মাঝরাত্তিরের অনুকাব্য :: ৭
১।।
বিষাদের সুর ওই পুঞ্জিত মেঘমালায়
মিলে গিয়ে শুভ্র-ধুসর বিষাদ-বর্ণ ছড়ায় ;
কবেকার জমে থাকা মন-কোনে ব্যথা ,
গোধুলি-বিষাদে স্মৃতি যেন আজ রূপকথা !
আঁধার নামে – বড় নীরবে ; অস্ত যায় রবি
সন্ধ্যাতারার স্পর্শে হারায় আঁধারের কবি !
২।।
বিদ্যুতের তারে মারা পড়ে শালিক আর কাক ;
সৌখিনের সখ মেটাতে বিষ্ময়কাতর দৃষ্টি নিয়ে
আপন প্রাণের উৎসর্গ পদাবলি রচে অতিথি পাখিরা ;
এভাবেই চপল মৃগ হয়ে যায় স্তব্ধ ; এরা তুচ্ছ –
ইতর প্রাণি বিশেষ ! কী যায় আসে ওদের চলে যাওয়ায় ?
ওদের দলে যে রয়েছে আমারও নাম !
তবে আমার জন্যে কেন অপেক্ষা করে রয়
লাশকাটা ঘরের শীতল উষ্ণতা আর একরাশ পিছুটান ?
৩।।
কোনো একদিন শহরের রাজপথে নেমে আসে ঘুম ,
শুনশান নিয়ন আলো ছুঁয়ে বয়ে যায় উষ্ণ হাওয়া ;
শুধু শহর চৌরঙ্গীর বখাটে কুকুরেরা জেগে থাকে
আর পলে পলে জানায় , ‘আমি জেগে আছি ।’
নির্লিপ্ত নয়নে কাকেরাও জেগে থাকে প্রতিনিয়ত
অস্তিত্ত্বের সঙ্কটে ; ওরা ঘুমোয় না – স্বপ্ন এসে ছোঁবে ব’লে !
৪।।
ওরা তোমার সিঁথিতে সিঁদুর বিছিয়ে
তোমায় বিধবা করে দিয়ে গেলো !
আর আমার প্রাণহীন চোখ অসহায়ের মতন
গুমড়ে মরেছে পুনঃপুনঃ ।
তোমার আকুতি স্তব্ধতার বুকে শেল বিধিয়েছে ;
শকুনের মতন খুবলে খুবলে
আমার প্রাণহীন প্রাণ চিড়ে বের করে এনেছে
আমার ব্যার্থতার পংক্তিমালা ;
প্রানহীন আমি সে আকুতিটুকুও করতে পারিনি !
৫।।
মধ্যরাতের ট্রেনটি স্টেশান ছেড়ে গেল’ ,
ট্রেনের হুইসেল রাতের শুনশানকে চিড়ে
একটা করুন – হৃদয়ে ব্যথা-জাগানিয়া
আর্তনাদ করে ওঠে শেষ জেগে থাকা
পাখিটির মতই ; বড় কষ্ট জাগে বুকে !
আমিও তো এ নগরীর বুকে শেষ জেগে থাকা মানুষ ;
এক বুক হাহাকার চেপে ঘুম ঘুম অভিনয়ে মাতি তবু
অশ্রুসজল চোখে এতটুকু শব্দও করি না !
৬।।
মন্দ নয়, এই মৃত হয়ে বেঁচে থাকা ।
অনুভুতিমালা বড্ড জ্বালাত’, কি বল’ ?
আবেগের কথা তো বাহুল্য ; এরচে’ ভালো
এই মৃত হয়ে বেঁচে থাকা – অনুভুতির অগচরে !
৭।।
কোনো রাতে দু’চোখে নেমে আসে অনন্ত ঘুম ,
কোনো রাতে খুনসুটি ওই সন্ধ্যা তারার ;
কোনো রাতে দু’চোখে নামে স্মৃতির মেলা
হাজার বছরের জ্বলজ্বলে তোমাতে-আমাতে ভালোবাসার !
৮।।
অবশেষে একদিন যখন সূর্যের সাথে আমারও ঘুম ভাঙে গেল ,
আমি দেখলাম – অনুভব করলাম সর্ব অস্তিত্ত্বে –
আমার আত্মাই শুধু জেগেছে আজ ; দেহখানি ঘুমিয়ে পড়েছে চিরতরে ।
কী আনন্দ ! কী ভীষন স্বাদ এই মুক্তির ! আমার চির আকাঙ্খিত সেই মুক্তি !
৯।।
এভাবে কেটে যায় সন্ধ্যেরা ; ধীর পায়ে নেমে আসে আধার ,
হৃদয়ে গুমরে কাঁদা কান্নারা খুঁজে হারায় নীড়
আর ব্যাথারা যেন কাশফুল – কষ্টমাখা বাতাসে কুড়োয় আহার !
১০।।
জানি, একদিন কিছুই থাকবে না,
না আমি, না তুমি ; না আমাদের দুঃসময় ।
সন্ধ্যেবেলায় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরার মতই
আমরা , আমাদের আনুসঙ্গিকতা ফিরে যাবে
ঠিকানাহীন কোনো অজানায় ।
১১।।
তবে যাক না মুছে ওই রাতের আলো
তোমাদের সভ্যতা তোমাদেরই থাক ;
রাতকে খুঁজে নেই আমি আঁধারের আলোতে
যখন সব সুখেরা নির্লিপ্ত নয়নে থাকে নির্বাক !
১২।।
কবেকার কোন কথামালা আর
চোখের কোনের অন্তর্বাষ্প-জ্বালা
ছুঁয়ে যায় বৈশেখে-তপ্ত হাওয়ার মত আজও ;
সেই উদাসী হৃদয় আর চঞ্চল নয়নের
অবিরত ছন্দ আর তার দোলাচল
এ হৃদয়ে আজও এঁকে যায় কাব্য ;
শুধু জানি না আজ কোথায় আছ ;
জানি না আজ কেমন আছ , স্বপ্নিতা ?
১৩।।
ভিখিরির মতন দ্বারে দ্বারে ঘুরি ,
ইনিয়ে বিনিয়ে সুর করে চাই আশ্রয় ;
অনিকেত আজ ওরা নাকি সবে –
নির্লিপ্ত চোখ ; আমি নিরুপায় !
১৪।।
আঁধারের অতিথিরা যখন ছায়ার পদচিহ্ন খুঁজে ফেরে ,
সন্ধ্যাতারাটা তখন বিলায় আলো অথৈ তেপান্তরে ;
সাঁঝবেলাতেই ধ্রুবতারাটা যখন শুকতারাকে খোঁজে ,
কনে-দেখা-আলো তখন অলস আমোদে অবেলায় চোখ বোজে !
১৫।।
সব বর্ণ কালোতে মিলালে বড় ভয় হয় ,
চৌ-মাথার হট্টগোলেও বড় নির্জন এ হৃদয় !
১৬।।
এমনটা ভালো লাগে ; শামুকের মতন
নিথর হয়ে চুপসে পড়ে থাকা অনন্তকাল ;
ভালো লাগে সন্ধ্যা শেষের রাতের আমন্ত্রন –
ধুকপুক হৃদয়ের প্রহর পেরিয়ে আসা শুভ্র সকাল !
© আহমেদ মাহির
১৯/১১/১০
11 Responses to মাঝরাত্তিরের অনুকাব্য :: ৭
You must be logged in to post a comment Login