Hasan Mehedi

ছোট গল্প………..

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সম্মোহিত নি:সঙ্গতা
হাসান মেহেদী

বৃষ্টির পর একটা কোমল বিকেলের ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে একটা অন্তরঙ্গ ছায়ার সামনে দাড়িয়েছি। সবাক ছায়ার ভেতর সপ্নময় সংবাদের মতো অন্ধকারে অন্ধকার ছুঁয়ে যাই। মেরুময় পৃথিবীতে আমিও আলাদা মানুষ। দেখতে চেয়েছি দৃশ্যের ভেতর সমূহ আকাঙ্খার পথ। জীবনের ভেতর অন্তবর্তী ভারচুয়াল জীবন, তার প্রকৃতি, তার প্রতিকনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মৃত্যু। হয়তো এখানেই আমার আসার কথা ছিল কোন একদিন। যেখানে আমার মুহুর্তে জন্মানো নতুন নৈতিকতা জীবনের পরম কিছুর ইশারা মেলে দিচ্ছে। আলাদা আলাদা করে যতবার আমি ভীষন একা হয়ে পরেছি, হয়তো এটা তার শেষ অধ্যায়। আমার নিয়তি। মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীতে কেউ কখনও ভুল করেনা, নিয়তি ভুল করতে দেয়না। কোন এক অঘ্রানের তীব্রতম একটি দিনে ভীষণ চিৎকার দিয়ে পৃথিবীকে জানিয়েছিলাম আমার অস্তিত্ত্ব। সে কথা মনে নেই। কারো মনে থাকেও না। শুরু হয় সময়ের সাথে সম্পর্কিত সকল উপাদান। কতোগুলো সম্পর্ক সূতা বাঁধতে থাকে, ধীরে ধীরে সূতোটি jলম্বা হয়, পাকাতে থাকে, মাঝে মাঝে গিট পড়ে, ছিড়ে যায়, আবার গিট পড়ে, ছিড়ে যায়। ছায়ার যা নিজস্ব আঙ্গিক, যে সবকিছুই নিজের ভেতর লুকায়।এভাবেই মহান সূতোটি কোনও এক নিয়তির দিকে এগিয়ে যায়। ধারনা প্রসূত তিনশো কোটি বছর পূর্বেই এই নিয়তি নির্ধারিত হয়েছিল। মাঝে মাঝে একটা আলসে সময় নামে- আমার আনন্দ, কেদনা, চিৎকার, ক্ষোভ যার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। হাজার কথা, কল্পনা, অনুভব দিয়েও আমি আর আমাকে ছুঁতে পারিনা, ছুঁতে পারিনা অন্যদের। কিন্তু একটা সময় ছিল আমি সকল স্পর্শগুলো বুঝতাম। এক একটি স্পর্শে আলাদা আলাদা ভাবে পুলকিত হতাম। আমাকে কেউ ছুঁলে আমি আনন্দিত হতাম, সুখী হতাম। কারো স্পর্শেও ভেতর নিজেকে গুঁজে দিয়ে কখনো অন্যমনস্ক হয়ে পড়তাম। খুব অল্প বয়সে একটা নির্বোধ, কুৎসিত শরীরের নিচে নি:সঙ্কোচে আমি খুলে দিয়েছিলাম আমার শরীর, ইন্দ্রিয়ের সকল পর্দাগুলো তুলে সন্তর্পণে। কতগুলো জ্যামিতিক বিন্যাসে আমার লোমকূপ জুড়ে নেমেছে আচ্ছন্নতা। তার কুৎসিত হাতগুলো আমার সমস্ত শরীর স্পর্শ করেছে। ঝামা ইটের মতো আরও ভয়াবহ বিশ্রি জিহ্বার অশ্লীল ব্যবহারে আমার ঠোট, মুখ, বুক রক্তাক্ত করেছে। গাছের গুঁড়ির মতো শরীরটা আমাকে পিশে থেতলে দিয়েছে। তবুও আমি সুখী হয়েছি। তার জন্য আমার কোন কল্পনা ছিল না। শুধু নিজেই নিজের নামানুবাদ করেছি আর পরিসর জুড়ে নেমেছে বিস্তারিত বিচ্ছিন্নতা। wØavwদ্বিধান্বিত, কল্পনা প্রবন খুব নড়বরে একটা ছেলে, আমার বন্ধু, একদিন নত মুখে আমাকে তার ভালবাসার কথা জানিয়েছিল। সেদিন তার অসহায় মুখ দেখে আমার খুব মায়া হয়েছিল। আমাকে ভালবেসে তার একান্ত সমর্পণ আমাকে সুখী করেছিল। একদিন আমার হাত তার দুটো হাতের মধ্যে রেখে আমাকে উত্তাপ দিয়েছিল, চুমু খেয়েছিল। আমিও একটা অজানা কারনে আমার হাত ধরতে দিয়েছিলাম। আমি সুখী হয়েছিলাম। একদিন আমাকে না বলেই অনেকটা অপ্রস্তুতভাবে আমার গালে চুমু খেয়েছিল। আমি আনন্দিত হয়েছিলাম, ভর্ৎসনা করেছিলাম, তারপর আর একটা চুমু খাবার জন্য মনটা কেমন কোমল করে উঠেছিল। সম্পর্কের এই সূতোটি দীর্ঘদিন মনের ভেতর লালন করেছিলাম, গিট দিয়েছিলাম তারপর একদিন গিট খুলে দিয়েছিলাম। ততোধিক নতমুখে সে ভীষণ দু:খ নিয়ে চলে গিয়েছে। তার জন্য দু:খ হয়। বুকের মধ্যে একটা নিরাময়হীন ব্যাধি তৈরি হয়। আমার সাথে আমার