পাশা

সোনাপুর অথবা ফরিদার গল্প

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

।।১।।

গ্রামের মেঠো পথ আমার ভীষণ প্রিয়। ইটের কংকালে যখন হাঁপিয়ে উঠি, নিজেকে খুঁজে পাই না, তখন গায়ের কোন মেঠোপথে আমি নিজেকে উদ্ধার করি। স্বচ্ছ কালো দিঘীর জলে গ্রাম্য কোন কিশোরীর অবাধ সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখার ইচ্ছা আমার বহুদিনের। আমার যে সাধগুলো পূরণ হয় না, এটা তার একটা। এই নিয়ে আমার তৃষ্ণা আছে তবে অভিযোগ নেই। কারণ তৃষ্ণার ব্যপ্তি মানুষের মনে তার কাঙ্ক্ষিত বস্তুর প্রতি শ্রদ্ধা জাগায়। চাহিদার চেয়ে প্রাপ্তি বেশী হলে তার অবহেলা হয়। মানুষের চোখে চিরকালই পাওয়া কিছুর চেয়ে না পাওয়া কিছুর সৌন্দর্য বেশী। আমি মানুষ, তাই হয়তো আমিও এর ব্যতিক্রম নই।

এবছর র্বষা বেশ বিলম্বিত, তাই শরতের শেষেও ছায়াঢাকা সোনাপুর গ্রামের চারিপাশে থৈথৈ জল। সোনাপুরের বিলে পানকৌড়ি আর অতি গরমে অতিষ্ট মহিষের পালের জলকেলী দেথতে আমার ভালই লাগে। শহরের কোলাহল ছেড়ে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত দাড়িয়ে আছে গ্রামটা। দূর থেকে দেখলে দ্বীপের মতো মনে হয়। কয়েক’শ পরিবারের এই সোনাপুর গ্রামে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আসেনি বিজলী বাতিও। গ্রামের মানুষের পোশাকে আর চলনে এখনও মাটির টান পাওয়া যায়। সবুজের হাতছানিতে ভরা গ্রাম সোনাপুরের কোথাও কোন ইটের দালান নেই।

ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে আটকে যায় আমার জোড়া চোখ। কোন এক বাড়ীর পিছনে বাড়ীর শেষে জাম গাছের নিচে তৈরী ঘাট। সামনে যতদূর দৃষ্টি যায় জল আর জল। মাঝারী গড়নের কাজল বরণ এক গ্রাম্যমেয়ে ঘাটে বসে বিকালের সৌর্ন্দযকে বাড়িয়েছে বহুগুণ। কালো পাড়ের গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। মাথায় দীঘল কালো কেশে দু’খান বেণী সযতনে বুকের ওপর রাখা। ডান পাশে কায়দা করে একটা লাল শাপলা লাগানো। লক্ষ্যহীন সম্মূখ-দৃষ্টি, কিন্তু আনমনা হাতে বেণী দু’খানকে কখনও সামনে আবার কখনও পেছনে ছুড়ে মারছে। আবার কখনো বেণীর মাথায় বাঁধা লাল ফিতার বাঁধন পরখ করছে। আমার মনে হলো এমন চুলে এমন বাঁধনই সুন্দর। এমন সুন্দর চুল এমন উচ্ছল মেয়েকেই মানায়! আর এই ঘাট এ নারীর জন্যই বুঝি শূণ্য ছিল বহুকাল, আজ তা পূর্ণ হলো। বিকেলে কাঁচা-সোনা-রোদ জল থেকে তির্যকভাবে মেয়েটির মুখে এসে লুকোচুরি খেলছে। মাঝে মাঝে জলের নাচনে সোনালী হয়ে উঠছে সেই মুখ। চঞ্চল পা দু’খানা দোলাতেই জল ছলাৎ করে উঠলো, যেন শীতল জলের কয়েক ফোঁটা আমাকে র্স্পশ করল! হয়তো এমন দৃশ্য প্রতিদিনের কিন্তু আমার কাছে তা বিরল। আমি দু’চোথ ফেরাতে পারছিনা। সেই নারী দেখতে কতটা সুন্দর তা বিষয় নয়, পুরো দৃশ্যটাই আমার কাছে নতুন হয়ে ধরা দিয়েছে। পেশাদার ফটো-তুলিয়ের ছবি তোলা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। কিন্তু আমার আছে। ফটো তোলার আগে যদি চোখের ফ্রেমে বন্দী না করি তবে এই চোখ হয়তো কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত হবে।

