তানুমা পাহাড় ( দূর থেকে তোলা )

 তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

ঈদের চারদিন ” আবা “

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

অবসাদ ক্লান্তি আর প্রবাস জীবনের একগুঁয়েমি দূর করতে ঈদের চার দিন ছুটিতে বেরিয়ে পড়লাম সৌদি আরবের দক্ষীণ –পশ্চিমাঞ্চল ভ্রমনের উদ্দেশ্য। সৌদি আরব প্রচন্ড গরমের দেশ। এই দেশটির ভেতরে এবং বাইরে চারদিকে পাথুরে পাহাড়ে ঘেরা। প্রায় সব এলাকাতেই ছোট বড় পাথরের পাহাড় আর পর্বত শ্রেণী নজরে পড়বে সবার। ঘুমোট হাওয়া সবসময় আগুনের ফুলকির মত শরীরে বিঁধে । সচরাচর গাড়ী ছাড়া কেউ বাইরে বেরোয় না। তবে এই প্রচন্ড গরমের মধ্যে ও নানা স্থানে কাজ করছে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী শ্রমিকের দল। পিচঢালা রাস্তায় তাদের ঘর্মাক্ত অভায়ব দেখে নিজেকে কেমন অসহায় মনে হয় এই মরুর দেশে ।

মুলত সৌদি আরবের সর্বত্র সমুদ্রের বিচের বালির মত বালি বিদ্যমান। আমাদের দেশের মত কাঁচা মাটির দেখা মেলা সত্যি এখানে বেশ দুস্কর। তার প্রধান কারন হচ্ছে এ দেশের সুবিশাল সকল পাথুরে পর্বতমালা। আর এই সকল পর্বতশ্রেণীর বিশাল সমাহার বলতে গেলে সৌদি আরবের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল । আর সেখানে আমাদের ভ্রমনের জন্য গন্তব্য স্থল হচ্ছে ‘আবা’ শহর। আবা শহর চারদিকে পাহাড়  দ্বারা বেষ্টিত । এবারের যাত্রার জন্য বেচে নিলাম সেই স্থান। ভ্রমনের সকল প্রস্তুতি শেষ। আমার সাথে ভ্রমনে যাবে আমার তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু । যারা জেদ্দায় অবস্থান করছে । আর আমি অবস্থান করছি রিয়াদে । ছুটির আগে মোবাইলের মাধ্যমে সব যোগাযোগ করে ঠিক করা হল। তারা আমার জন্য জেদ্দায় অপেক্ষা করতে লাগল ।

সকালে সামান্য কিছু খেয়ে ছুটলাম রিয়াদের আজিজিয়া বাস স্টপে । সেখান থেকে রওনা হলাম জেদ্দার উদ্দেশ্য। সেপকো নামের বিলাশ বহুল গাড়ির টিকেট আগেই কেনা ছিল। তাই সেখানে কোন সমস্যা হল না। স্টপের পাশে একটি স্টল থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে নিলাম। সৌদি আরবে তেলের চেয়ে পানির মুল্য বেশী । যেখানে এক লিটার পেট্রোল পাওয়া যায় ষাট পয়সায় , সেখানে এক লিটার পানির মুল্য প্রায় দুই রিয়াল।গরম আবহাওয়ার কারনে সব সময় পানি সাথে রাখাটা বেশ জরুরী। সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে বাস ছাড়ল জেদ্দার উদ্দেশ্য। ধীরে ধীরে চেনা শহরকে পেছনে ফেলে নতুন আলাদা শহরের দিকে গাড়ী ছুটে চলছে তার নিজস্ব গতিতে। দুই ঘণ্টা পর এক পেট্রোল পাম্পের পাশে গাড়ী থামল সামান্য বিরতির জন্য।সেখানে অবস্থিত হোটেল থেকে সামান্য খাবার খেলাম তবে দাম অনেক বেশী । বেকায়দায় পড়া মানুষ কে ফাঁসিয়ে কেমন ব্যাবসা জমিয়ে তুলেছে একদল ব্যাবসায়ী।