সূতোটিও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। বড় হওয়ার মতো কঠিন কাজটা আমাকেও করতে হচ্ছে। যতই বড় হচ্ছি ততই ভয়াবহ এক নীচতা মনের মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও নিয়মের এই অনিয়মগুলো আমার ভালো লাগে। জীবন সোনা হোক, ছাই হোক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলাম তার অস্তিত্বময়তা। তাকে খুব বিনয়ী, শালীন করবার তাগিদ অনুভব করিনা। এমনিভাবে এক মার্চের ব্যস্ততম দিনে হঠাৎ এক যুবক পথ আটকে সামনে দাঁড়ালো। তার স্নিগ্ধ চোখে আমাকে নিয়ে অন্তত কয়েক লক্ষ সপ্ন দেখতে পেলাম। মনে হলো ঐ একবার তাকিয়ে আমার ভেতরের সব কিছু দেখে নিল। নিজেকে অত নগ্ন আর লাগেনি কখনও। তার কাছে যেন কিছুই গোপন রাখা গেল না। বাসায় ফিরে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে নিজেকে দেখেছি। কিন্তু সে নগ্নতাকে ছুঁতে পারিনি। তার পরেও যেন তার ভেতর কি নেই। কিছুদিন পর অজান্তেই সূতোটি ছিড়ে গেল। হঠাৎ সে যুবকটি একদিন বিয়ে করে আমাকে ফোন, তার বউয়ের ছবি দেখাতে সে কি ব্যাকুলতা, কি উচ্ছাস! আর তার কিছুক্ষন পড়েই দুটো এম.এম,এস। বুঝলাম, এটাই প্রমাণ করাই তার উদ্দেশ্য যে তার স্ত্রীটি আমার চেয়ে অনেক সুন্দরী। আমিও তার সুন্দরী স্ত্রীকে দেখলাম, ভাল লাগলো, তারপর আর যুবকের কোন খরব পাওয়া গেল না। বছর খানেক আগে সেই বন্ধুটি আবার ফিরে এসেছিলো। ইতোমধ্যে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে, লেখার হাত ছিলো কিছুটা, আগে শুধু আমাকে লিখতো, এখন পত্র-পত্রিকায় লিখছে। উপহার হিসেবে তার দু’একটা নমুনা আমার কাছেও এসে পড়তো। আমি প্রশংসা করি এবং ¯স্বীকারxKvi করে নিয়েছি বলে অভিনয় করি। ও আমাকে এক একটা লাইন ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতো। আমার অসহ্য লাগতো। এক সময় টের পেলাম, আমার সমস্ত ¯স্বাধীনতাvaxbZv লুপ্ত হতে লাগলো। একমাত্র বাঁচার জন্য আমি সেই সূতোর বন্ধন ছিড়ে চলে এসেছি। হয়তো আমার প্রেমিক বন্ধুটি আমাকে ছিনাল ভাবে, ভর্ৎসনা করে, অভিশাপ দেয়। দিক, তাতে আমার কি। আমি কোন ভুল করিনি। আমি কোন ভুল করতে পারিনা। অন্যপুষ্ট জীবনের অসহায়ত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। এর দায় মেটাতে আমার বর্তমান প্রেমিকটিকে ছেড়ে আমাকে হয়তো চলে যেতে হবে নতুন কোন সূতো পাকাতে। আমার এই প্রেমিকটি গিয়ে সে সূতোটি কেটে দেবে এই বলে যে সে আমার প্রেমিক ছিলো। তাহলে আমি কি ক্লান্ত ? না আমি ক্লান্ত নই। আমার পেছনে কেউ নেই, আমার সামনে আমি কাউকে ভাবিনা, আমার পাশের কারো জন্য আমি পুলকিত হই না। খুব অল্পেই আমি ভুলে যেতে চাই আমার অস্তিত্ত্ব। যারা একদিন আমাকে স্পর্শ করেছে, আমার শরীরের, মনের সকল যায়গা গুলো আনন্দে ঘুড়ে বেড়িয়েছে আজ সে সকল যায়গা গুলো আমার ব্যাধি। সে সকল স্থান থেকে পঁচে ঘা হয়ে গলে গলে পুঁজ পড়ছে। একদিন যেখানে আনন্দ খুজেছিলাম ছায়ার ভেতর। আজ সেই ছায়া আমার কাছে অন্তিম বিচ্ছিন্নতা। যে সূতোগুলো এতকাল ধরে পাকিয়েছি, গিট দিয়েছি, কেটে ফেলেছি সে সূতোগুলো এখন ছায়ার ভেতর দড়ি হয়ে ঝুলছে। এই অন্ধকারের মধ্যে আমি হাটতে হাটতে বুকের ভেতরে নেব স্নিদ্ধ একটা নদী। আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করবো তার ফোটা ফোটা সুখ। এরপর আমার পেছনের ছায়াটা মিলিয়ে যাবে। আমার ভেতর সেই নদীর সমস্ত আদ্রতা শুকিয়ে যাবে। আমার বুক, ঘাড়, পাজর জুড়ে নি:সঙ্গতা নামবে, সম্মোহিত নি:সঙ্গতা। বন্ধুর মতো, যেন নিজেকে ভীষণ আপন করে পাওয়া।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


4 Responses to ছোট গল্প………..

You must be logged in to post a comment Login