শামীম মিয়া

ভূতের গল্প: ভূত দাদু আর দাদী

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

ghost-forest-dhakaonairগ্রাম আমদির পাড়া। চারদিক সবুজে ঘেরা, আমাদের পাড়া। মাঠে মাঠে রাখালের বাঁশি বাজানো সুর, চলে যায় গ্রাম পেড়িয়ে বহুদুর। গাছে, গাছে, হরেক রকম ফুল, ফল,পাখির ডাক। রাতে জোনাকী পোকার মিটমিট আলো,আহা খুব সুন্দর লাগে দেখতে ভালো। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে আছে একটা বটগাছ। বটগাছটার বয়স প্রায় একশত বছর হবে। এই বটগাছটার চারদিক দিয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ। বটগাছের দক্ষিনে যমুনা নদী এবং পশ্চিমে বাঙ্গালী নদী। বটগাছের আশে পাশে বেশ কয়টা দোকান আছে। দক্ষিনে জুমারবাড়ী বাজার,উত্তরে সাঘাটা থানা, কয়েক কিলো দুরে গাইবান্ধা জেলা। বটগাছের নিচে বসে অনেক শ্রমজীবি লোকজন বিশ্রাম নেয়। বটগাছটা থাকার কারনে ভ্যান চালক ভাইয়েরা ও গ্রামের লোকেরা এর নাম দিয়েছে বটতলী। বটতলী নামেই এই জায়গাটা বর্তমান পরিচিত। এই বটগাছের ইতিহাস বলা বাহুল্য। আমাদের গ্রামে একটা ফকির ছিলো। সে অভাবের কারনে ক্ষুধা মেটানোর জন্য ভিক্ষা করতো। সারাদিন ঘুরে ফিরে এক দেড় কেজি চাল পেতো তা দিয়ে বাচাতো জীবন সাত বছরের মেয়ে বিন্দু আর ফকির। বাবা মেয়ের জীবন ভালোই কাটছিলো বা যাছিলো। বিন্দু দেখতে ছিলো পরীর মতো সুন্দর। বাবা সারাদিন ঘুরে চাল পেতো তা থেকে এক দুই মুঠ করে চাল জমাতো। বিন্দুই রান্না বান্না করতো এবং বাবা মেয়ে খেতো। বিন্দু সকালে যেতো পাড়ার ছেলে মেয়েদের সাথে মোক্তবে। মোক্তব থেকে ফিরে ঝাড়– আর বস্তা নিয়ে যেতো বটতলী পাতা কুরাতে। সে পাতা গুলো দিয়ে ভাত তরকারী রান্না করতো বিন্দু। কয়দিন পর বাবা অসুস্থ হয়ে যায়। আর ভিক্ষা করতে পারেনা বাবা। বিন্দুর জমানো চাল গুলোও শেষের দিকে। ঘরে টাকা নাই যে ডাক্তার আনবে। বিন্দু চিন্তায় পরে যায়। বাবার দিকে তাকানো য়ায়না। চোখে যেন শুধু মায়বীর পানি। বাবা বিন্দুকে শান্তনা দেওয়ার জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, মা বিন্দু তোর জমানো চাল গুলো কী শেষ ? বিন্দু বাবার দিকে তাকিয়ে বললো বাবা আরো কয়দিন যাবে। বাবা বললো তাই বল। নইলে গ্রামে যেতে হবে। বিন্দু বললো এই শরীর নিয়ে কি ভাবে যাবে, তাছাড়া আমার জমানো চাল আরো কয়দিন যাবে। বাবা তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। বাবা বললো মারে আজ মোক্তবে যাসনী ? বিন্দু বললো না বাবা তোমার শরীর ভালো না। কী ভাবে যাবো। কথা বলতেই ঘরে আসে গ্রামের মড়ল। বিন্দু তাকে বসতে দেয়। কিন্তু বসলো না মড়ল। না বসেই বললো ফকির বেটা আমার কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলেন