সালেহীন নির্ভয়

বাস্তব জগতের বাইরে-২

বাস্তব জগতের বাইরে-২
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

557639_8c5c_625x1000মানুষের কল্পনা শক্তি চিরকালই এক বিরাট রহস্য। এর রহস্য আরো অধিক ঘনিভূত হয়েছে ঘুমের মধ্যে মানুষের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নিয়ে। মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে মানুষ কি দেখে? মানুষের চেনা জগতের বস্তু গুলোকে নিয়েই মানুষ স্বপ্ন দেখে। বাস্তবে মানুষ রক্ত মাংসের দেহ নিয়ে বস্তু জগতে ঘুরে বেড়ায় আর স্বপ্ন জগতে সেই একই মানুষ দেহহীন ঘুরে বেড়ায়।

সূফি সাধকেরা আধ্যাত্মিক মতবাদে বিশ্বাসী। তাদের আধ্যাত্মিকতার প্রধান অস্র ধ্যান। আধ্যাত্মিকতা অথবা ধ্যান কোনটাই বাস্তব জগতের সাথে সম্পূরক নয়। তবে সমানুপাতিক। সমানুপাতিক এই জন্য, আধ্যাত্মিক জগতের আত্মার উপর দেহ নিয়ে বাস্তব জগতে বিচরন করে মানুষ আবার দেহহীন আধ্যাত্মিক জগতেই ফিরে যায়। তাহলে আধ্যাত্মিক জগৎ, বাস্তব জগৎ ও মানুষের ধ্যানী অবস্তা আসলে কী? কোন জগৎ মানুষের জন্য পরম সত্য জগৎ?

এখন পর্যন্ত যেহেতু মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে পরকালের পুনরুত্থানের পরবর্তী জগতের শুরু হয়নি সেহেতু আমার বস্তু জগৎ আমার কাছে পরম সত্য বলে মনে হতে পারে। আবার মৃত্যুর পর যদি ভিন্ন জগৎ থেকেই থাকে তবে বাস্তব এই জগৎ পরম সত্য নয়।

মৃত্যুর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী জগৎ নিয়ে হাজার বছর ধরে কথা বলে আসছে বিভিন্ন ধর্মালম্বীরা। কিন্তু তাঁতে কি সেই অমীয় জগতের স্বাদ বাস্তব জগতের কেউ পেয়েছে?

আধ্যাত্মিক জগৎ

আত্মার যে জগৎ সে জগতেই আধ্যাত্মিক জগৎ। আধ্যাত্মিক সাধকেরা ইহ জীবনের জৈব মায়া-মমতা, সুখ-সমৃদ্ধির উর্ধ্বে শুধু পূণ্যের ভিন্ন এক জগতের কল্পনা করেন। যাপিত জীবন থেকে সে জগতে প্রবেশের একমাত্র পথ হচ্ছে ধ্যান। আহার-নিদ্রা, ঝরা-মৃত্যু, দুঃখহীন এক অনন্ত জীবনের এ এক নতুন জগৎ।

ধ্যান

ধ্যান অনেকটা স্বপ্ন আর কল্পনার মতো। ধ্যানের মূল চালিকা শক্তি কল্পনা। সুপরিকল্পিত কল্পনার মাধ্যমে নিজেকে ইহ জগৎ থেকে দেহহীন ভিন্ন আরেক জগতে সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত করাই ধ্যান। ধ্যানের মাধ্যমে নিজেকে উচ্চতর কল্পনার জগতে নিয়ে সৃষ্টিশীল স্রষ্টায় রুপান্তর করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ আত্মা, কলুষতা মুক্ত স্বত্ত্বা এবং সুন্দর নির্মল একটি মন।

আত্মা, স্বত্ত্বা মন

আত্মা নিরাকার। আত্মার ধ্বংস নেই। মানুষের প্রাণ বায়ুই হচ্ছে আত্মা। আত্মার উপস্থিতিতে মানুষের দেহ অবকাঠামো সচল থাকে। অপরদিকে আমার আমিত্ব বলতে যা বুঝায় তাই হচ্ছে স্বত্বা। আত্মা এবং স্বত্বার মধ্যে মূল পার্থক্য হল স্বত্বা বিকশিত হয় আর আত্মা চিরকালই একরকম থাকে। আত্মা সবসময় দ্রুব। স্বত্বা দ্রুব নয়। আত্মার উপর নিজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

আমার আমি হচ্ছে স্বত্বা। যার স্বত্বা যত কলুষতা মুক্ত ও নির্মল সে ততো উচ্চতর মানুষ। মানুষের মাঝে তার দৃষ্টি ততো প্রসারিত। এই বিকাশমান সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে বা বিকশিত করে অতি রহস্যে ঘেরা মন। মনের আছে চিন্তা শক্তি। মন পার্থিব এবং অপার্থিব সকল বিষয় অনুভব করতে পারে। মনের শুধু আলো নয় মহাবিশ্বের যে কোন বস্তুর চেয়ে সহস্র গুণ বেশী দ্রুতগামী।

মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতাগুলোকে মন বিশ্লেষণ করতে পারে। মন ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন ঘটনার ইঙ্গিত দেয়।

মন সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু মনকে নিয়ন্ত্রণ করে অন্য শক্তি। এই অন্য শক্তিকে ধরার যে পদ্ধতি তাই ধ্যান বা মেডিটেশন। আর সেই শক্তির জগৎ হল আধ্যাত্মিক জগৎ।

বাস্তব-জগতের-বাইরে-১

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


One Response to বাস্তব জগতের বাইরে-২

You must be logged in to post a comment Login