সুমাইয়া হানি

বিশ্ববরেন্য শিল্পী পাবলো পিকাসো এবং কিছু কৌতূহলপূর্ণ কথা

বিশ্ববরেন্য শিল্পী পাবলো পিকাসো এবং কিছু কৌতূহলপূর্ণ কথা
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

picasso46021পাবলো পিকাসো ছিলেন স্প্যানিশ অঙ্কনশিল্পী, ভাস্কর এবং ছাপ-চিত্রকর। তাকে বিশ শতকের মহত্তম শিল্পী বলে অভিহিত করা হয়। এ শতাব্দীর শিল্পকলার সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। শিল্পের বিচিত্র সব মাধ্যমে তিনি সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে বিশ্বের চারুকলাকে সমৃদ্ধ করেছেন।

স্পেনের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর মালাগায় ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর পাবলো পিকাসো (Pablo Picasso) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল খোসে রুইজ ব্লাস্কো এবং মাতার নাম মারিয়া পিকাসো লোপেজ। তার নামের শেষাংশ তার মায়ের নামের মধ্যাংশ থেকেই নেয়া।

পিকাসোর পিতা ছিলেন বার্সেলোনার চারুকলা বিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ১৮৯৫ সালে তিনি ১৪ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষায় পাস করেন। এর দুই বছর পর তিনি মাদ্রিদে যান রয়াল একাডেমিতে পড়াশোনা করতে।

পিকাসোর ছবি আঁকার হাতেখড়ি একেবারে শৈশবে শিক্ষক ও চিত্রকর পিতার তত্ত্বাবধানে। ১৯ বছর বয়সে ছবি এঁকে তিনি প্রথম শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। ১৯০৪ সালে পিকাসো স্থায়ীভাবে প্যারিসে চলে যান এবং আমৃত্যু তার শিল্প সাধনার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে প্যারিস নগরী।

প্যারিসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে তিনি বিত্তের মুখ দেখেছিলেন তা নয়। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সঙ্গে অবিরাম লড়াই করে ধাপে ধাপে তিনি শিল্পী হিসেবে খ্যাতি ও সুখের মুখ দেখেছিলেন।

চিত্রকর হিসেবে পিকাসোর জীবন বেশ কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ব্লু পিরিয়ড’, প্রথম মহাযুদ্ধ ও তার অন্তর্বর্তীকাল ‘রোজ পিরিয়ড’, ‘নিগ্রো পিরিয়ড’, ‘কিউবিস্ট পিরিয়ড’। নিয়ত রূপান্তরশীল শিল্পী হিসেবে পিকাসো উল্লিখিত পর্বে বিভক্ত সময়সীমার মধ্যেও তার পরবর্তীকালে আরো বহুবিধ শিল্পনীতি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যাপৃত থেকেছেন। বাস্তববাদী অঙ্কনরীতি যেমন তার হাতে নতুন মাত্রা পেয়েছে, তেমনি পরাবাস্তববাদী শিল্পরীতিও সমৃদ্ধ হয়েছে তার প্রতিভার স্পর্শে। ১৯১০ সালের মধ্যেই কিউবিষ্ট অঙ্কনশৈলী তার একাগ্র চেষ্টায় পূর্ণতা লাভ করে।

পিকাসোর বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে বিখ্যাত : ল্যা মূল্যাঁ দা ল গালেৎ, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট, সালত্যাঁবাঁক, সেল্ফ-পোট্রেট, টু নুডস, আভাগঁর রমণীবৃন্দ, থ্রি মিউজিশিয়ানস, স্কাল্পটর, মডেল অ্যান্ড ফিশবৌল, থ্রি ডান্সার্স, গিটার, গ্লাস অব আবস্যাঁৎ, সিটেড বাথার, গোয়ের্নিকা এবং পালোমা ইত্যাদি।

১৯৭৩ সালে ৮ এপ্রিল পাবলো পিকাসো প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।

১. পাবলো পিকাসো ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের শহর মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন।


