রিপন কুমার দে

করোনা-ভাইরাসের জরুরি মিটিং

করোনা-ভাইরাসের জরুরি মিটিং
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

বাংলাদেশের করোনা-ভাইরাসগুলো জরুরি মিটিংএ বসেছে। পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার না। চীনের উহানের হেড অফিস থেকে হেড কমান্ডার ভাইরাসও জরুরি তলব পেয়ে বাংলাদেশে উপস্থিত।

সব ভাইরাসগুলোর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। সবাই একে ওপেরের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। সবাই শুনশান নীরব।

নীরবতা ভঙ্গ করে গলা খাঁকারি দিয়ে হেড-কমান্ডার ভাইরাস বলে উঠল, “তোমাদের কে যে মিশন দিয়ে এখানে পাঠিয়েছি সেটার আপডেট কি? কোনও ভাল খবর তো শুনতে পাচ্ছি না!”

এমন প্রশ্ন শুনে সবাই নিচের দিকে কাচু-মুচু করে তাকিয়ে আছে। এমন কথা তো তাদেরকে অন্যকোন দেশের জেনারেল মিটিংএ শুনতে হয়নি। তখন কান্ট্রি-চিফ ভাইরাস আমতা আমতা ভাব নিয়ে বলে উঠল, আমাদের পুরা সৈনিক বাহিনী (কমব্যাট টিম) heart and soul চেষ্টা করে যাচ্ছে জনাব, কিন্তু এই ‘জটিল’ দেশে আমরা কোনওভাবেই সুবিধে করে উঠে পারছি না। এই দেশের হাবভাব-ই বুঝে উঠতে পারছি না, জনাব।

আমরা ডাইরেকট-অ্যাকশান এ যাওয়ার পরেও এই জাতির কোনোই বিকার নাই। নইলে আমরা দশম-মাত্রার অ্যাটাক করার পরেও ওরা শ্বশুরবাড়ি, মামারবাড়ি গিয়ে জলপাই এর আচার খাওয়ার সাহস পায় কিভাবে, হেভি মেকাপ-গেটাপ নিয়ে বন্ধুর বিয়ে খাইতে যায় কিভাবে? ফেইসবুক-এ ধুমাইয়া আমাগো ছবি মোডিফাই করে নিজেগো সেলফি আপ্লড দেয় কিভাবে? সবকিছুকেই কীভাবে যেন এই কিউট বাঙালিরা উৎসবের আয়োজন দিয়া ভরাইয়া ফেলতাছে। এই দুর্যোগেও এখানে ভালোবাসার ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, করোনার পেসেন্ট/সাসপেক্টের এর সাথে গলাগলি করে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর বলতেছে- মরলে একসাথে মরমু, বাঁচলে একসাথে। কেউই আমাদের পাত্তা টাত্তা দিচ্ছে না! আমাদের সৈন্যরা সমানে টাসকি খেয়ে যাচ্ছে।

এদের জন্য জায়গায় জায়গায় হামলা করার ভয় না দেখিয়ে কিছু জেলখানা বানালে ভালো হতো। এটলিস্ট জেলে ঢুকার ভয়ে হলেও এদের কিছুটা বিকার আসত।

একথা শুনে হেড-কমান্ডার ভাইরাস রেগে উঠলেন, বল কি? এটা তো আমাদের ইজ্জত-কা শাওয়াল! তোমাদের মত বীররা পৃথিবীর সব দেশকে পরাজিত করে এসে এখানে আসার পর দেখি নিজের ইজ্জতটাই ধরে রাখতে পারছ না। সব পাংছার হয়ে যাচ্ছে। তোমরা করছটা কি? উহান থেকে কালো-চশমাওয়ালা রেবফোর্স পাঠাতে হবে মনে হচ্ছে!

কান্ট্রি-চিফ ভাইরাস বললো, কালো-চশমাওয়ালা রেবফোর্স পাঠিয়েও লাভ হবে না, বস, এরা বড়ই তেরা জাতি! এর মধ্যে পিছন থেকে আরেকজন কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠল, বাংলাদেশ দূষণ-এ ভরা, আমাদের মাস্ক দরকার। এখানকার রাস্তাঘাটে অনেক ধুলা-বালি, আমাদের নিজেদেরই শরীরেরও ঠিক নাই, এখানে আসার পর থেকেই সর্দি কাশি বাড়তাছে। উহানে আমার পরিবারডা রেখে এসেছি, একটা ছোড বাচ্চাও আছে আমার, ফিটনেসটা তো ঠিক রাখা দরকার। সবাই কে উহান হেড অফিস থেকে মাস্ক provide করলে ভাল হয়, বস। এখানে এখন করোনা হাইপ মাস্কের দাম ২০০ টাকা প্লাস, বাগে পেয়ে ওরা দাম বাড়ায় দিছে।

