ইদানিং আঙ্কেল ডাক বার বার শুনতে হয়

আমি (১৯৮২)- আমি একটু বড়সড় হয়ে জন্মেছিলাম :)

 আজিজুল

ভাইয়া

ভাইয়া
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আমি যখন ক্যাম্পাসে প্রথম ক্লাস করতে যাই, তখন আমার আশেপাশের সবাই ছিলো আমার চেয়ে বয়সে বড়, আমি তাদের ভাইয়া ডাকতাম। চার বছরের ক্যাম্পাস জীবন অন্যদের চেয়ে আমার বেশ দ্রুতই কেটেছে। অন্যেরা যখন ড্রপ কোসে’র হিসাব করতো, তখন আমি বড় ভাইদের সাথে ক্লাস করে কিভাবে আগে ভাগে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হওয়া যায় তার পায়তারা করা শুরু করলাম। বড় ভাইদের সাথে ক্লাস করবার সময় একই ক্লাসমেট হয়ও প্রতি কথার সাথে  ‘আপনি’ শব্দটি লাগিয়ে রাখতে হতো। কালের পরিক্রমায় যখন অনাস’ শেষ বষে’ -তখন আশ্চয’ হয়ে লক্ষ্য করলাম আমাকে এখন সবাই  ‘ভাই ভাই ‘ বলে ডাকে, বুঝলাম বয়স বেড়েছে।

আমার রুমমেট প্রায়ই বলে -এই টান টান চামড়া, এমন ভরা যৌবন এককালে আর থাকবেনা। আমি বিচলিত হই না; বন্ধুটি হয়। বন্ধু আমার প্রায়শই ষ্ট্রবেরী খায়- চামড়া টান টান রাখবার কি প্রানান্ত চেষ্টা! অথচ আমি খাই না।

আমি কলা খাই। এক বিশেষ প্রজাতির জন্তুর সাথে এখানকার বাংলাদেশীর বন্ধুরা আমার মিল খুজে। দেশে বাবুলের দোকানে সাত সকালে রুটি-কলা খাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারি নাই। এখানের সবাই খোলস ধরে সাহেব বাবু বিবিয়ানা হয়েছে, দেশের জন্যে আহা উহু করে দিনের শেষে মামি ড্যাডি খিলাচ্ছে নিজের বাচ্চাদের। তাদের দেখে আমার একটুও শিক্ষা হয়নি। আমি তাও কলা খাই। দেশের দুই টাকা কলার দাম এখানে ৬৭ টাকা-তবুও খাই। তিন দিনে ১৮ টা কলা খাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তাই হয়তো বন্ধুরা বান্দর ডাকে আড়ালে আবডালে।

আমার মাও এমন ডাকতেন। কথিত আছে আমি জন্মাবার পরে হাটার পরিবতে’ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলতে শিখেছিলাম। এক জানালা থেকে অন্য জানালা- এভাবেই চলতাম সবসময়। আমি জন্মাবার সময় একটু বড় সড় হয়ে জন্মেছিলাম। তাই মা আমাকে বাদর না ডেকে সিম্পাঞ্জি ডাকতেন। ইদানিং ডাকেন না। কে জানে গায়ের সাথে পি এইচ ডি ডিগ্রি লেপ্টে আছে বলেই হয়তো তিনিও আজ ফমা’ল হয়ে গেছেন। তাছাড়া শিম্পাঞ্জিরা মনে হয় পিএইচডি করে না।

আমি (১৯৮২)- আমি একটু বড়সড় হয়ে জন্মেছিলাম :)

সে যাহোক। প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

পরিবারে আমি ছিলাম সবার ছোট। আমরা ৪ভাই বোন। তাই কখনোই ‘ভাইয়া’ ও ‘আপনি ‘ ডাক শুনে অভ্যষ্ত ছিলাম না। অনাস’ফাইনাল পরীক্ষা শেষে আমি তখন বড় ভাইদের সাথে পাল্লা দিয়ে হাতে হারিকেন দিয়ে চাকুরি খুজছিলাম। কিভাবে জানি পেয়েও গেলাম বেসরকারী বিশবিদ্যালয়ে লেকচারারের চাকরি। সিলেট শহরে এই বা কম কিসের! সেসময় শাবিপ্রবিতে মাষ্টাসে’ ভতি হয়ে গেলাম। সকালে ছাত্র আর দুপুর থেকে বিকাল পয’ন্ত মাষ্টার- আমি দ্বৈত সত্তার অধিকারী হয়ে উঠলুম। সকালে যেসব কচি কচি ছাওয়ালগুলি ভাইয়া ডাকে আর একসাথে চা-কলা খায় দুপুরে প্রাইভেট ভাসিটিতে একই বয়সের ছেলে মেয়ে গুলি আমাকে স্যার ডাকে। নতুন নতুন স্যার ডাকা শুনলে সবার খুশি লাগলেও আমার তা লাগেনাই।তার কারন ছোটবেলা থেকে প্রফেসর বাবাকে দেখেছি কি দারোয়ান কি মিনিষ্টার, সবাই ‘স্যার স্যার’ ডাকে। তাছাড়া আমি প্রাইভেট টিউশনি পড়াবার সময় থেকেই স্যার ডাক শুনে শুনে হয়রান। তখন অবশ্যি বিপত্তিতে পড়েনি। একদিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।

