রিপন কুমার দে

শাশ্বতিকীর আশীর্বাদ

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

আজ হঠাৎ করে ইচ্ছা হল ‘কঠিন’ একটা পোস্ট দিতে। কিন্তু কি দেই, কি দেই, করে শেষ পর্যন্ত জটিল(?) একটা কোবতে প্রসব করলাম। ‘ভয়াবহ’ জটিল!! এটা পড়ে যদি কারো ‘মাথা ঘুরতে’ থাকে অথবা শরীর ‘হালুডুলু’ করতে থাকে তাতে মামদো ভূত কোনভাবেই দায়ী থাকবে না, আগেই বলে দিচ্ছি!!! হার্টের রোগীদের বিশেষভাবে এর ধার দিয়েও না ঘেষার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

জোৎস্নার অস্ফুট আলোর মিছিল, কি নির্বিকার
কি নিরিবিলি তামস-গভীরে তার কি জমাট-বাধা ঐশ্বর্য বিসর্জন,
বুঝাই দায়, নিজ নিষ্চুপতায় কিভাবে অপরকে করে তোলে
জোয়ার-ভাঙ্গা আবেগতাড়িত, অথবা মায়াবী বর্ণিল আলো-প্রেমিক।

জৌষ্ঠের সঙ্গীত বাজে নাগালহীন কোন দুর সীমানায়,
ভেসে আসে ঘরহারা দুরের কোন এক শঙ্খচীলের শীল আর্তনাদ,
পাহাড়ের ঢালু উপত্যকা বেয়ে কাছাকাছি হতে থাকে
দুরের কোন স্বর্গীয় ঝর্নাধারার রিনিঝিনি সঙ্গীত-মূর্ছনা।
শিরশিরে মন তীব্র আড়ষ্টতায় খুজে ফিরে,
এই বেঁচে-না-থাকাসম জীবনের কোন অতৃপ্তির
নাকি জীবিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কোন অভিশপ্ত সত্ত্বার।
ডর লাগে আমার তার কাছাকাছি যাওয়ার,
সাহস পাই না কোন
হ্রেস্বা ঘোড়ার বুক-ফোলা বুক নিয়েও,
সাহস পাই না কোনো।
এই ঝলসানো নিসর্গ রূপের ডালি গোগ্রাসে গিলে ফেলার।

যেভাবে ভাবনার অগোচরে থেকে যায়
ধর্ষিতা নারীর আত্মযন্ত্রনা,
ক্লান্ত জীর্ণ কোন কৃষানীর অপ্রকাশ্য আনন্দধ্বনি,
অথবা গর্ভবতী ষোঁড়শীর উপচে পড়া আগমনী দায়িত্বর্পন,
সেভাবেই ধরতে পারি না,
এই রূপময় চেতনা-কর্ষী লীন হয়ে যাওয়া
আততায়ী-পূর্ণিমার অদেখা কোন বর্ণহীন আলোর মিছিল।
চিন্তার হার্ডডিস্কে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে দিতে পারিনা তাকে,
তার স্বকীয়তায়,
ঐশ্বরিক অনাবিলতা আর কৃ্ত্রিমতার অদেখা দড়ি দিয়ে বেঁধেও।

পত্রগর্ভে নিদ্রালু আলতো-ঘুমিয়ে পড়া ছাই-চাঁপা মৃদুমন্দ বাতাসগুলো
দুর্নিবার জানান দিতে থাকে তাদের সরব উপস্থিতি,
মৃদুল তরঙ্গে হিমহিম আবহে কাপিয়ে তুলে চন্দ্রালোর চাদরে ঢাকা,
লুকিয়ে পড়া নিরাভরন শঙ্খনীলসম সবুজ ঘাসগুলো।
শিশির-জন্মদাতা কচি ঘাসগুলো সটান হয়ে
লাজহীন আস্বাদনে ব্যস্ত থাকে চাঁদনি পশর রাতের অমৃতসুধা,
তাদের নয়ন প্রান সঁপে, মননশীল বিবেকের কন্ঠভাষা ছাড়িয়ে,
অনিমেশের অবিমৃশ্যতায়।
গোধুলিলগ্নে শেষ বিকেলের সূর্যাশীষ দিয়ে বলাৎকার হওয়া,
স্বচ্ছ ক্রিস্টাল শিশিরবিন্দুগুলো ভাবনার করিডোর মেলে দেয়,
জোৎস্না ছাড়িয়ে সপ্তর্ষিমন্ডলের আলেয়া খুজায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষ্ঞগহবরের মত উদার স্বার্থপর সে।

অনাধুন বিজলীবাতির মতন রাতের ঝিকমিক জোনাকিগুলো
ধানক্ষেতে পথ হারিয়ে ফেলে, লীন হয়ে যাওয়া অখন্ড মুহুর্তগুলোতে,
নাচে-গানে মুখর করে তোলে নিরিবিলি অবকাশের
প্রকৃতির অন্তরালে গজিয়ে উঠা সহস্র শস্যপর্ব শালীনতায়, মধুর।
শব-পৃথিবীর নিষ্ঠুরতাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দের ডালি মেলে দেয়,
গানের মূর্ছনায় জোৎস্নাকে সঙ্গিনী করে,
যেভাবে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে অন্ধ আবেগে আকঁড়ে রাখে,
তার সমুদ্রসম হৃদয় উজাড় করা তীব্র বাধ-ভাঙ্গা-ভালবাসায়।

যে প্লাবন ধুয়ে নেয় পুরনো জীর্ন সব কুসংস্কারের বান,
সেই জোয়ারের দলেই নাম লেখায় আলো-আধাঁর-ছায়া সঙ্গিন ব্যস্ত পূর্ণিমার লহর।
যদিও জেনেছি, মৃত্যুছায়া প্রকুতির দেয়ালের মত ঢলে পড়ে তীব্র ধ্রুপদি রূপচ্ছটায়।
অশীতিপর ম্লান রাতে উলুধ্বনি ব্যস্ত তার নিজস্ব আলোর আলিঙ্গনে,
ক্ষনে ক্ষনে,
রাতের নির্মম নিশ্চুপ নিস্তব্ধতায়।

জরায়ুর কোনায় লুকোচুরি খেলায় মত্ত সৃস্টিশীল শৈলী অবুঝ ভ্রুনানুগুলো
আনন্দধ্বনি প্রকাশে কার্পন্য করেনি কোনো,
বিলম্বে না পস্তানোর আশায়।
ত্রিশ লক্ষ জন্মাণূর জোৎস্নার জাগ্রত আলো-আশিষে
সবল পো্ক্ত পূর্ণিমার বীজগুলো।
ডরায় না কোনো, নি:শব্দ মৃত্যুর অশ্লীল আর্তনাদ,
ডরায় না তারা আধাঁর আলিঙ্গনে সন্ত্রস্ত চেতনার
রাক্ষুসে হায়েনাগুলোর হুমকিতেও।

কারন তাদের আছে সর্ব-সঙ্গিন শাশ্বত চাঁদনির অযুত
বাধ-ভাঙ্গা সাত অকুতোভয় সৈনিকের ভয়াবহ মারমুখি ক্ষীপ্রতা,
আর আছে ম্লান জোৎস্নালোর নিযুত শাশ্বতিকীর আশির্বাদ,
যা দিয়ে আকঁড়ে ধরে থাকা যায় শাশ্বতিকীয় অস্তিত্ব,
তার নিজস্ব শাশ্বত শ্বেত-শুভ্রতায়।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


5 Responses to শাশ্বতিকীর আশীর্বাদ

You must be logged in to post a comment Login