জেদ্দা পৌঁছে দেখি বন্ধুর দল অপেক্ষা করছে বাস স্টপে আমার জন্য। সালাম এবং কুশল বিনিময়ের পর দেখতে লাগলাম , যা যা বলেছিলাম সব নিয়েছে কিনা। দেখলাম সব ঠিকঠাক আছে। সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেলাম সমুদ্রের পাশে এক বিলাসবহুল হোটেলে। খাবারের মেনু ছিল –গ্রিলড চিকেন উইথ স্পেশাল প্রাইড রাইস । এরপর শুরু হল আমাদের মুল ভ্রমন।

বন্ধুর সদ্য কেনা টয়োটা করোলা ২০১১ নিয়ে শুরু হল আমাদের যাত্রা। জেদ্দা থেকে জীপে করে আমরা মক্কা রোড ধরে চললাম। সেই সময় জীপের এম পি থ্রী প্লেয়ারে সুন্দর এবং সুরেলা কণ্ঠে বাজছিল পবিত্র কুরআন তেলোয়াত।  একটানা আধা ঘণ্টা চলার পর সামনের এক চেক পোস্টে এসে আমাদের জীপ থামল। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার  একে একে আমাদের সকলের ওয়ার্ক পারমিট এবং ব্যাগেজ গুলো চেক করল অত্যন্ত ধীরে সুস্থে। কিন্তু আমাদের দেশে হলে কি হত তা ভাবাই যায় না। তারপর পুলিশ বলে দিল শুধুমাত্র মুসলমান যাত্রীরা মক্কারোড ধরে যেতে পারবে । অমুসলিমদের রাস্তা আলাদা । প্রসঙ্গত মক্কা এবং মদীনা সৌদি আরবের এবং ইসলামের অতি পবিত্র দুই শহর। এই দুই শহরে যে কোন অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ । সৌদি আরবে মুসলিমদের ওয়ার্ক পারমিট (কাগজের) এক রঙ্গের এবং অমুসলিমদের অন্য রঙ্গের । আমি এবং আমার সকল সফর সঙ্গী মুসলমান বিধায় আমরা মক্কা রোড ধরে ছুটে চললাম জীপ নিয়ে।

দূরে কাবা শরীফের মিনারের চূড়া দৃষ্টিগোচর হল। আর তখনি মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলাম।লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক…। এরপর ডানদিকের রাস্তা ধরে তাইফ শহরের দিকে ছুটে চলল আমাদের জীপ। রাস্তার উভয় পাশে বিশাল বিশাল মরুদ্যান। দূর থেকে নজরে আসছে আদিবাসীদের উটের কাফেলা।  রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রাস্তার দুই ধারে আইল্যান্ডের উপর সুন্দর বনশাই । সবুজ বলতে এতটুকুই নজরে আসে।

সেখানে সমতল ভুমি আড়াআড়ি ভাবে পরিবর্তিত। রাস্তার উভয় পাশে বিপুল Boulder এবং স্কচ। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট ছোট পাহাড় কে বড় পাহাড় গুলোর বাচ্চা বলে মনে হয়। টুকরো টুকরো শিলা দেখে কারো মনে হতে পারে কিছুদিন পূর্বে বোধহয় শক্ত পাথুরে শিলার বর্ষণ হয়েছে এই অঞ্চলে। দূর থেকে সুউচ্চ পাহাড় গুলোকে মনে হয় ধরনীর বুকে রমনীর স্তনের মত (সাহিত্যের ভাষায় লিখেছি ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থী )

এই সময়ের মাঝে আমরা তাইপ শহরে ঢুকে পড়লাম। রাস্তার পাশের বিলবোর্ড সেকথার জানান দিল । তাইফ শহরের আবহাওয়া সৌদির অন্যান্য শহর থেকে ব্যাতিক্রম। এখানে সবসময় শীতল এবং ঠাণ্ডা হাওয়া বয়। তাইফের ” বন্ধুর” পথে চলা বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু শীতল বাতাস সেই কষ্টকে নিমিষেই দূরে ঠেলে দিল।

