জসিম উদ্দিন জয়

জননী ও জন্মভূমি

Decrease Font Size Increase Font Size Text Size Print This Page

‍ami akla

– জসিম উদ্দিন জয়

বিস্তৃর্ন নীল আকাশের সূয্যটা লাল হয়ে পশ্চিমা আকাশে হেলে পরেছে। কিছুক্ষন পর স্তব্ধ হবে আকাশের রংধনু, স্বাধীন পাখীরা ফরিে যাবে নীজ গৃহ।ে মাটরি গন্ধ বুকে মখেে সারাদনিরে ক্লান্তি নয়িে কৃষক লাঙ্গল কাধঁে ফরিে যাচ্ছে ঘর।ে নদীর ধারে আকাঁবাকা পথ মনে করিয়ে দেয় জীবননান্দ দাস এর রূপসী বাংলার কথা । “আবার আসিবো ফিরে ধানসিড়িঁ নদিটির তীরে” হয়ত মানুষ নয় শংকচিল শালিকের বেসে” এই সেই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুফিয়া কামাল, জসীম উদ্দীন, লালনের মতো হাজারো গীতি কবি, যারা ভালোবেসেছেন মা, মাটি দেশকে। মায়ের ডাকে সারা দিয়ে ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সাতরিয়ে নদী পার হয়েছিলেন। আর এই মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৫২ তে সালাম, রফিক, সফিক, জব্বার, অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন। এটা বিশে^র জন্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। আজ বিশ্বের মর্যাদার আসনে বাংলা ভাষা। আর এই জন্মভ’মি মা‘কে রক্ষা করার জন্য ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছিলেন, হারিয়ে ছিলেন হাজার মা বোনের সম্ভ্রম। অথচ আজ এই যান্ত্রীক সভ্যতার যুগে, মা ও মাটির কথা কেউ ভাবে না। সামন্য নিজের স্বার্থটুকু দেশের জন্য বিসর্জন দিতে পারে না। ইত্যাদি নানা কথা ভাবতে ভাবতে লাল সুর্য্যটা পশ্চিমা আকাশ থেকে লুকিয়েই যাবে। ঠিক যেভাবে আমরা অন্যায় দেখলে উট পাখীর মতো মাথাটাকে লুকিয়ে ফেলি। যাই হোক প্রকৃতির নিয়ম সত্য এবং সুন্দর । মানুষের নিয়ম স্বার্থের বন্ধন। নেমে এলো অন্ধকার। তবে বেশিক্ষন নয় জোৎ¯œায় আলোয় আলোকিত করে আকাশে উদয় হলো চাঁদ। নদীর রূপ পাল্টে গেলো । চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে নদীর পানি। সামনে বৈশাখ মাস কখন আবার চাঁদ লুকিয়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে বলা যায় না। তরিঘরি করে হাটছি বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। গ্রামে বাড়ীতে বেড়াতে এসেছি প্রায় দের যুগ পড়ে। শহরের যান্ত্রীক জীবন মানুষকে বড়ই নিষ্ঠুর করে তুলেছে। সেই নিষ্ঠুরতা আমাকে গ্রাস করেছিলো। আমি কোন কিছু বুঝবার আগেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এতটাই স্টান্ডবাই সংসার করেছি যে নিজের শেকড় নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে গিয়েছি। সর্বদা নিজের স্ত্রী-সন্তানকে খুশি করা, আয় রোজগার করা ইত্যাদি নিয়ে তাদের সুখ শান্তি জীবন গড়া ইত্যাদি নিয়ে বেশী ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছি । আজ বড়ই নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে নিজেকে। যা হোক ভাবতে ভাবতে নদীর ধারে গায়ের একেবেকে মেঠো পথ দিয়ে পথ চলছি। সত্যই বিধাতা বড়ই সুন্দর করে এই জন্মভুমিকে সৃষ্টি করেছেন। ঠিক যেনো মায়ের আদর আর ¯েœহ মাখা আমার জন্মভুমি। অথচ শহড়ের যান্ত্রিক সভ্যতার মানুষগুলো বড়ই বিচিত্র জীবন যাপন করে, যারা দেশের ভাগ্যবিধাতা তারা ক্ষমতা লোভ ছাড়া আর কিছু বোঝে না । তারা দেশকে ভালোবাসতে পারে না । তারা জন্মভুমিটাকে নিয়ে শুধু রাজনীতি করে । আর নদীনালা খালবিল ভরাট করে চলে কোটি কোটি টাকার ল্যান্ড ব্যবসা । প্রকৃতির এই সৌন্দয্য নীলাভুমিকে ধ্বংস করে তারা টাকার পাহাড় করার কাজে ব্যাস্ত। রাতের অন্ধকার চলে নীলনকশার রাজনীতি। ইত্যাদি নানা কথা ভাবছি আর হাটছি, অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। হঠ্যাৎ অন্ধাকার আকাশের চাঁদটি কোথাই যেলো লুকিয়ে গেলো। কালবৈখাখী ঝড়ের আলামত অনেকটা আমাদের দেশের রাজনীতি ব্যক্তিদের মতো হরতাল আর অবরোধ। ঠিক তাই ঘটলো