তা দিবেন না। কখন দিবেন ? আমার সামানে অনেক টাকার দরকার। বিন্দু দরজায় দাড়িয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে আর শুনছে মড়লের কথা। ফকির, কাশচ্ছে আর বলছে, বাবারে দিবো আর কয়দিন দেরী করো। মড়ল মাথাটা ঘুরিয়ে একবার দেখলো বিন্দুর দিকে। এবং বললো ফকির বেটা আপনার মেয়ে টাকে আমাকে দিবেন, সে আমার বাড়িতে থাকবে। আমার তো কোন সন্তান নাই। বিন্দুও শুনছে দরজায় দাড়িয়ে। ফকির বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বললো মড়লকে বাবা বিন্দুর জন্যই আমি বেচে আছি। বিন্দু যদি আমার কাছে না থাকে তাহলে আমি মারা যাবো। আর বাচবোই বা কতোদিন মা মরা মেয়েটাকে বুকে নিয়েই বাচতে চাই এই কয়টা দিন। তবুও ভাবী আমি তোমাকে পরে জানাবো। মড়ল বললো ঠিক আছে তবে ফকির বেটা আমার টাকাটার ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করিও, নইলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো । আর যেন আমাকে না আসা লাগে। ফকির অবুঝ শিশুর মতো মাথা নাড়িয়ে বললো, ঠিক আছে বাবা। মড়ল চলে গেলো। ওমনী বিন্দু দৌড়ে এসে বাবার গলা ধরে বললো, বাবা আমি তোমার কাছে থাকবো। আমাকে অন্য কোথাও যেতে বলো না। দেখো বাবা তুমি আজ কালের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। ফকির বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ঠিক আছে মা।
সন্ধ্যা লেগে গেছে বিন্দু বাহিরে থেকে ঘরে গিয়ে বাবাকে বললো আকাশটা ভালো না মেঘে ভরা যখন তখন বৃষ্টি আসতে পারে। ঘরের অবস্থাও ভালো না। একটু ঝড় এলেই পানি পরে টুপটুপ করে। তাই থালা বাসন জাগায় জাগায় দিচ্ছে, মেয়ে বাবা মিলে । হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি আসে। জৈষ্ঠ্য মাস গাছে গাছে আম পেকে আছে। বিন্দু ভাবলো ঝড় একটু থামলে আম কুরাতে যাবে। সেই আম বাজারে বিক্রি করবে। এবং বাবার জন্য ঔষধ আনবে। একটু ঝড় থামলে ছুটে যায় মড়লের বাড়িতে আম কুরাতে বিন্দু। বাবা অসুস্থ শরীর নিয়ে ডাকলেও শুনতে পায়না বিন্দু। এই সাত বছরের শিশু অন্ধকারের মধ্যেই এলো মড়লের বাড়ী। জোসনার রাত তবে মেঘে ঢাকা মাঝে মাঝে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,সেই আলোতে সামানের দিকে যাচ্ছে বিন্দু। মড়লের আঙ্গিনায় ছিলো বেশ কয়টা আম গাছ। তার মধ্যে একটা ছিলো বেশ বড় আর বয়স্ক আম গাছ। কোন এক সময় নাকী এই আম গাছে ভুত ছিলো। প্রায় সবাই জানে কারো ক্ষতি করিনী ভুত দুটি। বিন্দু তাই ভয়ে ঐগাছ তলে যাচ্ছেনা । ভুত দুটারও বয়স হয়েছে। বিন্দুর সামানে এতো আম তবে কোথায় রাখবে ভাবছে বিন্দু। ছোট্ট একটা ব্যাগ মাত্র। ভাবতেই ওর সামানে আসে ভুত দুটি। তবে এই বাড়ি দাদু