কিন্তু কোন পথে আবা যেতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের কারো কোন ধারনা নেই। তাই রাস্তার পাশের এক পেট্রোল পাম্পে অবস্থিত বাংলাদেশীর সহযোগিতা নিতে হল। তিনি আমাদের ভ্রমনের কথা শুনে বেশ খুশী হল এবং আমাদের কে একপ্রকার জোর করে হালকা স্ন্যাকস খাওয়ালো। সেই বন্ধুর সামান্য সময়ের আতিথিয়তা আমাকে বেশ মুগ্ধ করল। তার প্রদর্শিত রাস্তা ধরে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হল। বেশ ভালো লাগছিল সবার । কাজ আর ব্যাস্ততার মাঝে এমন সফর মন্দ নয়। পরিকল্পনা হল প্রতি বছর এমনি করে কোথাও না কোথাও যাওয়া যাবে। আমাদের জীপ ছুটে চলছে তাইফ বাহা পর্যটন রোড ধরে নিজস্ব গতিতে।

তানুমা পাহাড় ( দূর থেকে তোলা )

কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের জীপ রৌদ্র দগ্ধ পাহাড় শ্রেনীর বালুকাময় রাস্তায় এসে পড়ল। সেখানে অবস্থিত বেশ কিছু কূটীর দেখতে পেলাম। যা বেশ প্রাচীন শিলা খন্ড দিয়ে নির্মিত। মাঝে মাঝে কিছু মাঝরার (শস্য ক্ষেত ) দেখা মিলল। সেখানে কিছু সবুজ নজরে এল। বাংলাদেশী শ্রমিক এবং অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা  মনের আনন্দে কাজ করছে। আমরা তাদের উদ্দেশ্য হাত নাড়লে প্রতি উত্তরে তারা ও হাত নেড়ে অভিবাদন জানাল। পাহড়ী এসব দৃশ্য দেখে আমি এবং আমার বন্ধুরা বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম । মনির তো বলে শালা জেদ্দায় না ফিরে এখানে থেকে গেলেই হয় । গরম কালের শেষ সময় তাই বেশির ভাগ চারণভূমি বাদামী রঙ ধারন করে আছে রোদে পুড়ে।সেসব চারন ভুমিকে পেছনে ফেলে আমাদের জীপ ছুটে চলছে।

শহরতলী থেকে দূরে বলে রাস্তা গূলো তেমন সংস্কার নেই। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা রাস্তা গূলো মুল সড়কের সাথে সংযুক্ত । উঁচু নিচু টিলার মাঝ দিয়ে সমানরাল রাস্তা সাপের মত একেবেকে চলচে গেছে পাহাড়ের বুক ছিড়ে। রাস্তার পাশে মরূদ্যানে বেশ কিছু সৌদি উটের রেস খেলছে জটলা হয়ে।

দীর্ঘ ছয় ঘন্টা পর আমরা এসে পৌঁছে  গেলাম পর্যটন শহর বাহায়  বন্ধু মনির ডিজিটাল ক্যামেরায় একের পর এক ছবি তোলায় মগ্ন। বেশ বড় হাইওয়ে রোডের পাশে রাতযাপনের জন্য পেয়ে গেলাম রেস্ট হাউস। দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তিতে সকলে বেশ ক্লান্ত। রেস্ট হাউসে পৌঁছে সবাই ছুটলাম শাওয়ার নিতে।

সকালে উঠে এক পলকে চেয়ে রইলাম দূরের  সবুজ পাহাড়ের দিকে। আমরা আসার আগে বিভিন্ন জার্নাল এবং ওয়েবসাইটে  আলবাহা সম্পর্কে জেনেছিলাম। সেখানে আছে সুদ্রুশ্য জলপ্রপাত, এবং আরো অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত স্থান। সে এলাকার একজন লোক আমাদেরকে প্রথমে রাগদান বন দেখতে বলল। আমরা তার কথামত তাকে সঙ্গে নিয়ে সেই রাগদান বনের দিকে চললাম। তার নির্দেশিত পথে আমরা পাহাড়ে চড়তে লাগলাম। পাথুরে পাহাড় ঘেরা সৌদি আরবে চিরসবুজ এমন একটি বন এবং পাহাড় থাকতে পারে যা আমাদের কারো কল্পনাতে ছিল না। পাহড়ী রাস্তার পাশে দুই জন সৌদি চা পানে মগ্ন ছিল আমরা তাদের কাছে গেলে তারা সানন্দে আমাদের আপ্যায়ন করে এবং ভ্রমনে আমাদের সঙ্গী হয়। আমাদের সামনে সুন্দর বন বৃক্ষ রাজি যার অনেকগুলো আমি চিনি না। আরো সামনে বিস্তৃত বনাঞ্চল আর পাহাড়ী পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । আমাদের সাথে থাকা সৌদিরা  বলল এটাই হল “রাগদান”। সামনের সম্পূর্ণ পাহাড়ী এলাকাকে সকলে রাগদান বলে জানে।

