শৈলী টাইপরাইটার

রহস্য: জেনে নিন প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের খবর

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page
তৌফিক অপু
একটি দৃশ্য দেখে চোখ যেন আটকে গেল। প্রকা- এক ডাইনিং টেবিল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের ওপর। প্রথমে খানিকক্ষণ বিশ্বাস হচ্ছিল না। একটা টেবিল সমুদ্রের মাঝে এল কিভাবে তার ওপর আশে পাশে কোন চেয়ার নেই টেবিলের উপর নেই কোন খাবারের আয়োজন। তাহলে এই টেবিল এখানে থাকার মানে কি? ঘোর কাটল কিছুক্ষণ বাদেই, ওটা আসলে টেবিল নয়। টেবিল আকৃতির একটি পাহাড়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ঠিক যেন একটি টেবিল সমুদ্রের উপর কেউ রেখে গিয়েছে। নয়নাভিরাম এক দৃশ্য। আর এই দর্শনীয় স্থানটিই ঠাঁই পেয়েছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে। সম্প্রতি পৃথিবীর সাতটি প্রাকৃতিক চমকপ্রদ স্থানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যা সেভেন ওয়ান্ডারস অব নেচার ২০১২ নামে পিরিচিত। সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের বিষয়টি পুরনো হলেও শুধুমাত্র প্রকৃতিকে এর আওতায় আনা হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। ২০০৭ সালে সুইস কানাডিয়ান একটি সংগঠন এর প্রচলন ঘটায়। ২০১১-১২ প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের নেতৃত্ব তারাই দিয়েছে। পৃথীবীব্যাপী ভোটাভুটির মাধ্যমে এই নির্বাচন পরিচালিত হয়। ভোট প্রদানের মাধ্যমে ছিল ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন । ২০১১-১২ নির্বাচনের শেষ ভোটটি গণনা হয় ১১-১১-১১ এর রাত ১১টা ১১ মিনিটে। এ সময়ের পরে আর কোন ভোট গণনার আওতায় পড়েনি। প্রতিযোগিতা শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০৪টি স্থান নির্বাচনের পর ইন্টারনেটে দেয়া ভোটে ২২২টি দেশের ২৬১ স্থান দ্বিতীয় পর্বে ওঠে। ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসের ভোটে নির্বাচিত হয় শীর্ষ ৭৭ স্থান, এর মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত ২৮টি স্থানের জন্য গতবছর ২১ জুলাই ভোট গ্রহণ শুরু হয়, যা ১১-১১-১১তে এসে শেষ হয়। এখান থেকে সাতটি স্থান চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হয়। যার ঘোষণা আসে ২০১২ সালের শুরুতে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য হিসেবে বিবেচিত স্থানগুলো হচ্ছে আমেরিকার আমাজন বন, ভিয়েতনামের হ্যালং বে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ইগুয়াজু জলপ্রপাত, দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার কামোডো দ্বীপ, ফিলিপাইন্সের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা পাতাল নদী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার টেবল মাউনটেন্ট। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মানগত কোন সিরিয়াল রক্ষা করা হয়নি। অর্থাৎ কোনটা প্রথম কিংবা কোনটা সপ্তম এই বিচার করা হয়নি। সব একই মানের সারিতে রাখা হয়েছে। সাজানো হয়েছে শুধুমাত্র ইংরেজী বর্ণমালার ক্রমানুসারে। সে সূত্র ধরেই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে বর্ণনা করা হলো।

