয়।
দুর্যোগের আলামত ঠিকই টের পাইল পক্ষীকূল। দলে দলে বকসকল তাহাদের আদি আবাসস্থলে রওনা দিল।
বুজদিল মহাজন আর প্রতিনিধিরা বিপদের সঠিকতা আাঁচ করিতে না পারিয়া আরাম আয়েশে মত্ত থাকিল।
11 Responses to বক ও চাষী- এ সময়ের গল্প
You must be logged in to post a comment Login