ছবি ঃ দি এইন ভিলেইজ

কিন্তু জলপ্রপাতের দেখা না পেয়ে আমরা হতাশ হয়ে যখন ফিরছি তখন একজন বিদেশী টুরিস্টের সাথে দেখা। তিনি আমাদের কথা শুনে বললেন –হতাশ হবার কোন কারন নেই । আমি তোমাদের সেই বিখ্যাত “খারারা” ঝর্নার কাছে নিয়ে যাব। আমাদের হতাশ হওয়া মুখগুলো নিমিষে আনন্দিত হয়ে উঠল।  

সে আমাদের নিয়ে চলল শপিং সেন্টারের পাশ দিয়ে শহরের কোনার দিকে । সে ইংরেজিতে অত্যন্ত দক্ষভাবে কথা বলে । তারপর একসময় অতি আনন্দের সাথে হাত নাড়িয়ে দেখাল ঝর্না টাকে । আরবিতে যার নাম হল “শালাল”। কিন্তু তিনি আমাদের বললেন তোমরা কিন্তু ঝর্নাটা এখন দেখতে পাবে না কারন এখন বৃষ্টি এবং পানি প্রবাহ নাই । সেই হিসাবে এটা এখন মৃত একটি ঝর্না ।

আমি গ্রামের কয়েকজন কে বললাম এখন কি বৃষ্টি নামবে আজ সন্ধায় বা এই কয়েকদিনে। কয়েকজন গ্রামবাসী উত্তরে বলল। গত গ্রীষ্মের সময় সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছিল। ঝর্না দেখে ও না দেখার অতৃপ্ততা নিয়ে মন খারাপ হল। তবে সেটা সাময়িকের জন্য। হঠাত করে আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নামল অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমরা ছুটে গেলাম সেই ঝর্নার পাশে । বেশ ক্ষীণ ধারায় জল্প্রবাহ হচ্ছে। মরুর দেশে এটাই অনেক সৌন্দর্যের । সন্ধ্যা হয়ে গেল , সেদিনের মত হোটেলে ফিরে এলাম । সবাই খুব আনন্দিত । এটা তাদের চোখ দেখে বুঝা গেল।

পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে আবার লম্বা জার্নি । নরম ঘাসের চাদরের মত মসৃণ পথ ধরে আমাদের জীপ ছুটে চলছে। আর সেই রাস্তা ছিল সারাওয়াত পর্বত শ্রেণীর মাঝ দিয়ে। সে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা । আমরা পেছনে ফেলে গেলাম কিছু গ্রাম, ছোট শহর । অদুরে দেখতে পেলাম ভীতসন্ত্রস্ত পর্যটকের  দল তাকিয়ে আছে সেই পাহাড়ের দিকে চৌম্বকের মত দৃষ্টি নিয়ে।

গ্রামের পর গ্রাম শহরের পর শহর পেরিয়া আমাদের জীপ ছুটে চলছে। রাস্তার পাশে লক্ষ্য করলাম, প্রাচীন শিলার তৈরি ঘর , সবচেয়ে সৌন্দর্য হল ঘর গুলোর কালার । কোনটি ক্যান্ডি গোলাপি,কোনটি ক্রিম, পীচ, লেবু ,পুদিনা, এমন নানা রঙ্গে সজ্জিত। পাহাড়ের পাদদেশের সেই ঘরগূলো যেন একটার উপর একটা নির্মিত। দূর থেকে মনে হয় একটার উপর একটা ভেঙ্গে পড়েছে। কিছু গ্রামবাসী ভয়ে উপরের দিকের ঘরগূলোর কাছে যায় না বলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই শহরের নাম “তানুওমা’। এই শহরটি পর্বতের উপর একটি ম্যাচবাক্সের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর ভাবে।

এর ছয় ঘন্টা পর আমরা অবশেষে আবা এসে পৌঁছলাম । আবা হচ্ছে আসির সহরের রাজধানীর মত। এই এলাকাকেই সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চল বলা হয়। পাহাড়ে ঘেরা এই শহর অনেকটা রহস্যময় কুয়াশার মত মনে হয়। সমুদ্রের পাশের আবা শহরকে অনেকটা সপ্নের শহরের মত লাগে।

