তাহমিদুর রহমান

সায়েন্স ফিকশন: জিনিয়া

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

পূর্বকথাঃ

ত্রিশ শতাব্দীর দিকে পৃথিবীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছিল যে দিন দিন মানুষের বাসের অযোগ্য হতে থাকে পৃথিবী। সে সময়ে মানুষ ধারনা করেছিল মানুষ হয়ত মঙ্গল গ্রহতে বসতি স্থাপন করতে যাচ্ছে। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব হয়নি।ঠিক এ সময়েই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটা করে বসেন জীববিজ্ঞানী রোলেক্স রাইটন।তিনি প্রমাণ করেন যে মানুষের ফুসফুসে একটি অপারেশন করলেই মানুষের নিঃশ্বাস জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এমনকি যে স্থানে অক্সিজেন নেই সেখানেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে। মানুষেরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। তারপর সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহে মানুষ ছড়িয়ে পড়ে এবং তার কিছুদিন পরে বিচিত্র কোন এক কারনে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে পড়ে।

৪০০৯ সাল

ক্যাপ্টেন কিরানা লুক চিন্তিত মুখে স্ক্রিনের সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার অনুভূতি সবসময়ই প্রবল। তার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তিনি আঁচ করতে পারছেন। ঘুম থেকে উঠেই তিনি স্পেসশীপের সবকিছু পরীক্ষা করলেন। কিন্তু কোথাও কোন গন্ডগোল পেলেন না। তিনি যখন উদ্দিগ্ন হয়ে বসে আছেন তখনই কিছু ছোট শিশু সেখানে ঢুকে পড়ে। হৈ হল্লা করে বেড়াতে থাকে চারদিকে যদিও তাদের এখানে আসার কথা না। ক্যাপ্টেন কিরানা লুক বিরক্ত হলেও কিছু বলেন না। ভাবেন আজ পৃথিবী ধ্বংস না হলে এই শিশুগুলো সবুজ মাঠে খেলা করত।এই স্পেসশীপে কম করে হলেও আড়াইশ পরিবার আছে। তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কিছুক্ষন পর শিশুগুলোর মা এসে উপস্থিত হয় সেখানে।
-আমি অত্যন্ত দুঃখিত ক্যাপ্টেন। ভুল করে বাচ্চারা এখানে চলে এসেছে। ক্ষমা করবেন।
-হুম। ওদের জন্ম কি আপনি দিয়েছেন?
মহিলা অবাক হয়।
-না জনাব। ওরা ল্যাবটরিতে তৈরি। আপনি হয়ত জানেন না যে আইন করে মায়ের পেটে সন্তান জন্ম দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন ক্যাপ্টেন কিরানা লুক। বলেন,
-আমি জানি। আমি নিজেই তো ভোট দিয়েছিলাম ব্যাপারটায়।
-হুম।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শিশুগুলোকে নিয়ে মহিলাটি চলে যায়। গন্তব্য স্থানে যেতে অনেক দেরি তাই ক্যাপ্টেন লুকও নিজের কক্ষে ফিরে যান। আরেকবার ঘুমের ব্যবস্থা করতে থাকেন।
ক্যাপ্টেন লুক ঘুমাবার ঠিক আধ ঘন্টা পর জোরে জোরে সাইরেন বাজতে থাকে এবং কিছুক্ষন পর জুরিপান গ্রহে স্পেসশীপটি বিধ্বস্ত হয়। আড়াইশ পরিবারের সবাই মারা পড়ে এই দূর্ঘটনায়। বিস্ময়করভাবে বেঁচে যায় শুধু বাচ্চাগুলো।

বর্তমান (আরো একশ শতাব্দী পর)

জুরিপান গ্রহে এরকম ঘটনা আগে ঘটে নাই।একটা স্পেসশিপ কিছুক্ষন আগে এখানে বিধ্বস্ত হয়েছে।কিছু বিচিত্র প্রানী ছিল ঐ স্পেসশিপে। পাঁচ থেকে ছয় ফুট লম্বা হবে। তারা আবার দুই ধরনের আছে। একধরনের চুল লম্বা, আরেকধরনের চুল ছোট।তাদের শারীরিক গঠনও ভিন্ন। জুরিপান গ্রহের বিজ্ঞান আকাদেমীর মহাপরিচালক ইউকানো নিরিদা ব্যাপারটি খুব গুরুত্বের সাথে নিলেন।সাধারন জিনিয়ারা যেন জায়গাটির ধারে কাছে না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করলেন।

ইউকানো নিরিদা তার অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। কি সুন্দর গোলাপী সূর্য উঠেছে। এরকম একটা দিনে কাজ করতে তার মন চাই না। তবু করতে হয়। তার অনেক দায়িত্ব। এই গ্রহের সবকিছু তার কথাতেই চলে। তবে আজ উনি খুব চিন্তিত। স্পেসশিপে আসা প্রাণীগুলো সত্যি তাকে অবাক করেছে। অনেকটা জিনিয়াদের মত হলেও যেন জিনিয়া নয়। তিনি ঘড়ির দিকে তাকান। সন্ধ্যা ছয়টা বেজে পঞ্চান্ন। সাতটায় মিটিং ডেকেছেন তিনি। আর দাঁড়িয়ে না থেকে হল ঘরের দিকে রওনা হলেন।