আমাজন চিরহরিৎ বৃক্ষের বন
প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে হয়ে আলোচিত হওয়ার আগে থেকেই বহুল আলোচিত আমাজন জঙ্গল। চিরহরিৎ বৃক্ষের বন বলা হয় একে। অনেক রহস্য এবং গল্পগাথা রয়েছে এই বনকে ঘিরে। রয়েছে অনেক কুসংস্কার। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে এর অবস্থান। ৫৫ লাখ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বন। সাতটি দেশকে স্পর্শ করে গেছে বনটি। এই দেশগুলো হচ্ছে বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফ্রেঞ্চ গায়না, পেরু, সুরিনাম, গায়না এবং ভেনিজুয়েলা। পৃথিবীর অন্যতম বড় নদী আমাজনের পাশ ঘেঁষেই এই বন। যে কারণে বনটির নামকরণ হয়েছে আমাজন বন। এত ঘন চিরসবুজ বৃক্ষের বন অন্য কোথাও নেই। সূর্যের আলো ভেদ করতে পারে না বনের মধ্যে। বিভিন্ন নাটক-সিনেমায় যেসব অদ্ভুত জীবজন্তু দেখানো হয় এর বেশিরভাগই রয়েছে এ জঙ্গলে। আকাশ সংস্কৃতির কারণে এনাকন্ডা ছবিটি মোটামুটি সবারই দেখা, ছবিতে বিশালাকায় অজগর সাপ দেখানো হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই এনাকন্ডার বসবাস এই আমাজনে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এই বনে। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছ, ২২০০ প্রজাতির মাছ এবং ২ হাজারেও বেশি প্রজাতির জন্তু রয়েছে যা সত্যিকার অর্থেই এক বিস্ময়। ১৯৬০ সালের আগে এই বনে প্রবেশধিকার সংরক্ষিত ছিল। কারণ মোটেও নিরাপদ স্থান ছিল না এটি। এর পর কিছু কিছু মানুষ যেখানে চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করলে জঙ্গলের সৌন্দর্য কিছুটা হানি হয়। তার পরেও এই বনের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। গহিন বনে কি কি ঘটে তা অজনাই রয়েছে। অজানা রয়েছে জঙ্গলের আদিবাসী রহস্য। সব মিলিয়ে বর্তমান সময়ের এক বিস্ময় আমাজন চিরহরিৎ বৃক্ষের বন।

হ্যালং বে
ভিয়েতনামের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত হ্যালাং বে। দীর্ঘদিন ধরেই এ জায়গা পর্যটকদের অতি প্রিয় একটি জায়গা। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো হ্যালং বেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল হ্যালং বে। নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়া। চারদিকে পানি এবং এর মাঝ খানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুচ্ছ। পাহাড় এবং পানির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। দৃষ্টিনন্দন এক জায়গা হ্যালং বে দ্বীপ। আসলে দ্বীপ বললেও ভুল হবে। কারণ এখানে কোন স্থল জায়গা নেই। চারদিকে পানি মাঝে মাঝে পাথুরে পাহাড়। এই পাহাড়গুলোও বেশ আকর্ষণীয়। একেকটি পাহাড় একের রকম এবং আকৃতির কারণে পাহাড়গুলোর নাম রাখা হয়েছে। নামগুলোও বেশ মজার। যেমন একটি পাহাতের স্থানীয় নাম ‘ভায়ো ইসলেট।’ এর অর্থ হচ্ছে হাতি। অর্থাৎ পাহাড়টি দেখতে হাতির মতো। এরকম আরও বেশবিছু নাম রয়েছে যেমন কিসিং কক, ফাইটিং কক ইত্যাদি। গুচ্ছ গুচ্ছ পাথুরে পাহাড় সংবলিত হ্যালং বের আয়তন ১৫৫৩ কিলোমিটার। প্রায় ১৬০০ মানুষের বসবাস এখানে। ৪টি জেলেদের গ্রামে বিভক্ত এটি। মজার বিষয় হচ্ছে স্থলভাগ না থাকায় বাসমান বাড়িতে বসবাস করে তারা। আর এই বাড়িগুলোও পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম দিক। এখানে পর্যটকরা শুধু বেড়াতে পারবেন। তবে হ্যালং বে’র উত্তরে দুটি দ্বীপ রয়েছে। একটি স্টুয়ান চাও এবং অপরটি ক্যাটবা। এখানে পর্যটকদের থাকা খাওয়ার নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। এখান থেকেই হ্যালং বে’র উদ্দেশে যাত্রা করতে হয়। হ্যালং বে’তে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। রয়েছে সরীসৃপ বানন, এটিলপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
হ্যালং বে’র গুচ্ছ পাহাড়গুলোর আরেকটি সৌন্দর্য হলো পাহাড়ী জলাধার। এই গুচ্ছ পাহাড়গুলোতে রয়েছে সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলেই দেখতে পাওয়া যায় জলাধার। দেখে মনে নিজ হবে আপন মনে কেউ সুইমিং পুল বানিয়ে রেখে গেছে। অথচ সবই প্রকৃতির খেলা, এমনই রোমাঞ্চকর এক জায়গা হ্যালং বে।

