মুক্তগদ্য: দুয়ারে হাজার তারার পুকুর
ঘোরলাগা সন্ধ্যেটা টুপ করে ডুব দিলো রাতকুমারির ফাঁদ পুকুরে
যে পুকুরে হাজার তারার মিছিল আগোছালো হয়ে রয়। গায়ে ‘গা’ না লাগিয়ে, আঁচ বাঁচিয়ে পাশ কাটিয়ে শ্বাস লুকিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে আঁকে নিজস্ব পৃথিবী।
সেই পুকুরে ডুব দেয় নির্ঘুম শাখ-পাখালি। বৃক্ষরাজি পরশ রুমাল হাতে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর জমা করে যায় বিধাতা পন্ডিতের পাঠশালায়।
সেই রকম সন্ধ্যাটাকে রাতকুমারির পুকুর ঘাটে রেখে তোমার দরজার কড়ায় দিলাম টোকা।
আশপাশটায় মাতাল করা ধূপের গন্ধ! ধোয়া বুনেছে দিগন্তজোড়া জালের আস্তরণ।
আলতো চালে, ঢিমে তেতালে, নীলরঙা শাড়ির আঁচলে গোছা চাবি ফেলে, ফেললে পলকের আলো, ভাবলাম কি হলো!
-হলে কি অবাক? জমিন মনের ঘরে কি রয়ে গেছে এখনও পুরোনো দহন দাগ? চোখের মনি নড়ে গিয়ে তোমার ডাকলে আমায় অন্দরে।
ভরা পুকুরের হাজার তারার মতো গা বাঁচিয়ে পা ফেললাম তোমার চৌকাঠের উপর।
পালকসম চার পায়ের বিছানা তখন অগোছালো; ধূপ সন্ধ্যের ঘুম তোমার পুরোনো অভ্যেস; ফেলে দিতো পারোনি; এখনও তাই নিয়ম করে পাশ ফেলে রাখো প্রদীপ সন্ধ্যেটিকে।
তোমরা বার হাতের শাড়ী, হাজার কথার নারী, তাই সময় যখন কাটছে কিংবা যাচ্ছে কেটে নিশ্চুপতায়! বোধকরি ভাঙ্গতে তন্দ্রা কণ্ঠে খেললে ঝরনা কথার সুর
-এদ্দিন পর কেন এলো? তেষ্টা মেটাতে?
– দেখো না হাজার তারার পুকুরে তো কম পানি নেই; তবুও তেষ্টা মেটেনা। ভেতরে ক্যামন যেন শূন্য শূন্য লাগে!
-তাই ভরাতে এলে
-সাগরের অপরিসীম জলরাজ কে কি হাজার কলসী পানি ঢেলে ভরাতে পারবে?
-তবে কেন এলে ক্ষুদ্র নদীর ধারে
-এলেম বিন্দুকে পূর্ণ করতে
-আমি বুঝি বিন্দু?
-চরণ ফেলে হেটে যাওয়া পথের পর পথ কিংবা ফেলে যাওয়া তিন-চার ক্রোশ পথে পায়ের চিহ্ন রেখে গেলে উল্টো পথে ফিরে এসে কি একই রকম পাওয়া যায়?
-তারা যতই বিশাল হোক আকাশ ছাড়া তার কোথাও ঠাই নাই
-দহন দিয়েছিলে আনন্দ জমা রেখে, অশ্রু দিয়েছিলে হাসি জমা রেখে আর এখন এসেছো বিন্দু পূর্ণ করতে? পারো শুধু ফস্ করে জ্বলে উঠতে কিন্তু একটানা জ্বলে যেতে পারোনা; এরই নাম পুরুষ!!
দূরে আযানের ধ্বন্নি কাপিয়ে দিলো শ্যাওলা দেয়াল। আমি নিরবতা পাশ পকেটে ফেলে কথার আগুন গোলা নিলাম হাতে। ফিরে যেতেই হবে। অভিমানে কে কবে কষ্ট আঁচ করতে পেরেছে?
টিকটিকিটা হঠাৎ শব্দ করে উঠলো
যাও পথিক এ গাঁয়ে ঘুড়ি উড়েনা নাটাই খেয়েছে ঘুনে।
হাওয়া থেমে আছে আজ শ্রীলক্ষীর দুয়ারে। তেতো রয়ে ছিলো যে বিষ তা চেখে দেখা হয়নি। ছিলো আফসোস পূর্ণ হলো এই রাতে। শ্রীলক্ষী অভিমানী আজ করলো না কানাকানি, কিছুতেই ভুলের কথা চুলের মতো সরিয়ে দিতে পারলাম না কপাল থেকে কে যেন রেখেছে একে অভিমানী প্রতীমা।
যার অজানা দহন নামা ভাগ করে দিলো আমার গায়, আমি তাই নিয়ে পথে নামলাম। হাজার তারার পুকুর ঝুলছে মাথার উপর আজ। আহা ! যদি আজ তারা পড়তো খসে, ভ্রান্ত রসে উঠিয়ে নিয়ে যেত আমায়, থাকতাম ঝুলে তোমার চোখ আঁচলে আর তাড়াতে পারতে না হায়!
16 Responses to মুক্তগদ্য: দুয়ারে হাজার তারার পুকুর
You must be logged in to post a comment Login