আহমেদ মাহির

মাঝরাত্তিরের অনুকাব্য :: ৬

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

১।।

পতিত আত্মার হৃদয়ে কর্ণপাত করিনি বহুকাল –
কত ধুকপুক আর্তনাদ আমায় ফাঁকি দিয়ে পালাল’ ;
হিসেবের অগোচরেই প্রেমের নগ্ন দেহে কত আঘাতের পদচিহ্ন
হায় ! এরও হিসেব বুঝি আমাকেই কষতে হল …

২।।

তোমার কবরের গর্ভমূল চিড়ে
এক টুকরো বাঁশ দেবে আমায় ?
সে বাঁশকে বাঁশিতে রূপ দেব –
বাঁশি হাতে হব বাঁশুরিয়া !
হাজার নক্ষত্রবীথির সুর শোনাবো তোমায় ,
হাজার ক্রোশ পথ হেঁটে যেতে ;

তোমার কবরের গর্ভমূল চিড়ে
এক টুকরো বাঁশ দেবে আমায় ?

৩।।

হৃদয়, তোমায় তো জেনেছিলাম মাতলামির মাতাল হাওয়ায় –
আজ হৃদয়ের সরবরে ক্লান্ত নীরবতা স্তব্ধতার তরি বায় !
সেই মাতালামো আজ কোথায় – কে জানে , হায় !
ক্লান্ত হৃদয়-সরবরে রাত্রি আসে বড় অবেলায় ।

৪।।

মন আমার ব্যাকুল করে কেমন ;
প্রিয় নক্ষত্রেরা ওই কৃষ্ণ আকাশপট থেকে
সহসাই মরে যায় – মুছে যায় যখন !

৫।।

স্মৃতিময়তার পুনঃ পুনঃ দোলাচলে দেখি তোমারই চলে যাওয়া
আর বর্তমান – বিকিয়ে স্বত্তা , ছিনিয়ে নিতে সিংহাসন আর সম্মান !

৬।।

এক মহাকাল তোমার পথ চেয়ে রইতে পারি –
পারি তোমার দেওয়া কষ্টমালা হাসিমুখে সইতে ;
শুধু পারি না তোমায় ভুলে যাবার কথা –
এ মনেতে ক্ষণিকের তরে বইতে !

৭।।

খোঁজ রেখেছ’ কি সে ব্যথার ?
অশ্রুক্ষরন অবিরত সঙ্গোপন !
দেখেছ’ কি আমার অন্তরাল ?
প্রতীক্ষায় বুনেছি সাতকাহন !

৮।।

অবশেষে একদিন সে এলো ,
কালো নেকাবে ঢেকে মুখ আর
চোখের তারায় বরফ শীতল উষ্ণতা নিয়ে !

কতদিন বসে ছিলাম তোমার প্রতীক্ষায় ;
তুমি আসবে , আমায় তোমার সঙ্গে নেবে –
হিমশীতল আঁধারের দেশে !

৯।।

দেখনি তবু আমার অন্তরাল ,
হেঁটে চলেছি এক মহাকাল
এক শাশ্বত বিবর্ণতার খোঁজে ;
যেথায় মন্দ্রসপ্তকে বিষন্নতার সুর বাজে !

১০।।

চিলেকোঠার ছোট্ট ঘর আর স্বপ্নভ্রান্ত এক পথিক
দখিনের বুজে আসা জানালায় আলো নেই , নেই শালিকের আলাপন ;
সেখানে বস্তির নোংড়া দুর্গন্ধ আর শব্দের অশালিনতা
প্রতি ভোরে ঘুম ভাঙ্গায় সে পথিকের ।
ভ্রান্ত স্বপ্নের রাজপথ থেকে এঁটো ঘামের উৎকট স্পর্শ নাকে
আর দেহে একরাশ আজন্ম ক্লান্তিময়তা ;
এ বড় অদ্ভুত চিলেকোঠার নৈমত্তিকতা !

১১।।

হারতে হারতে হেরে যেতে বসেছি ;
বড় বিস্বাদ লাগে এ হেরে যাওয়া !
ইদানিং নিকোটিনের ধোয়াও যখন তখন
বিস্বাদ লাগে স্মৃতিরই মতন ;
তবু ছাড়িনি আজও পথ চাওয়া !

১২।।

ওভাবে কেন ভাবতে শিখিনি , যেভাবে ওরা ভাবে ?
ওভাবে কেন কাঁদতে পারিনি , যেভাবে ওরা কাঁদে
হাজার’ মানুষের ভীরে ? কেন তোমাতে কখনো
নির্জনতা খুঁজিনি ? আপন হৃদয়ের ছন্দ মিশিয়ে
তোমায় নিয়ে আমার মনালয় গড়েছিলাম ;
কেন , আজও জানি না – কোন পরম নির্ভরতার সুরে !

১৩।।

সকল চিঠি দিঠি খুঁজে পেলেও ,
আমার চিঠি পায়নি আজও
তোমার হৃদয়ের আঙ্গিনা খুঁজে ;
সকল উত্তর অজানা জেনেও
অনুকাব্য এঁকেছি আবারও
হাজার তারার আঙ্গিনা মাঝে !

১৪।।

সুখপাখি , যেখানেই থাকিস , যেমনই থাকিস – বেঁচে থাকিস ;
বেঁচে থাকিস তোর সেই প্রাণের উচ্ছলতায় মাতানো
রঙ্গিন দিনগুলোর মতই ; অনুভুতির অনুভবে তুই বেঁচে থাকিস ;
বেঁচে থাকিস চালতা ফুলের সেই সুবাসের মতন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি
আর রাতের অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে থাকা কান্নাদের মাঝে তোর প্রাণের হাসিতে ;
বেঁচে থাকিস জঞ্জালময় এই সরণি মাঝে তোর প্রাণের উচ্ছাসে !

© আহমেদ মাহির
২২/০৯/১০

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


11 Responses to মাঝরাত্তিরের অনুকাব্য :: ৬

You must be logged in to post a comment Login