ইগুয়াজু জলপ্রপাত
জলপ্রপাতের কথা শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে নায়াগ্রার জলপ্রপাত। কিন্তু নায়াগ্রা জলপ্রাপাতের চেয়েও সন্দুর ইগুয়াজু জলপ্রপাত। আর এ সৌন্দর্যের কারণেই ঠাঁই করে নিয়েছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে। দুটি দেশকে সংযুক্ত করেছে এই জলপ্রপাতটি। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সীমান্তবর্তী এলাকা মিসিয়ন্স ও পারানা প্রদেশে এর অবস্থান। উচ্চতার দিকে থেকে সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত এটি। এর উচ্চতা হচ্ছে ৬০ থেকে ৮২ মিটার এবং চওড়া ২.৭ কিলোমিটার। ইগুয়া নদীর স্রোতধারা থেকেই এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি। ইগুয়াজুর অর্থ হচ্ছে পানি এবং বড়। ২৭২টি ছোট ছোট জলপ্রপাতে মিলিত হয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। এই জলপ্রপাতের পানি পড়ার গর্জন এত বেশি যে, কয়েক মাইল দূরে থেকেই শুনতে পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এই গর্জনকে সৃষ্টিকর্তার গর্জন বলে অভিহিত করে থাকে। সারা বছরই স্রোতধারা একই রকম থাকে। নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখার জন্য বহু পর্যটক ভিড় জমান। সে কারণে পর্যটকদের থাকা- খাওয়ার নানাবিধ সুবিধাও রয়েছে। জলপ্রপাতের বর্ণনা এবং বিভিন্ন দিক ঘুুরিয়ে দেখানোর জন্য রয়েছে ট্যুরিস্ট গাইড। ফলে জলপ্রপাতটিকে নিয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলবে।

জেজু আইল্যান্ড
দক্ষিণ কোরিয়ার পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত একটি দ্বীপ হচ্ছে জেজু আইল্যান্ড। ধারণা করা হয়, এই দ্বীপটি একটি আগ্নেগিরির পরিত্যক্ত জ্বালামুখ, যা পরবর্তীতে দ্বীপে রূপান্তরিতহয়েছে। কথিত আছে, ২ মিলিয়ন বছর আগে অর্থাৎ টারসিয়ারি যুগে এই উপত্যকার সৃষ্টি। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থাকায় এখানে বিংশ শতাব্দী এমনকি একুশ শতকেও স্থানীয় আদিবাসী ছাড়া সাধারণ মানুষের পদচারণা ছিল না। তবে বর্তমানে বেশ পরিপাটি এবং আধুনিক। ১৭৫ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে রয়েছে এয়ারপোর্ট। এখানে রয়েছে হাল্লাসান পর্বতমালা, যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৪০০ ফুট। এই দ্বীপের ১২ ভাগই বনাঞ্চল। সমুদ্রের মাছ এবং এই বনাঞ্চলই স্থানীয়দের ভরসা। এখানে এখন পর্যন্ত কোন কৃত্রিমতার ছাপ পড়েনি। প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের আধার। সমুদ্রের ভেজা বাতাস আচ্ছন্ন করে রাখে পুরো দ্বীপটিকে। এ জন্য দ্বীপটি ওয়েট ল্যান্ড হিসেবেও বিবেচিত। এই দ্বীপে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ছিয়ংজিয়ং জলপ্রপাত, হাইউবস গুহা, হায়ওংজি দ্বীপ, হাল্লিম পার্ক, হাল্লা পর্বত ইত্যাদি। বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য রয়েছে গলফ খেলার ব্যবস্থা, ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা ও পাহাড়ে ওঠার ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। উৎসবগুলোর মধ্যে হর্স ফেস্টিভ্যাল, পেঙ্গুইন ফেস্টিভ্যাল, বিচ ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি। এর মধ্যে হাল্লিম পার্কে বার্ষিক একটা ফায়ার শো হয় যা খুবই আকর্ষণীয়।

