আজ শান্তিনিকেতনে পচিশে বৈশাখে

দীপক রায়, শান্তিনিকেতন-বীরভুম থেকে
পচিশে বৈশাখ। বাঙ্গালীর আরেকটি আনন্দের দিন। সেই দিনটাকে নিজের মত করে খুজে নিতে চলে এলাম শান্তিনিকেতনে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের একপাশে একটি আশ্রম ও শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮৬৩ সালে এটি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা দেবেন্দ্রনাথ। এই ঠাকুর পরিবার অতীতে বাংলাদেশের যশোরে ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। তখন তাদের পদবী ছিল কুশারী। একসময় এই পরিবারের কেউ কেউ ইসলাম পীরের অনুসারী হয়ে নিজ সম্প্রদায়ে তোপের মুখে পড়ে কলকাতায় চলে যান। তাদের পদবী বদলে গিয়ে হয় ঠাকুর। পরে তারা ব্রাহ্ম ধর্মানুসারী হন। এই শান্তিনিকেতন ছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্ম উপাসনার ক্ষেত্র।
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপন করেন। যা এখন কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় শান্তিনিকেতন আশ্রমেই কাটিয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্য ও সৃষ্টিকর্মে এই আশ্রম ও আশ্রম সংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের অবদান বিরাট। শান্তিনিকেতন চত্বরে নিজের ও অন্যান্য আশ্রমিকদের বসবাসের জন্য রবীন্দ্রনাথ সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর একাধিক ভবন নির্মাণ করেছিলেন। এখন এই আশ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনক্ষেত্র। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এর প্রধান অধ্যক্ষ। তিনিই এখানে প্রতিবছর এসে থাকেন নিয়মিত।
কৈশোরে বাবার সঙ্গে হিমালয়ে যাওয়ার পথে রবীন্দ্রনাথ এখানে কিছুদিন বাস করেছিলেন। ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপনের পরেও রবীন্দ্রনাথ কিছুকাল সপরিবারে এখানে বাস করেছিলেন। পরে তো এই শান্তিনিকেতনই ছিল তার ধ্যান আর জ্ঞান। এখানে আছে রামকিঙ্কর বেইজ নির্মিত বিমূর্ত সব ভাস্কর্য। আছে সুন্দর সব মাটির বাড়ী। পড়াশুনোর জন্যে আছে আমগাছের নীচে পাঠশালা। দেশী-বিদেশী নানা ভাষায় এখানে পড়াশুনোর ব্যবস্থা আছে। এখানে যারাই পড়ে, তাদের আশ্রমিক বলা হয়। সারা বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। সব আশ্রমিকেরাই সেইসব অনুষ্ঠানে নাচে-গানে-কবিতায় অংশ নেয়।
সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান এখানে বসন্তোতসব। আর আছে পৌষ মেলা। এছাড়া নববর্ষ, বৃক্ষরোপন, হলকষন, বর্ষা ও বিভিন্ন ঋতুকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠান লেগেই আছে এখানে। এখন এখানে নানা জায়গা থেকে মানুষ এসে ভীড় করেছেন। তারা রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে একবার মিউজিয়ামে গিয়ে দেখবেন রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা নানা জিনিস। ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পাবেন না তার নোবেল পুরস্কারটি। কারন সেটি চুরি হয়ে গিয়েছে। এদিকে সেজে উঠেছে শান্তিনিকেতন। হচ্ছে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান। সারা বাংলায়, এপার ওপার দুই বাংলায়, সারা দুনিয়ার বাঙ্গালীরা পালন করছে পচিশে বৈশাখ। আর শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য আমের বাগানের নীচে বসে যেন গেয়ে উঠছি, ‘একবার এসো ফিরে রবিঠাকুর, আমাদের এই গ্রামে….’।
You must be logged in to post a comment Login