এই অঞ্ছলের সৌন্দর্য অনন্য। খাড়া পাহাড়, ঘন সবুজ গাছপালা এবং শান্ত খাল ও বৃত্তাকার পাহাড়শ্রেণী । ঈজিল্যান্ড নামের এক লেখক লিখেছেন –ঈশ্বর যেন সবুজ শ্যামল শহর মরুর দেশে নিজের জন্য বানিয়ে রেখেছেন। (স্থানীয় প্রবাদ)

আসির শহরে শাংরিলা হছে সবকিছু দেখার স্থান। এক অনুসন্ধান কারী পর্যটক কবি বলেছেন –” এখানকার আবহাওয়ার সাথে মানুষ গুলো বেশ কমনীয়, এবং সদা হাস্যময়।

সত্যি আবা হচ্ছে সৌদি আরবের মত দেশের জন্য এক সমৃদ্ধ পর্যটন স্থান। তাই এখানে ভ্রমনে অনেক উৎসাহিত হবেন অনায়াসে। সে ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে।

ছয়শত ফুট গভীর একটি গিরীখাদের মাঝে একটি গ্রাম দেখে আমি অনেকটা বিস্মিত হয়েছি। এটাকে ঝুলন্ত গ্রাম বা হাবালা বলা হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে আল সোদা পরবত মালা স্থানীয়দের হিসেব মত ৩১০০ মিটার উপরে অবস্থিত এবং এক মনোরম সৌন্দর্য বিরাজ করছে। তাই আমি ভাবি কেন কবি এইচ,এসটি  জন পিলবয় বলেছেন – ” এই শহর হচ্ছে আরবের মেরুদণ্ড “। কবি যথার্থই বলেছেন ।

সেই সাথে আমরা আমাদের ভ্রমনের শেষ পর্যায়ে এসে গেলাম । স্থানীয় একদল লোক আমাদের অন্য এক পথ দিয়ে খুব সহজে জেদ্দা যাওয়া যাবে বললে , আমরা সেই  পথ ধরে ছুটলাম। আমি এবং আমার বন্ধুরা সৌদি আরবে অবস্থান সময়ের শ্রেষ্ঠ ভ্রমন করলাম। আগামীতে হয়ত এই চার অভিযাত্রী অন্যত কোন স্থানে যেতে পারি । সেই সময় সকলে হয়তো নাও থাকতে পারি। আমাদের জীপের গতি সৃতি গুলোকে পেছনে রেখে যাচ্ছে অতি দ্রুততায়। পেছনে পড়ে রইল বিশাল সৌন্দর্যময় পাহাড় শ্রেনী । হয়তো আর কখন এই পথে আসা হবে না , তবে জীবনে চলার পথে এই অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দেবে। জীপে মৃদু মৃদু শব্দে গান বাজছে –তোমরা কি ভুলে গেছ মল্লিকাদের নাম……………

বিঃদ্রঃ এই ভ্রমন কাহীনিতে কিছু জায়গার নাম হয়ত সম্পূর্ণ সঠিক  নাও হতে পারে , এবং আমি যেসব ইতিহাসের বর্ণনা দিয়েছি তার সব স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনে । সুতরাং ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। আমি মুলত গল্প এবং কবিতা লিখি এই প্রথম আমি কোন ভ্রমন কাহীনি লিখলাম সম্পূর্ণ নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। এতে করে যদি কেউ সামান্য আনন্দ পান তাহলেই আমার চেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। এই ভ্রমনের আমার সঙ্গী মনির, আশিক, সুমন তাদের জন্য রইল আমার পক্ষ থেকে অনেক ভালবাসা। যদিও বন্ধু মনির তার মেমরিকার্ড জটিলতায় সকল ছবি ডিলিট করে ফেলেছে। ভাগ্যিস আমি নিজের ই৫২ মোবাইল দিয়ে কিছু ছবি তুলেছিলাম সেগুলো এখন আমাদের কাছে মুল্যবান। তবে কোন ছবিতেই আমাদের কেউ নেই।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


11 Responses to ঈদের চারদিন ” আবা “

You must be logged in to post a comment Login