অনেক গুলি দৃশ্য আমি কল্পনা করি ছবি তোলার বিষয় হিসাবে। গ্রামের পথ ধরে হাঁটি সেই ইচ্ছা পূরণের আশায়। আর এই সেই দৃশ্য যা আমার কাঙ্ক্ষিত চাওয়ার একটি। কতক্ষন ছিলাম জানিনা। ক’টা ছবি তুলেছি তাও মনে নেই। তবে সময়টা একেবারে কম ছিলো এটা বলা যাবে না।

।।২।।

হঠাৎ করে কি হলো আমি বুঝে ওঠার আগেই আমার বয়সি এক হোমড়া-চোমড়া ছেলে এসে আমাকে ধরে বাড়ীর ভেতরে নেওয়ার জন্য টানতে শুরু করলো। আমি কথা বলারই সুযোগ পেলাম না। এক জন মধ্যবয়সী ভদ্রলোকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল,

–  চাচা, এই লোক ফরিদার ফটো তুলছে!

এদিকে সেই মেয়েটি কোথায় গেলো জানা হলো না। তবে এইটুক বুঝলাম যার ছবি আমি তুলেছিলাম তার নাম ফরিদা আর এই ভদ্রলোক তার বাবা। ছবি তোলার অপরাধে আমাকে ধরে আনা হয়েছে। সৌর্ন্দয দেখায় হয়তো এমনিতে কোন বাঁধা নেই। তবে কেউ দেখলেই যত সমস্যা আর ফ্রেমে বন্দী করা তো আরও বড় অপরাধ। ফরিদা ঘটনার জন্য প্রস্থুত ছিলো না। তাই আকস্মিক এই ঘটনায় চট করে উঠে কোথায় চলে গেলো আমি আর দেখতে পেলাম না।

কিন্তু ফরিদার বাবা আমার পা থেকে মাথা র্পযন্ত দেখে লম্বা ইন্টারভিউ নিলেন। কোথা থেকে এসেছি? কি করি? কেন ফটো তুলি? এই ফটো দিয়া কি করবো? ইত্যাদি ইত্যাদি।উনি প্রশ্ন করছেন আর আমি একের পর এক উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। আর আমার চারিপাশে বেশ কয়েকজন কৌতূহলী মানুষকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন চিড়িয়াখানার কোন প্রানী খাঁচা খুলে বেড়িয়ে এসেছে !

ভেতরে ভেতরে কেমন অপমান বোধ করছিলাম তবুও কিছু করার ছিলো না। আমি চলে যেতে চাইলাম, তিনি বাঁধা দিলেন না। ঘাটে এসে জানলাম নৌকা অনেক আগেই চলে গেছে। সুতরাং আমার আর যাওয়া হচ্ছেনা। কিন্তু কোথায় থাকবো, এই ভাবনাটা তাৎক্ষনিক আসেনি। তবে কেমন যেন একটা এডভেঞ্চার অনুভব করছিলাম। এ দোকান সে দোকান করে পেটে কিছু দানাপানি দিয়ে আবার ঘুরতে ঘুরতে সেই ঘাটে এসে হাজির হলাম।

।।৩।।

এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এসেছে। সমগ্র আকাশ আর পৃথিবীকে আলো করে দেখা দিলো পূর্ণিমার চাঁদ। কি সুন্দর টলটলে জোছনা! নিজের শরীরের লোমও যেন দেখা যায়। ঘাটে বসে বিলের জলের দিকে তাকাতেই শরীরে একটা অদ্ভুত শিহরন খেলে গেলো। উপরে পূর্ণিমা-চাঁদ, সামনে অবারিত জলরাশি, একপাশে আমি দাঁড়ানো। প্রকৃতি এমন ভাবে আমার দিকে ফিরে তাকাবে কোনদিন ভাবিনি। দক্ষিণের মৃদুমন্দ সমীরণে আমি শীতল হতে লাগলাম। আমি সব ভুলে গেলাম। কে কি বলল? কোথায় থাকব?? কিভাবে যাব?? কিছুই নেই ভাবনায় এখন। এমন জোছনা যদি পাই, সারারাত এই ঘাটে কাটিয়ে দেওয়া কোন ব্যপারই না।

হঠাৎ বাড়ীতে কান্নার আওয়াজে আমার তন্ময়তা ভাঙলো। যাবো কি যাবো না — ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। তারপরও দ্বিধা-দ্বন্দ  নিয়ে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলাম। দরজায় পেলাম ফরিদাকে কিন্তু কিছু বলার আগেই আমাকে দেখা মাত্র ভেতরে চলে গেলো। তখনও নারী কণ্ঠে কান্নার শব্দটা কানে আসছে। কেউ নেই তাই কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছিনা। এমন সময় ফরিদার বাবা বেড়িয়ে এলেন। কি সমস্যা জানতে চাইলাম। উনি তার উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলেন- এখনো যাননি??