২.স্পেনের মালাগা শহরে জন্মগ্রহণকারী এই বিশ্বনন্দিত শিল্পীর পূর্ণ নাম ২৩টি শব্দ দিয়ে গঠিত।
পাবলো দিয়েগো খোসে ফ্রান্সিসকো দে পাউলা খোয়ান নেপমুসেনো মারিয়া দে লস রেমেদিওস সিপ্রিয়ানো দে লা সান্তিসিমা ত্রিনিদাদ মার্টির পাট্রিসিও ক্লিতো রুইজ ই পিকাসো।


৩.তার মায়ের নাম ছিল মারিয়া পিকাসো ই লোপেজ এবং পিতার নাম খোসে রুইজ ব্লাস্কো।


৪. পিকাসো ভুমিষ্ট হওয়ার পর ধাত্রী ভেবেছিলেন মৃতশিশুর জন্ম হয়েছে।
এই কারণে ধাত্রী শিশুটিকে একটি টেবিলের উপর রেখে মায়ের সেবা-শুশ্রুষায় ব্যস্তছিলেন। এ সময় শিশুটিকে টেবিলের উপর নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখে তার চাচা এগিয়ে আসেন এবং তার মুখে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া শিশুটির মুখে নিক্ষেপ করা মাত্রই শিশুটি নড়াচড়া দিয়ে উঠে।


৫.শিশু পিকাসোর মুখ থেকে উচ্চারিত প্রথম শব্দটি ছিল ” পিজ”।
পিজ শব্দটি লাপিজ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। স্পেনের ভাষায় লাপিজকে পেন্সিল বলা হয়।


৬. মাত্র ৯ বছর বয়েসে পাবলো পিকাসো তার জীবনের প্রথম তৈলচিত্রের কাজ সম্পূর্ণ করেন।
“এল পিকাদোর” (১৮৯০) যে অশ্বারোহী ষাঁড়ের লড়াইতে বল্লম দিয়ে ষাঁড়কে বিদ্ধ করে ।


৭.পিকাসো তার জীবদ্দশায় ২০ হাজারের অধিক শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে গেছেন।


৮. মাত্র ১৪ বছর বয়সে পিকাসো ধর্মীয় সম্বলিত বেশ কিছু ছবি সিরিজ আকারে একেঁছিলেন যা তিনি কখনই বিক্রির আগ্রহ দেখাননি।


৯.১৯০০ থেকে ১৯০৪ সাল ছিল শিল্পীর জীবনে ব্লু প্রিয়ড। এই সময়কালে শিল্পীর ক্যানভাসে কেবল মানুষের দুঃখ, ক্লেশ আর দুর্দশা ফুটে উঠত।


১০.১৯০৪ সাল থেকে ১৯০৫ সাল ছিল শিল্পীর জীবনে রুপালি বছর। এই দিনগুলিতে তিনি প্যারিস শহর এবং সার্কাস পার্টি দ্বারা আকৃষ্ট ও অনুপ্রানিত হয়েছিলেন।


১১.শিল্পীর সৃষ্টি কিউবিজম পিরিয়ডের স্থায়িত্ব কাল ছিল ১৯০৮ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত।


১২. ১৯৮১ সালে পিকাসোর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বিখ্যাত চিত্রশিল্প গুয়ের্নিকা নিউইয়র্কের মর্ডান আর্ট মিউজিয়াম থেকে মাদ্রিদে ফেরত আনা হয়।
পিকাসোর ইচ্ছাটি বাস্তবায়ন করতে তদানিন্তন স্বৈরাচারী সরকার ফ্রান্কোর পতন অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছিল ।


১৩.দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্পেনের ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক তিনি অপদস্ত ও নিগৃহীত হয়েছিলেন।
১৯৪৭ সালে পিকাসো ফ্রান্সের কমুনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন ।


১৪.১৯৭৩ সালের ৮এপ্রিল ৯১ বছর বয়সে ফ্রান্সের মুগী শহরে এই বিশ্ববরেন্য শিল্পী মৃতুবরণ করেন।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login