অণুগল্প :: কালু
: কিরে তর মায়ে কই?
: জানি না।
: জানস না ক্যান? কই গেছে? গর্জে উঠে কালুর বাপ।
: জানিনা, ভয়ে একটু সরে যায় কালু।
: হুমুন্দির পুত বইয়া বইয়া কি করস? জানসটা কি? বলেই করিম মিয়া এক লাথি ঝারে নিজের সন্তানের পাছা বরাবর।
কালু লাথি খেয়ে ছিটকে পরে, অবাক হয়না তেমন, হাত দিয়ে ধুলা ঝেরে সে দৌড় দেয় গ্যারেজের দিকে। মার খেয়েও তার তেমন খারাপ লাগে না, এরকম চর লাথি তার বাপ সারাদিনে বেশ কয়েকবার দেয়। তয় কালু জানে মায়ে কই গেছে। বাপরে কয় নাই কিছু। কালু এই বয়সে বুঝে গেছে তার মা আর বাপের সম্পর্কটা।
সন্ধ্যা হইলে মা যায় গ্যারেজের মালিক রহমত শেখের ঘরে। মা সেখানে কি করে জানে না সে। কিছু একটা করে সেটা বুঝে, রহমত শেখ ওরে দেখলেই নরম চোখে তাকায়, দোকান থেইকা এইটা সেইটা কিনে দেয়। বস্তীর পুলাপান হাসে। কয় কিরে কালু তর বাপে কি কিন্না দিলো? রাগে ফুসতে থাকে কালু। কিচ্ছু কয়না। ঘন্টা দুয়েক পর মা আসলে কালুর বাপ হের মায়েরে কিচ্ছু কয়না। তার দরকার কিছু টাকা। একশ টাকা হাতে পেলেই বাংলা মদ খাইতে চইলা যায়।
বাপে রাইতে কুন সময় ঘরে আসে কালু দেখেনা। কিন্তু বোঝে হের বাপে; মানুষটা বালা না। মায়ে সারাদিন কত কষ্ট করে, এর ঘরে তার ঘরে কাম করে, সেলাই করে আর হের বাপে খালি মদ খায় আর জুয়া খেলে। এইসব ভাবতে ভাবতে বাপের উপর কালুর রাগ বাড়তে থাকে। ভাবে বড় হইলে মা রে নিয়া আলাদা অন্য বস্তিতে থাকবো। বাপের লগে না। কত কি ভাবে সে ঘুমানোর আগে। কখন যে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে সে বোঝে না।
রেহেনার কইদিন ধইরা দেখতাসে হের পুলাডা কেমন জানি বদলাইয়া যাইতাসে। কথা কম কয়। হাসে না বেশী, অন্য পুলাপান দের সঙ্গে খেলতে যায় না। রাতে খাইতে আসে অনেক দেরীতে। রাতে কালু খাইতে আইলে রেহেনা কালুরে জিগায়,
: কিরে হারা দিন কি করস তুই? থাকস কই?
: আম্মা আমি কাম লইসি একটা। তুমারে আর কষ্ট করতে দিমুনা।
: কস কি বাজান? রেহেনা অবাক হইয়া নিজের পুলারে দেহে ।
: হ, আম্মা, আমি বস্তীতে কাম করি। মাস শেষ অইলে আমারে ১৫০০ টেহা দিব?
: কস কি?
: কিয়ের কাম করস?
: ওইজে ল্যাংড়া খালেক আছে না? হের লগে কাম করি?
: কস কি তুই? রেহেনা ভয় পায় এবার।
: হ্যা তো হুনসি ফেন্সী বেঁচে? তুই ওইহানে কি কাম করস?
: তুমি বুঝবানা আম্মা, ডরাইও না। আমার কিচ্ছু অইবো না।
: না বাজান তুই ওই কামে জাইস না । কুনসময় পুলিশ ধরবো ।
: ধুরলে ধরবো। আমি ডরাই না।
: না না আমি তরে ওই কামে দিমুনা। তুই আর যাইবি না।
মা ছেলে দুজনেই চুপচাপ। কেউই কতক্ষন কথা কয়না। ভাত খেতে থাকে একমনে। কতক্ষন পর ঘরের ভাঙ্গা বেড়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
: আইচ্ছা যামুনা কিন্তুক আমারে কউ তুমিও আর রহমত শেখের ঘরে যাইবা না। বস্তীর পুলাপান আমারে খারাপ খারাপ কতা কয়, আমার হুনতে বালা লাগে না মা। এবার রেহেনার হাত ধরে কালু বলে;
: কউ তুমি আর যাইবানা ওই ঘরে।
কালুর এই কথা শুনে শীতল হয়ে বসে থাকে রেহেনা। কি বলবে সে? তার এই বয়সের পুলাডা এতোবড় শরমের মধ্যে ফেলাইয়া দিলো রেহেনারে …
9 Responses to অণুগল্প :: কালু
You must be logged in to post a comment Login