ইউকানো নিরিদা হলঘরে ঢুকতেই সব গুঞ্জন থেমে যায়। গমগমে কণ্ঠে তিনি কথা বলতে শুরু করেন।
-আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে কেন আজ আপনাদের এখানে ডেকেছি।
তিনি সবার দিকে তাকালেন। সবাই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। তখন তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
-আমাদের বিজ্ঞান আজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এইজন্যে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। গতবছর বিজ্ঞানী দিয়ানো নিপিনা আমাদের গ্রহের বাইরে প্রাণীদের কথা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু তখনও আমরা জানতাম না যে সে প্রানীগুলো কিরকম। আজ সে সুযোগ এসেছে। আমি মনে করি আমরা জিনিয়া হিসেবে তাদের চেয়ে উত্তম। আমরা চাইনা তাদের কোন ক্ষতি হোক। আপাতত তারা আমাদের কাছে বন্দি রয়েছে কারন আমরা তাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। তাই আমি সবাইকে বলব তাদের যেন কোন ক্ষতি না হয়। তাদের ক্ষতি না করে আমাদের জানতে হবে তাদের পরিচয়, কোথা থেকে এসেছে।

বিজ্ঞানী সিসিলা জিমানি টেবিলে চাপড় মেরে হেসে উঠলেন।
-চমৎকার। অতি হাস্যকর কথা বললেন মহামান্য নিরিদা। আমি না হেসে পারলাম না।
উপবিষ্ট অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অবাক হলেন না। বিজ্ঞানী সিসিলা জিমানি এরকমই।কাউকে সম্মান করে কথা বলেন না। কিন্তু তিনি অনেক প্রতিভার অধিকারী বলে আজও কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেনি। হয়ত সেটা সবার কথা চিন্তা করেই।

বিজ্ঞানী ইউকানো নিরিদা তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। শুধু বললেন,
-কেন এ কথা বলছেন মহামান্য জিমানি।
-আপনি বলছেন যে তাদের কোন ক্ষতি না করে…কিভাবে? আমার তো মনে হয় সেই প্রাণীগুলোকে ল্যাবটরিতে এনে কেটেকুটে দেখা উচিত। তাহলেই আমরা সবকিছু জানতে পারব।
ইউকানো নিরিদা মর্মাহত হোন। বললেন,
-আমি আপনার সাথে একমত নয় মহামান্য জিমানি। তাছাড়া প্রাণীগুলোকে আমার হিংস্র মনে হয়নি।
-আপনার মনে হওয়া না হওয়ায় কিছু যায় আসে না।
-কি বলতে চান?
-আপনি হচ্ছেন একটা মহামূর্খ। আর আপনার আশে পাশে যারা আছে তারাও মূর্খ।
ইউকানো নিরিদা চূড়ান্ত পরিমানে রেগে গেলেন।
-আপনাকে এখনি বিজ্ঞান পরিষদ থেকে সারাজীবনের জন্যে বহিষ্কার করা হল।
-আমি আপনার বিজ্ঞান পরিষদের নিকুচি করি।
বিজ্ঞানী সিসালি জিমানি বের হয়ে যান হল রুম থেকে। তার পেছন পেছন আরো সাত আটজন বিজ্ঞানী হল রুম থেকে বের হয়ে যায়।

পরিশিষ্ট

৪০০৯ সালে যে স্পেসশীপটি জুরিপান গ্রহে বিধ্বস্ত হয় সেই স্পেসশীপে বেঁচে যাওয়া বাচ্চাগুলোর বংশধর হচ্ছে আজকের জিনিয়া। রোলেক্স রাইটনের আবিষ্কার অনুযায়ী ঐ বাচ্চাগুলোর ফুসফুসেও অপারেশন করা হয়েছিল। কিন্তু জুরিপান গ্রহে ছিল কক্সনাইড যা কিনা বিষাক্ত গ্যাস। ফলে তাদের নানা রকম বিকৃতি দেখা দেয়। শরীরের রং হয়ে যায় লাল, রক্তের রং হয় গাঢ় বাদামী। জিনিয়ারা দুই থেকে তিন ফুটের বেশি লম্বা হয় না।
তারও একশ শতাব্দী বসত দূর্ভাগ্যবশত আবার একটি মানুষের স্পেসশিপ বিধ্বস্ত হয় জুরিপান গ্রহে। মানুষগুলোকে বাঁচা না বাঁচানোর পক্ষে বিপক্ষে দুই গ্রুপ গড়ে উঠে জিনিয়াদের মধ্যে। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় জুরিপান গ্রহে। বিজ্ঞানী ইউকানো নিরিদার কল্যাণে মানুষগুলো মুক্তি পায় এবং পালাতে সমর্থ হয়।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


6 Responses to সায়েন্স ফিকশন: জিনিয়া

You must be logged in to post a comment Login