বিবর্ন পাতা থেকে :: ৩
অমি ,
অনেককাল তোর সাথে যোগাযোগ নেই । তোর কথা ভীষন মনে পড়ে । হৃদয়ের নিকটে শুধুই তুই রয়ে গেছিস । বাকিরা কেমন ধিরে ধিরে অন্তর্বাষ্পের মতই মিলিয়ে গেছে । ভাগ্যিস ! তুই শৈশবেই আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলি । কৈশর কি আমার স্মৃতি না বর্তমান আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না । আর যৌবন তো চলে গেল ছুটোছুটি করতে করতে । আজও তুই আছিস ব’লে আমি নিঃসঙ্গ নই ।
সাঁঝবেলার ক্লান্তিময়তা আমায় ঘিরে ধরেছে । এখন সবেতেই ক্লান্তি আসে । খাওয়া , ঘুম , নাওয়া সবেতেই ক্লান্তি আসে । ক্লান্তিতে শরীর জড়িয়ে আসে । সন্ধ্যেবেলা বারান্দায় বসে পাহার দেখি । সুর্যের শেষ আলো ছুঁয়ে যায় পাহার চূড়া । পাহারগুলোকেও ঠিক আমারই মত ক্লান্ত দেখায় । কে জানে , সবাই এমন দেখে কি না ? হয়ত আমার হৃদয়ের , শরীরের , স্বত্তার , অস্তিত্বের ক্লান্তিময়তাই ওই পাহারগুলোয় ভর করে । পাহারের ছাঁদ ঘেঁসে ঘরে ফেরে পাখিরা । কী অদ্ভুত বিষন্ন দেখায় ওদের !
আমায় আর কোনো কিছুই পিছু টানে না রে , অমি । সেই বকুলতলা , খেলার মাঠের কোনের আমগাছ , নীলমেলা , মেলা থেকে কিনে আনা মন্ডাইয়ের সুবাস , দিগন্তে মিশে যাওয়া বলেশ্বরের তীর , … । কোনো কিছুই আর আজ আমায় পিছু টানে না । না আমার স্মৃতি ; না বর্তমান । নীলমেলা থেকে পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেনা বাঁশিগুলো সারাটা জীবন ধরে আগলে রেখেছি । আজও আমার পড়ার ঘরে সেই বাঁশিগুলো রাখা আছে । বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কখনো কখনো ওগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি । কেন ; কে জানে ? ওতে ঘুন ধরে গিয়েছে । শুধু বাঁশিগুলোর অবয়বই বেঁচে আছে ; ওতে আর কোনো সুর বেঁচে নেই । সুর বেঁচে নেই বলেই বোধহয় ওগুলো আর পিছু টানে না আমায় ! যৌবনের প্রথমভাগে পিছুটানগুলোকে ঘৃনা করতে – অস্বীকার করতে শুরু করেছিলাম । আজ বুঝি , বেঁচে থাকার জন্য ওই পিছুটান কতটা দরকার ।
প্রদীপ প্রায় ফুরিয়ে এলো । কোথায় আছিস ; কেমন আছিস – তার কিছুই জানা নেই । কী হতভাগা বন্ধু তোর ! প্রার্থনা করি , যেখানেই থাকিস – যেন জীবন্মৃত হয়ে না থাকিস । বেঁচে থাকিস ।
তোর ভাঙ্গাচোড়া
মাহির ।
5 Responses to বিবর্ন পাতা থেকে :: ৩
You must be logged in to post a comment Login