আমি বললাম, ‘না, কিভাবে যাবো ? নৌকা তো নেই।” উনি আমার কথা পুরো শোনেন নি। তার আগেই বললেন- আমার ছেলেটা অসুস্থ। উনার সাথে কথা বলে বুঝলাম তার ছেলে ডায়রিয়ায় ভুগছে। এই সময়টাতে গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। আমি তার ছেলেকে দেথতে চাইলাম। তিনি বার দুয়েক ইতস্তত করে আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।

সাত-আট বছরের শিশু মিলনের শিয়রে বসে ব্যথাভরা হৃদয়ে কাঁদছেন তার মা। মিলনের নিস্তেজ দেহ, উপরের দিকে তার শূণ্য দৃষ্টি ভেতরে কেমন একটা বেদনা জাগায়। “বাসায় কি খাবার স্যালাইন আছে?” জানালেন নাই। আমি বল্লাম এই সময় প্রচুর স্যালাইন খাওয়াতে হয়। গ্রামের দোকানে পাওয়া যাবে? উনি বললেন না এখানে পাওয়া যায় না।

আমি নিয়মিত বাইরে বের হই। ফলে কিছু ঔষধ পত্তর ব্যগে থাকেই। ব্যগে খুলেই মনে আশার সঞ্চার হলো, একেবারে দশ দশটা। আমি পানি আনতে বললাম। এর মধ্যেই ছেলেটি কঁকিয়ে উঠলো। মানে আবার বাথরুমে  যাবে। সে ফিরে আসতে আসতে স্যালাইন তৈরী করলাম। তার মায়ের হাতে গ্লাস দিয়ে খাওয়াতে বল্লাম। বাকী প্যাকেট গুলা তার মায়ের হাতে দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম।

ঘর থেকে বেড়িয়ে অজানা আশংকায় প্রহর গুনতে লাগলাম। ঘরের দাওয়ায় একটা মোড়া নিয়ে বসে আছি। আর ভাবছি। সারাদিনের হিসাব মিলাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপর তার বাবা আসেন একটু বসেন আবার ভেতরে যান। বেশ অস্থির হয়ে আছেন তিনি। একটু পরপরই মায়ের কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। আমার জন্যও আমার মা নিশ্চয়ই এমন কষ্ট করেছেন। মিলনকে দু’একবার দেখে এলাম। স্যালাইন চলছে কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছেনা। মাঝে মাঝে বমি হচ্ছে। মিলন ক্রমশ র্দুবল হয়ে পড়ছে। বাবা-মাকে সাহস দেয়ার জন্য বল্লাম, ঘাবড়াবেন না। স্যালাইন খাওয়াতে থাকুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি নিজেই ভরসা পাচ্ছিলাম না। অবশেষে আমার ডাক্তার বন্ধু বিরুণীকে ফোন করে পরার্মশ নিলাম। চরম এক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে রাত কাটতে লাগলো। কষ্টের রাত বুঝি শেষ হতে চায় না, ঠিক তেমনি আমার রাতও ফুরাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ ধরে টেনে টেনে বড় করছে রাতটা।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একসময় রাত শেষ হয়ে এলো। দূরের কোন মসজিদ হতে মুয়াজ্জিনের ক্ষীন কন্ঠে আজানের ধ্বনি শুনলাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফরিদার বাবার দিকে তাকালাম। তিনি বললেন মিলন ঘুমাচ্ছে। বুঝলাম এখন ভালো।

একসময় সকালের আলো ফুটে উঠলো। আমি ঘাটে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে ফিরে আসছি। দূর থেকে দেখি ছেলেটি বারান্দায় মাদুর পেতে বসে আছে। আমি আর বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করিনি। সোজা চলে এলাম নৌকা ঘাটে। এরপর বাসায়। হালকা একটু ঘুম দিয়ে চলে গেলাম স্টুডিওতে। কয়েকটা ছবি প্রিন্ট করলাম। অসম্ভব সুন্দর ছবিগুলো দেখে গতকালের সব কষ্ট ভুলে গেলাম। যার ছবি এত সুন্দর সে নিশ্চয়ই আরো অনকে সুন্দর। আমার মন যেন কৌতূহলী হয়ে উঠলো।