আর দাদী সেজে। ভুত দুটি এগোিচ্ছে আর বলচ্ছে কেরে এখানে কে আম কুরায়। বিন্দু কাপা গলায় বললো, দাদু আমি গো, আমি বিন্দু দাদু। আবারও দাদী বললো কেরে এখানে আম কুরায় । বিন্দু বললো আমি গো দাদী আমি বিন্দু। বিন্দুর কাছে আসলো ভূত দাদু আর দাদী। এসে বললো আম দিয়ে কি করবী। বিন্দু বললো দাদু আর দাদী তোমরা দুইজনই শোনো আমার বাবা অসুস্থ, এই আম গুলো বাজারে বিত্রিু করে ঔষধ আনবো। আর বাবার কাছ থেকে মড়ল টাকা পাবে তা শোধ করবো। ভূত দাদু বললো মাত্র এই কয়টা আম দিয়ে এতো কিছু হবে কী করে। বিন্দু বললো হবে গো হবে। এই আম গুলো তো এখন কাঁচা পাকালে এর দাম হবে দ্বিগুন। দাদু তুমি কী আমাকে সাহায়্য করবে। দাদু বললো আমরা মানুষ না আমরা দুজনই ভূত। বিন্দু বললো ধূত তোমরা দাদু আর দাদী ভূত হবে কেন ? দাদু আর দাদী বললো, তুমি ভূতকে ভয় পাওনা। বিন্দু বললো পাই তবে আমার বাবা আমাকে বলেছে ভূতের কোন ক্ষতি না করলে ভূত মানুষের ক্ষতি করেনা। ভূত দেখতে তো বিশ্রী তোমরা তো মানুষ। এই কথা বলতেই বিশ্রী চেহারা হয় ভুত দুটির। বিন্দু ভয়ে দৌড় দিতে চাইলে দৌড় দিতে দেয়না ভুত দাদু আর দাদী। দাদু দাদী বললো মিষ্টি সুরে। আমরা তো তোমাকে যেতে দিবো না। বিন্দু বললো আমি যদি এখন না যাই বাবা চিন্তা করবে। ভূত দাদু বললো তুই তোর বাবাকে খুব ভালোবাসিস তাইনা। বিন্দু বললো হ্যা আমি বাবা কে খুব ভালোবাসি। ভূত দাদু বললো তোর আমের ব্যাগটা আমাদের দে। তোদের কে অনেক বড় লোক করে দিবো। তোর বাবা ভালো হবে আর ভিক্ষা করা লাগবেনা,তোর বাবাকে। তোকে পাতা আর কুরানো লাগবেনা। তুই রোজ স্কুলে যেতে পারবি। বিন্দু হেসেই বললো সত্যি বলছো দাদী। ভূত দাদু বললো হ্যারে হ্যা। তুই ব্যাগটা দিয়ে দেখ। বিন্দু ব্যাগটা দিয়ে দিলো। ভূত দাদু বললো এবার বাড়ি যা দেখ তোদের বাড়ী কতো সুন্দর হয়েছে। বিন্দু দৌড়ে আসে বাড়ীর দিকে। এসে দেখলো সত্যি তো ওদের বাড়ী ঘর পাকা হয়ে গেছে। বিন্দু খুশি হয়ে ঘরে গেলো এসে দেখলো বাবা খাটে ঘুমাচ্ছে। বিন্দু বাবাকে ডাক দিলো এবং বললো বাবা দেখো আমাদের কত সুন্দর বাড়ী। বাবা চমকে উঠে বললো, কিভাবে হলো এসব। বিন্দু বাবাকে সব খুলে বললো। বিন্দু আরো বললো বাবা আমাকে মড়লের বাড়ীতে যেতে বলবেনা তো। বাবা বললো না কাল থেকে তুই স্কুলে যাবি। বিন্দুদের আর কোন অভাব থাকলো না। ভূত দাদু আর দাদী সব সময় সাহায্য করে বিন্দুদের। মড়লের টাকাও দিয়ে দেয়। বিন্দু এখন মোক্তব শেষ করে স্কুলে যায় রোজ। আর বটতলী পাতা কুরাতে য়ায় না বিন্দু। ওদের অভাব আর রইলো না।
সমাপ্ত

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


One Response to ভূতের গল্প: ভূত দাদু আর দাদী

You must be logged in to post a comment Login