ফকির ইলিয়াস

আমার কিছু বাছাই কবিতা -৩

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আমার কিছু বাছাই কবিতা -৩
=======================
ভার্চুয়াল ভোরের দক্ষিণে
———————————
বার বার ভুলে যাই পাসওয়ার্ড।ভোরের উত্থান দেখে
আবারও নির্ণয় করি আমার চারপাশে জাগ্রত দক্ষিণ।
কে রেখে গেছে ছায়া, ভার্চুয়াল উষ্ণ আকাশে,- তা
খুঁজে উঁচু করি শির। তাকাবার কৌশল জানা ছিল বলে,
খুব সহজেই দেখে নিতে পারি মেঘাবৃত মনের গহীন।

গ্রামলিপি পাঠ করে ক’জন কিশোর কিশোরী এসে
দাঁড়িয়েছে এই ভোরের উত্তরে। ইচ্ছে হয়, জানতে চাই
তাদের কুশল। প্রশ্ন করি, তাদের মতো এই বন্ধ্যানদীও
কী শিখেছে আদৌ জুমল্যান্সের ব্যবহার ! দূর থেকে
কাছে দেখার গোপন বিনয় ।

বার বার ল্যাপটপের আলো দেখে চিনে ফেলি , হারিয়ে
যাওয়া মুখবইয়ের ছবি। ডাকযোগে হাতে আসা
প্রাচীন চিঠিগুলো টেবিলের এককোণে স্থির, ঝাপসা
অক্ষরের বেদনায় দ্রবীভূত হয় ।

বাষ্প . অনলাইন
————————-
তাঁতের শাড়ি পরে ভোর আসে আমাদের দরোজায়।
যারা যায় কুড়াতে শিশির ,তারা ফিরে আসে ভরাহাতে।
কিছু ফুল, কিছু বাষ্পের আলো অনলাইনে জমা করে
একটি শিশু দাঁড়ায় প্রত্যাগত মানুষের কাতারে।
আমি অনাদি কালের একটি কম্বল গায়ে জড়িয়ে সেই
পথে অপেক্ষায় ছিলাম বিগত রাতের।

রাত চলে গেছে আমার পাশ দিয়েই। দেখিনি । চিনিনি
খুব পরিচিত সেই বাষ্পমাখা মুখ ।
আমার দুচোখেও তখন উড়ছিল বাষ্পসমাহার ।
কার ? আমি তাহলে অপেক্ষায় ছিলাম কার ?

যে প্রতিম প্লাবনে
———————–
আমাকে ওষুধি দিও, বনজ অহংকার আর মাতাল ভোরমালা
গলে নিয়ে যে সন্ন্যাসী বিহারে বেরোয়, তার হাতে হাত রাখা
নদীর মতো দিও স্রোত। আকুতির মধ্যরাত , হে পরম পৃথিবী
দিও জলজ জোসনা, যে প্রতিম প্লাবনে নক্ষত্রও ডানে ভেসে যায়।

আমাকে আঁধার দিও, প্রার্থনার অজস্র প্রহরে অনুক্ত চাঁদের ছটা
মিশিয়ে দিও প্রতিমার বুকে। চুম্বনের চতুর্দশী ঘোর গায়ে মেখে
আসন্ন পৌষ যেভাবে বসন্তের বাতায়ন বুনে ,অনেকটা তার মতোই
দিও সাহসের ডালপালা ,বৃক্ষের সবুজ নিরিখে দৃষ্টির নবম বিস্তার।

উক্ত যমজ ঘোর শেষ হলে , এই কোলাহলে হাত তুলে দিও ডাক
পৌঁছে দিও গৃহগন্তব্যে। কিছু কথা কিছু প্রেম এভাবেই অবশিষ্ট থাক..

বিনীত প্রেমিকের ধ্যানে
—————————–
আমাদের গবেষণার বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও বিনয় । নিঝুম বৃষ্টির রাত
কীভাবে ঘুম নামিয়ে আনে বিনীত প্রেমিকের ধ্যানে, তা নিয়েও তোমার
ছিল প্রত্যক্ষ আগ্রহ। জিজ্ঞাসার চাঁদ তোমার জানালায় নেমে এলে,একগুচ্ছ
মাধবীলতাও তার কাছে জানতে চাইতো এই বিশ্বালোকে আর কতদিন
স্থায়ী হবে প্রেমিকার কান্না ,আর কতদিন ঢেউয়েরা আঁকবে বিরহ তিলক ।

জানার অনেক কিছুই জমা থাকতো তোমার হাতের রুমালে। ‘ভুলোনা
আমায়’ অথবা ‘আমার পত্রের উত্তর দিতে করিও না ভুল ‘ – বাণীসমগ্র
তোমার আবির্ভাব জানান দিত ঘামসিক্ত ঘরে। দরোজার খিল, হেলে
পড়তো উত্তরে।দখিনা হাতের পরশ খুলে দিলে ভালোবাসার বন্দীজনম।

পথ অথবা শপথের দিগন্ত কাছে এলে মানুষ ফেরায় চোখ রিক্ততার দিকে,
কিছুই থাকে না জমা – সবকিছু মিশে যায় বায়ুস্তরে, নিঃশ্বাসের সবুজ
অন্তিমে। সেকথা তুমিও জানো মাঘভোরে শিশিরবিন্দুও,
সমুদ্রের করতলে জমে ।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


6 Responses to আমার কিছু বাছাই কবিতা -৩

You must be logged in to post a comment Login