।।৪।।

ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু কে জানতো আমার জন্য আরো কোন কিছু অপেক্ষা করছিলো! তাই আমাকে আবারো ফিরতে হলো। কেন কিসের টানে জানিনা তবে দুপুরের পর এক বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম সেই বাড়ীতে। যাওয়ার সময় একটা ছবি নিয়ে গেলাম। বাড়ীর প্রবেশ পথেই ফরিদার বাবার সাথে দেখা। উনি আমাকে দেখে অনেকটা চমকে উঠলেন। আপনি কোথায় ছিলেন? সারা গ্রাম খুঁজতাছি আপনারে। মিলনের কথা জিজ্ঞেস করতেই প্রচ্ছন্ন হাসি। এখন ভালো। আপনি না থাকলে যে কি হতো!! আপনি আমার ছেলের জন্য অনেক কষ্ট করছেন। আপনারে কত কিছু কইছি, কিছু মনে নিয়েন না বাবা।

বাড়ীর উঠোনে মিলন খেলা করছে। পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। এখনও বেশ র্দুবল বোঝা যাচ্ছে। কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো?? কোন উত্তর করলো না। বাবাকে জরিয়ে ধরলো। একবার বলল এইডা কি?? আমি বললাম, নিবে?? নাও–বলেই ছবিটা তার হাতে দিলাম। তার বোনের ছবি দেখেই বোনকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে গেলো।

মা আসলেন। আমাকে ধন্যবাদ জানালেন, আপ্যায়ন করলেন। এদিকে দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেছে। শেষ নৌকাটা ছেড়ে যাবে। তাই আমাদের উঠতে হচ্ছে। বাবা-মা নৌকা ঘাট পযর্ন্ত এগিয়ে দিলেন। আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা। কারন যাকে নিয়ে এত কিছু, যার টানে আবারো ফিরে আসা, তার দেখা পাইনি। ছবি দেখার পর কৌতূহল যতখানি বেড়েছিলো, এখন এতদূর এসে দেখা না পেয়ে তা আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে। অজানা এক সৌর্ন্দয র্দশনের র্ব্যথতায় কুঁকড়ে যেতে লাগলাম ভেতরে ভেতরে। নারী যতটা সুন্দর বাস্তবে, কল্পনায় সুন্দর তার চেয়ে শতগুণ বেশি। আমি মনে মনে সেই সৌর্ন্দযই কল্পনা করছি আর না দেখায় ভেতরে ভেতরে একটা কষ্ট জমা হচ্ছে। একবার মনে হলো এত রাগ আমার উপর! একবার সামনে এলে ক্ষতি কী হতো !? আবার ভাবলাম কেনই বা আসবে? আমি তার কে? তার ভাইয়ের জন্য যা করেছি এর জন্য তার বাবা মা যথেষ্ট করেছেন। এখানে আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও তাই করতো। এ আর এমন কি?? বিরুণী একবার বলেছিলো, মেয়েটা অহংকারী তাই আসেনি। আমি মানতে পারিনি। আবার মনকে বলি, হতেও পারে।

নৌকা ছেড়ে দিলো। আমি এক অজানা কস্ট নিয়ে সোনাপুর ছেড়ে আসছি। যা আমি ছাড়া কেউ জানে না। কেউ বুঝবে না। উনারা হাত নেড়ে আমাকে বিদায় দিলেন। মনে হলো কি যেন রেখে যাচ্ছি এখানে। নিজেকে প্রবোধ দিলাম, বড় বেশি ভাবছি আমি। মেযেটি হয়তো তার কিছুই ভাবছে না।

গ্রামের ধার ঘেষে কয়েকটি বাড়ী পার হয়ে এলাম। দুরে নারিকেল গাছের ছায়ায় কাকে যেন দেখা যাচ্ছে। ভালোভাবে দেখলাম। ফরিদা আর তার ভাই দাঁড়িয়ে আছে! আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি হাত নাড়লাম। তাকে দেখলাম কিন্তু দূর থেকে কিছুই বোঝা গেলো না।

নৌকায় একজনকে মেয়েটি সর্ম্পকে কথা বলতে শুনলাম। এক বৃদ্ধের কথায় শুনলাম মেয়েটি বোবা। মাথায় যেন বাজ পড়ল। আবার ফিরে তাকালাম তার দিকে। সে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুকটা ভারী হয়ে আসলো। বন্ধুর হাত চেপে ধরলাম। নৌকাটা আমার বুকটাকে দুভাগ করে যেন এগিয়ে চলছে। আমার বুকের ভেতরে রক্তের নহর বইছে তিরতির করে। অনুভব করলাম সেই বোবা মেয়েটিও হয়ত আমার চেয়ে বেশী কষ্ট বহন করে চলেছে। কারণ আমিতো কিছু বলতে পারছি, কিন্তু সে তো তাও পারছেনা………..।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


19 Responses to সোনাপুর অথবা ফরিদার গল্প

You must be logged in to post a comment Login