কমোডো আইল্যান্ড
কমোডো আইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে স্বীকৃত। তিনটি দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ পাশাপাশি অবস্থিত। এর একটি হচ্ছে কমোডো আইল্যান্ড। অন্য দুটি হচ্ছে রিংকা ও প্যাডার। ১৯৮০ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকার কমোডো আইল্যান্ডকে সে দেশের ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে আখ্যায়িত করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীপটির অধিবাসী এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা। পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বড় সরীসৃপ কমোডো ড্রাগনের বাস এখানে। এর নামেই এই দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছে। বিশালাকায় এই সরীসৃপটি ড্রাগনের ধারণাকে স্পষ্ট করে তোলে। এ দ্বীপটিও একটি পরিত্যক্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। ১৫১ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে প্রায় ২০০০ আদিবাসীর অবস্থান। ১৯১০ সালের আগেও এ দ্বীপ কেউ প্রবেশ করেনি। মজার মজার গল্প রয়েছে দ্বীপকে ঘিরে। ধারণা ছিল ভয়ঙ্কর ড্রাগনের আস্তানা এখানে। মানুষ একবার গেলে নাকি ফিরে আসে না। এমনি নানা রকম ধারণা ছিল। ১৯১০-এর পর এক ডাচ নাবিক কমোডো আইল্যান্ডে গিয়ে একটি কমোডো শিকার করে নিয়ে আসে। মাপ দিয়ে দেখা যায় কমোডোটি ২.১ মিটার লম্বা। এর পর থেকেই সাধারণ মানুষের যাতায়াত বাড়তে থাকে। এই দ্বীপের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে গোলাপি বালুর বিচ। মূলত সাদা এবং লাল বালুর সংমিশ্রণ যা সূর্যের আলোতে গোলাপি আভা সৃষ্টি করে। দৃষ্টিনন্দন এক ব্যাপার। এখানে পর্যটকদের সুবিধা দেয়ার জন্য নানা রকম আয়োজন সম্পন্ন করা আছে।

পুরেতা প্রিন্সেসা পাতাল নদী
প্রকৃতির আরেক বিস্ময় ফিলিপাইন্সের এই পাতাল নদী। ফিলিপাইন্সের সেন্ট পল পর্বতমালায় এই নদীটির অবস্থান। পলসেন্ট পর্বতমালা অবস্থান করছে পলওয়ান প্রদেশে। পুরো অঞ্চলটিই পর্বতবেষ্টিত। এই পর্বত গুহার ভেতর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ পাতাল নদী। যার দৈর্ঘ্য ৮.২ কিলোমিটার। এবং পৃথিবীর মধ্যে ২য় অবস্থানে রয়েছে। পাহাড়গুলোর নিচ দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। এর অনেক বাঁক এবং শাখা প্রশাখা রয়েছে। নদীটির পানি খুবই স্বচ্ছ। এই নদী বেয়ে যাত্রা পথে বিরতি দেয়ার মতো সমতল জায়গাও রয়েছে পাহাড়ের গুহায়। পাতাল নদী হওয়ায় নদী পথ বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছু কিছু জায়গা তো একেবারেই অন্ধকার। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না করে এ পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি বাঁকেই রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ। অদ্ভুদ রকমের সুন্দর একটা নদী। নিরবধি বয়েই চলছে স্বচ্ছ পানি ধারণ করে। পৃথিবীর এই পাতাল নদী সত্যিই প্রকৃতির এক বিস্ময়।

টেবিল মাউনটেন্ট
সাউথ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে টেবিল মাউনটেন্টের অবস্থান। পাহাড়টি দেখলে মনে হবে সুন্দর কারুকাজ করা একটা টেবিল সমুদ্রের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর আশপাশে বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ রয়েছে। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম ম্যাক ক্লিয়াস বেকন। টেবিল মাউন্টটেন্ট একটি মালভূমির মতো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১০৮৬ মিটার এবং সমতল অংশটুকু হচ্ছে ৩ কিলোমিটার। ১৫০৩ সালে এটির নামকরণ করা হয়। কারণ এ বছর ইউরোপীয়ান এক ভদ্রলোক এন্টোনিও সালভানহা টেবিল মাউন্টটেন্ট জয় করেন। তিনি এর নামকরণ করে। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি পাহাড়। অবিকল টেবিলের মতো দেখতে। প্রকৃতি তার নিজ খেয়ালে সাজায় আপন ভুবন। সাজাতে গিয়ে জন্ম দেয় নানা বিস্ময়ের, যা দেখে মানুষ আশ্চর্য না হয়ে পারে না। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য সাতটি স্থানের নাম ওঠে এলেও আরও কত যে বিস্ময় যে রয়েছে গুনে শেষ করা যাবে না।
প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং সুন্দরবনও ছিল। দুর্ভাগ্যবশত সেরা সাতে ঠাঁয় নিতে পারেনি। তবে আমাদের দেশেও যে অবাক করার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। আমাদের উচিত অবাক করা সৌন্দর্যগুলোকে লালন করা। কোন মতেই যেন তা ধ্বংস না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। তবেই আরও সুন্দর হয়ে উঠবে আমাদের প্রকৃতি।
toufiq_apu@yahoo.com

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login