শাহেন শাহ

রাজাকার কামরুজ্জামান সম্পর্ক জানুন

রাজাকার কামরুজ্জামান সম্পর্ক জানুন
Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

imagesস্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন তিনি। শীর্ষ স্থানীয় শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষকসহ বরণ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য গঠিত ‘আলবদর বাহিনী’ সংগঠিত করাসহ কামারুজ্জামানের দুষ্কর্মের বর্ণনা ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট’-এ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামানের স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা ও যুদ্ধাপরাধের বিবরণসমূহ তৎকালীন সংবাদপত্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে। ৭১ সালে কামারুজ্জামান জামাতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রথম আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠে, যার প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি।

’৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ২৫-তম আজাদী দিবস উপলক্ষে গত শনিবার মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক কামারুজ্জামান। সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন বক্তা ‘দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দুশমনদের’ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।

জামালপুরে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিসেবে আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জামাত নেতৃত্ব হৃদয়াঙ্গম করতে পারে যে, ছাত্রসংঘকে তারা সশস্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাধারণ তৎপরতা চালানো ছাড়াও বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য বিশেষ স্কোয়াড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

প্রথমত, পরীক্ষামূলকভাবে গোটা ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন কামার”জ্জামান। কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে মাসখানেকের মধ্যেই ময়মনসিংহ জেলার সব ইসলামী ছাত্রসংঘ কর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (তথ্য সূত্র : একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র, ঢাকা ১৯৮৭, পৃষ্ঠা : ১১১-১১২)

শেরপুরের একজন শহীদের পিতা ফজলুল হক গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার ছেলে শহীদ বদিউজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসের একদিন তার বেয়াইয়ের বাড়ি থেকে কামার”জ্জামানের নেতৃত্বে ১১ জন লোকের একটি দল ধরে নিয়ে যায়। বদিউজ্জামানকে ধরে আহমদনগর পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর শহীদের বড়ো ভাই হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ১৮ জন আসামির অন্যতম ছিলেন কামারুজ্জামান। মামলাটির নম্বর-২ (৫) ৭২। জিআর নং-২৫০ (২) ৭২।

শেরপুর জেলার শহীদ গোলাম মোজাফার চাচাতো ভাই শাজাহান তালুকদার জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২৪ আগস্ট আলবদররা গোলাম মোজাফাকে শেরপুর শহরের একটি সড়ক থেকে ধরে জোরপূর্বক তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শেরপুর শহরের সুরেন্দ্রমোহন সাহার বাড়িটি দখল করে আলবদররা তাদের ক্যাম্প বানিয়েছিল। সে ক্যাম্পে গোলাম মোজাফাকে ধরে নিয়ে আলবদররা তার গায়ের মাংস ও রগ কেটে, হাত বেঁধে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় শেরী ব্রিজের নিচে। সেখানে তারা গুলি করে হত্যা করে গোলাম মোজাফাকে। কামার”জ্জামানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল। শহীদ গোলাম মোজাফার হত্যাকাণ্ড যে কামার”জ্জামানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল এই তথ্য শেরপুরের আরো অনেকেই দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শেরপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি শহীদ পিতার সন্তান তাপস সাহা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কামার”জ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আলবদর ক্যাম্পে নারী-পুর”ষ-যুবক ধরে নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার চালাতো। আলবদররা তাদের চাবুক দিয়ে পেটাতো। কামার”জ্জামানের বাহিনী শেরপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার মজিদকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল টর্চার ক্যাম্পে। সকালে ধরে নিয়ে পুরো দিন তাকে টর্চার ক্যাম্পের ‘অন্ধকার কক্ষে’-এ আটকে রাখে।

১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে খোলা গায়ে, মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে-মুখে চুনকালি মাখিয়ে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে কামার”জ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর শহর প্রদক্ষিণ করে।

শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জিয়াউল হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট বিকেল ৫টায় কামাড়িচরে তার নিজের বাড়ি থেকে গাজীর খামার যাওয়ার সময় ৩ জন সশস্ত্র আলবদর তাকে ধরে শেরপুর শহরে আলবদর টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনি সেই ক্যাম্পে কামারুজ্জামানসহ তার সহযোগীদের দেখেন। তারা জিয়াউল হককে দুদিন টর্চার ক্যাম্পের ‘অন্ধকার কক্ষে’ আটকে রাখে। এরপর শেরপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যথায় তারা তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।

শেরপুরের জাতীয় পার্টির নেতা মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক হীরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই কামার”জ্জামানের সহায়তার পাকিস্তানিরা তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে তারা ৫টা বাঙ্কার করেছিল। তার বাড়ির লিচু গাছের নিচে মানুষ ধরে এনে হত্যা করেছে।

অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী, শেরপুরের নকলার হাজি জালাল মামুদ কলেজের শিক্ষক মুসফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনআনি বাজারের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লুট করা হয়েছিল কামারুজ্জামানের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে।

শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদর কর্তৃক নিরীহ লোকজনদের ধরে আনা এবং তাদের লাশ বহন করার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর একজন ড্রাইভার জানিয়েছেন, কামারুজ্জামান নকলার মুক্তিযোদ্ধা হন্তারবাড়ি পোড়ানোর জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে দেখিয়ে নিয়ে যান। তখন হন্তারবাড়ি থেকে কামারুজ্জামান প্রায় ১০০ মন চালও লুট করেন। এছাড়াও কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা সাধারণ মানুষের গর”, ছাগল ধরে নিয়ে আসতো এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিসহ অন্যান্য জমি-সম্পত্তি জোর করে দখল করে নিতো বলে জানিয়েছেন এই ট্রাক ড্রাইভার। কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে সেই সময় ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।  তথ্যসূত্র সৌজন্যে: এস্কিমো ব্লগার।

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login