এ.বি.ছিদ্দিক

মায়া

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

সারাদিন ছোটাছুটির পরে গোসল খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তরীর ভালবাসার অত্যাচারে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে নাকি অপরূপ জ্যোৎস্না আর কুয়াশার মাখামাখি। এই হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে তার সাথে হাতে হাত ধরে জ্যোৎস্না দেখতে হবে, মাঝে মাঝে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে হবে আর মধুর ভঙ্গীতে বলতে হবে – এই শোন তোমাকে আমি ভালবাসি, I LOVE YOU, সত্যিকারের আই লাভ ইউ, মিথ্যাটা না। এসব ছেলেমানুষির কোন মানে হয়? আরে বাবা, রাতে ঘুম ভেঙে গেছে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও সেটা কি কম ভালবাসা? এসব নিয়ে তাকে আবার কিছু বলাও যাবে না, তিনি আয়োজন করে কান্না শুরু করবেন। সে কান্না থামাতে অন্তত কয়েক ঘণ্টা লাগবে। তার চেয়ে বরং বাইরে গিয়ে জ্যোৎস্না দেখাটাকেই যুক্তিসংগত মনে করলাম।

বাইরে গিয়ে আমার রাগ হবার কথা কিন্তু কেন জানি রাগ হচ্ছেনা বরং ভাল লাগছে। সত্যি তো অপরূপ জ্যোৎস্না আর কুয়াশার মাখামাখি। আমি ইচ্ছা করেও তরীকে রাগ দেখাতে পারলাম না, ওকে জড়িয়ে ধরলাম, আদর করলাম। চারিদিকে সুনসান নীরবতা, তার মাঝে আমরা দুই মানব প্রাণী। নিজেকে কেন জানি আদি পিতা আদম আর তরীকে হাওয়া মত লাগছিল। নীরবতা ভঙ্গ করে তরী ই প্রথম বলল

–         এই?

–         বল।

–         কেমন লাগছে?

–         খুব সুন্দর।

–         শীত লাগছে না?

–         হালকা হালকা।

–         চল না হয় ঘরে যায়।

বাইরে এসেছি পাঁচ মিনিট ও হয়নি অথচ এর মধ্যে ও বলছে “ চল ঘরে যায়” আমি অবাক হবার ভঙ্গিতে বললাম

–         কি?

তরী হা হা করে হাসি শুরু করে, সেই হাসি সবুজ মাঠ পেরিয়ে প্রতিধ্বনি হয়ে হাসি হয়ে ই ফিরে এলো। অদ্ভুত এক যাদুর ছোঁয়া আছে সে হাসিতে। মনে পড়ে যায় কলেজ জীবনের শুরুতে একদিন তার এই হাসি দেখে প্রেমে পড়ে যায় আমি, এরপর ভালবাসার ফাঁদে আটকা পড়ে গেলাম, আর বের হতে পারিনি, বের হবার চেষ্টাও করিনি কখনও। তারপরও সমস্ত জীবনে বহুবার অখুশি করেছি তরীকে, অনেক কাঁদিয়েছি। আজ আর ওকে কাঁদাতে ইচ্ছা হচ্ছেনা। তরীকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। ও এখন ঘুমিয়ে, আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। বাইরের থেকে ঘরে ফেরার সময় তরী আমার কানে ফিসফিস করে যা বলে তা শোনার পর আর ঘুম হয়না আমার, আমি নাকি বাবা হব, তরী হবে মা। আমার প্রচণ্ড খুশি হবার কথা, কিন্তু কেন জানি খুশি হতে পারছিনা আমি, অস্থির লাগছে।বাইরে উথাল পাতাল চাঁদের আলোর ঢেউ, কুয়াশারা সে ঢেউয়ের গতি কমাতে পারছেনা। তাই দেখে আমার মনে প্রশ্ন এলো, কোন এক শুভ খনে আমার মাতা ও কি মধুর ভঙ্গিতে আমার পিতাকে লাজুক হেসে বলেননি “ ওগো আমাদের ঘরে বিশেষ অতিথি আসছে”। এই একই কথাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রংহীন কিংবা রং মাখিয়ে বলেছিল তার মা তার বাবাকে, কিংবা তারও মা তার বাবাকে, অথবা তার মা তার বাবাকে, সেই কথাটা আজ তরী আমাকে বলল। একদিন কালের চাকা ঘুরে সে কথা বলবে আমারই রক্তের, আমারই ভালবাসার কেও। তখনও চাঁদ উঠবে, টিনের চালে বৃষ্টি পড়বে, কোন এক তরী তার বরকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বলবে- ওগো আমি মা হব। কিন্তু সেদিন আমি থাকবনা। কোন মানে হয়?

অঃটঃ আমি বিয়ে করিনি। আমার বয়স মাত্র একুশ। গল্পের সাথে আমার মিল খুজলে বড় লজ্জার বিষয় হবে আমার জন্য।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


10 Responses to মায়া

You must be logged in to post a comment Login