তখন সেনাপতি ভাইরাস বলে উঠল, এদেরকে কাবু করা খুব শক্ত, জনাব। এরা মাস্ক খুলে নাকও চুলকায়! আমাদের লাইফটাইম ‘পার্টনার’ ডেংগু মশাও এই বিষয়ে আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছে। ওরা স-মা-নে কামড়িয়েও এখন এদেরকে কিছুই করতে পারছে না। ওদের নাকি এখন আর কোন ছেতভেৎ হয় না। তার মধ্যে এখানকার সব হোমিওপাথিক ডাক্তাররা আমাদের জন্য ভ্যাক্সিনও বানায়ে ফেলছে বস, ক্লিনিকাল ট্রাইল ছাড়াই। আনাছে কানাচে, ফুটপাথে সবাই ভ্যাক্সিন নিয়ে বসা। অলিগলি সব জায়গাই এখন খুব রিস্কি!

কান্ট্রি-চিফ ভাইরাস আতঙ্কিত ভঙ্গিতে হাত কচলিয়ে বলে উঠল, এগুলা হইলেও হইত জনাব, মুল সমস্যা আরও গভীর। আমাদের টিম মেম্বাররা পল্টন ময়দানের একটা রাজনৈতিক সভায় গিয়েছিল সেদিন, এক ইটালি ফেরত আদমির সাথে করে।

হেড-কমান্ডার ভাইরাস হকচকিয়ে বললো, তাতে এমন কি হইছে? সভাসমিতিতে attend করা তো ভাল।

কান্ট্রি-চিফ ভাইরাস কাচু-মুচু ভঙ্গিতে বলে উঠল, এতে অনেক বড় গড়বড় হয়ে গিয়েছে! এই সভার পর থেকেই আমাদের পুরা টিমটা দুই দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছিল আজ…। কথাটা শেষ করতে পারেনি কান্ট্রি-চিফ। পিছনের সারি থেকে এক মোটাসুটা গোঁফওয়ালা ভাইরাস তীব্র স্বরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, জাতির পিতা-ডা আবার কে? জাতির পিতামাতা যদি কেউ থেকে থাকে সেটা তো আমাদের জিয়াউর রহমান আর আমাদের নেত্রি দেশরত্ন, নয়নমণি খালেদা জিয়া। আমাদের জিয়াউর রহমান ওই ঘোষনাটা না দিলে কে এই দেশের জন্ম হইত? বাংলাদেশ নামে কি আজ কোনও দেশের অস্তিত্ব থাকত, শালা?
পিছন থেকে তখন ‘BNP’ ঘরানার ছাত্রদল ভাইরাসরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”।

আওয়ামী ভাইরাসদল তখন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল, হারামির বাচ্ছারা, তোদের গুষ্টি কিলাই, COVID-এর খেতা পুরি, জিয়াউর রাহমান কার অন্ন খাইত, তোরা জানোস? তোদের নটী***। আওয়ামীদল তখন বিএনপিদলের উপড়ে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পরল। পরিস্থিতি দেখে কান্ট্রি-চিফ ভাইরাস হেড-কমান্ডার ভাইরাস কে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলেন, কিন্তু শেষ অবধি কোনও সুবিধে করতে পারল না। সবাই দুই দলে বিভক্ত হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিয়োজিত হয়ে পরল। ভয়াবহ যুদ্ধ চলতেই লাগল।

পরেরদিন বাংলাদেশের সকল খবরের পাতায় হেডলাইন নিউজ আসল। “বাংলাদেশ করনা ভাইরাস থেকে মুক্ত”।

গোটা পৃথিবী এমন নিউজ দেখে হতবাক।

জাতিসংঘ মহাসচিব শেখ হাসিনাকে বীরনেত্রী উপাধি দিয়ে, চলতি অধিবেশনে “How to kill the deadly virus so fast” শীর্ষক বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাল।

Note: Corona is still spreading, BE safe, wash your hands frequently and be unsocial until its safe.

Disclaimer: Please don’t take it seriously.

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


2 Responses to করোনা-ভাইরাসের জরুরি মিটিং

You must be logged in to post a comment Login