ভাসিটি লাইফের শেষ প্রান্তে এক শ্যামবনে’র রমনীর সাথে কিছুকাল ঘুরবার সুযোগ হয়েছিল। মেয়েটি আমার জুনিয়র-বলা বাহুল্য একই ভাসিটির রমনী। একবার সে গো ধরলো সিলেট শহরের উন্দাল রেষ্টুরেন্টে খাবে। নারীদের জেদ ভয়ঙ্কর জেদ-টের পেলাম। আড়ং-শৈলি-শি আর বেশ কিছু কপো’রেট দোকান থেকে এক মাসের বেতন পুরোটাই শেষ করে সবে ঢুকেছি উন্দালে। অডা’র দিলাম কড়াইভাজি। আমার বেশ কিছু ছাত্রী ওই সময় এসে হাজির। তারাও খেতে চায়-কী যন্ত্রনা। এর মাঝে দাত কিলিয়ে তারা হাসি মেরে আমার শ্যামবন বান্ধবীটিকে ‘ম্যাডাম ম্যাডাম’ বলা শুরু করলো। ভদ্রমহিলা গেল খেপে। ডাকবি তো ডাক, ‘ম্যাডাম’ কেন? সেদিন বেশ মনে আছে গলা দিয়ে উন্দাল এর রুপচান্দা কড়াই ভাজি ঢুকেনি। দুইদিন ভদ্রমহিলাটি আমার সাথে দেখা করেনি। আমি ১ সপ্তাহের ছুটি নিলাম- উদ্দেশ্য রাগ ভাঙ্গানো।

ভাইয়া ও স্যার বিষয়ক দ্বন্দ বেশ পুরাতন। আমি তখন ভাসি’টির মধ্যগগনে। আমাদের পরিচিত এক বড় ভাই ভাসিটির টিচার হলেন। রাতারাতি উনার পোষাকের ধরন গেল পাল্টে। মেসে নতুন ফোম ও রেজার আনা হলো। উনার রুম সাজিয়ে বেশ পড়িপাটি করা হলো, মোটা মোটা বই আনা হলো-যা তিনি নিজ জীবনে পড়েননি বলেই জানি। কিছুদিনার মাঝে উনি উপলব্ধি করলেন -ছাত্রদের মাঝে থাকা চলবেনা। উনি এক মাসের নোটিশেই মেস ত্যাগ করে অবিবাহিত স্যারদের সাথে মেস ভাড়া করে থাকা শুরু করলেন। আমাদের আশে পাশের ছেলেরা দেখা হলেই উনাকে ‘ভাই’ বলে ডাকতো।কিন্তু আমি এক্ষেত্রে সচেতনভাবেই স্যার ডাকা শুরু করলাম।

আমার স্যার ডাকার ব্যাপারে অবশ্যি কিছু কথা না বললেই নয়। সেদিন আমার অফিসে কলিগ ও সুপারভাইজারের মাঝে আছি বসে।সিলেট থেকে সেই স্যারের ফোন এলো।আমার অতিভক্তি সব’জনবিধৃত। আমি কোনমতে সিট থেকে দাড়িয়ে বাম হাতে সালাম দিলাম।বেশ দরদ দিয়েই সালাম দিলাম-উনি সুদূর সিলেটেও বোধ হয় টের পেলেন। কিন্তু ফোন রাখবার পর খেয়াল করলাম আশেপাশের লোকজন কেমনভাবে জানি আমার দিকে তাকাচ্ছে।যেন আমি মিরপুর চিড়িয়াখানায় নতুন আনা প্রজাতির কোন প্রানী।

কম বয়সে মাষ্টার হবার বিপদ আছে বৈকি। প্রাইভেট টিউশনি পড়াবার সময়কার ঘটনা। আমার এক ছাত্রী ক্লাস সেভেন এ থাকতেই এলাকার এক রোমিও ছোকড়ার সাথে গেল ভেগে। সন্দেহের মাঝে আমি বাদ যাই কেন? ছাত্রীর বাবা মা আমাকে জেরা শুরু করলেন। বললাম,”মেয়ে আপনাদের। আমি কিভাবে জানবো?”

উনারা গোয়াড়, বলল মেয়ে ফেরত দিতে হবে। কি আশ্চয’-আমি কি মেয়ে বানানোর কারিগর নাকি ?

সে গপ্প আরেকদিনের জন্যে তোলা রইলো।

আসলে লিখতে বসেছিলাম ভাইয়া বিষয়টি নিয়ে।

আমার মেজো ভাই সম্প্রতি বাংলা ব্লগে আবাস গেড়েছেন।আমি গত দুই বছর ধরে চেচাচ্ছি  একাউন্ট খোলার জন্যে। দুই বছরের পরিশ্রাম সাথ’ক। তার আগমনেই এ লেখা উৎসগী’কৃত। বলে রাখা ভালো, গত এক বছর হলো তাকে বিয়ে করানোর জন্যে উঠেপড়ে লেগেছি। আশা করা চলে এতেও তিনি দুই বছর সময় নিবেন। নইলে বিয়ে করবার পরে বউয়ের বান্ধবীদের কাছে হয়তো ‘আঙ্কেল’ ডাকই শুনতে হবে।

ইদানিং আঙ্কেল ডাক বার বার শুনতে হয়

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


11 Responses to ভাইয়া

You must be logged in to post a comment Login