পথ হারিয়ে ফেলেছি। অন্ধকারে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে। কালো কুচকুচে অন্ধকার আর নদীর শোঁ শোঁ বাতাস, শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিলো। শহরে যান্ত্রীক সভ্যতায় বড় হয়েছি এই ধরনের পরিবেশ আমার কাছে নতুন। নদীতে নিবু নিবু বাতি জালিয়ে অনেকগুলো নৌকা এপাড় ওপার পাড়ি দিচ্ছে। কোন কোন মাঝি মনের সুখে ভাটিয়ালি আর মুশির্দী গানে ঝংকার তুলছে। বড়ই সুন্দর, ভালো লাগছে, গল্প কবিতায় পড়েছি কিন্তু আজ বাস্তবে দেখলাম। ভালো লাগলে কি হবে মনে মনে ভয় লাগছে এই কালো ঘুটঘুটে অন্ধকারকে। রূপসী বাংলার রূপসী চাদঁটি কোথায় হারিয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে ঐ দূরের রূপসী চাদঁটি আমার মা , যে আমাকে শৈশবে এমনটি করেই আলো দিয়েছিলো আমার পথ চলার মাঝে। কিছুদূর এগুতেই নদীর শো শো বাতাস আমার গায়ে লাগছে না। আমি এক বাশঁবাগানে মাঝে হারিয়ে গিয়েছি। বাঁশবাগানের কটমট শব্দে কি যেনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরছে। একঝাক বাশেঁর ধাপ্পাস ধাপ্পাস শব্দে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আমার চিৎকার কে শুনে। দৌড়ে একেবেকে কোন রকম বাশঁবাগান থেকে বের হলাম। সামনে বড় একটি বিল। বিলের ধারে খোলা বড় জায়গা সেখানে একপাশে একটি কুড়ে ঘর। চিনে ফেলেছি বিল আর বিল নেই গড়ে উঠেছে হাট বাজার। একপাশের সেই কুড়ে ঘরটি ঠিকই আছে তবে তার ধরন পাল্টে পাকা ঘর হয়েছে। কুড়ে ঘরের পাশে থাকা বিশাল আকৃতির বটগাছটি ঠিকই আছে, শুধু বয়সের ভারে ঝুলে পরেছে ডালপালাগুলো। আচমকা আরেকটা বাতাসের ঝাপটায় গর্জে উঠলো আকাশ। মনের মাঝে খুব কনফিডেন্স বৃষ্টি নামবে ১০০% শিউর। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার খুব খারাপ হবে। ঠান্ডা লাগলে আমার বুকে ব্যথা অনুভত হয়। একদিন তখন আমি ৮ম শ্রেণী ছাত্র। বর্ষাকাল মা আমাকে স্কুল থেকে নিতে এসেছে। ভুলে সেদিন ছাতাটা বাসায় রেখে এসেছিলো। মাঝপথে হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। মায়ের শাড়ীর আচল দিয়ে আমাকে ডেকে ফেললো এতটুকু বৃষ্টির ফোটা আমার মাথার উপর পরতে দেয়নি মা। অথচ “মা” বৃষ্টিতে ভিজে চুবচুব হয়ে গেছে। বৃষ্টির ভিজার কারণে মা‘কে দুদিন ধরে বিছানায় পরে থাকতে হয়েছে আসুস্থ হয়ে। শুধু বৃষ্টি নয় এতটুকু রৌদের খরতাপ আমার গায়ে লাগতে দিতে না । পেপারের কাগজ, ছাতা, অথবা মায়ের হাতব্যাগ কিছুই না পেলে শাড়ীর আচল দিয়ে সবসময় আমাকে রোদ থেকে রক্ষা করতো মা। আজ আমি সব বুঝি, টাকা নামের যন্ত্রটা আর বউয়ের স্বার্থের ভালোবাসা আজ আমাকে সবকিছুই বুঝতে বাধ্য করেছে। মায়ের গভীর মমতা আর ত্যাগের কথা সব কিছুই খুব বেশী বেশী মনে পরছে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বৃষ্টির আগমন। ঝরঝরে বৃষ্টির ঝাপটায় শেষমেষ আমাকে ভিজিয়ে ছারলো। তরিঘরি সেই বয়স্ক বটবৃক্ষের নিচের বাড়ীটার বারান্দায় আশ্রয় নিলাম। তখন আমি সম্পূর্ন ভিজে গেছি। স্বপন চাচাঁকে চিৎকার করে ডাকছি “ স্বপন চাচাঁ ও স্বপন চাচাঁ কোথায় তুমি ? কে শুনবে আমার ডাক ও বাড়ীতে কেউ থাকে না । স্বপন চাচাঁ মারা গেছে তাও প্রায় দু‘বছর হলো। তার ছেলেমেয়েরা এই বাড়ীতে থাকে না। সবাই বিদেশে থাকে। তারা কেহই এদেশে আসে না। তবে বিশাল এই বটবৃক্ষের নিচে ঘরটি ভীষন ভংয়কর মনে হচ্ছে। মনে মনে ভয় ভয় লাগছে। অথচ এই স্বপন চাঁচা ছোটবেলায় কত রপকথার গল্প শুনিয়েছিলো। আমরা যখন বাড়ীতে বেড়াতে আসতাম তখন স্বপন চাচাঁ আমাদের পুকুরধারে মাছ ধরতে নিয়ে যেতে। মাছ ধরার ফাঁকে ফাকেঁ এই সব রুপকথার গল্প শুনাতো। এখান থেকে বাড়ী অনেক দূর। পাশের গ্রামে মেম্বার বাড়ী পারি দিয়ে, আমাদের বাড়ী। বাড়ীতে যেতে হবে। “মা” আমার পথ চেয়ে বসে আছে, হয়ত বৃষ্টিতে ভিজে আমাকে খুজঁতে বেড়িয়েছে। বৃষ্টি না থামলে কিভাবে যাবো। বৃষ্টি বেগ আরো বেড়ে গেলো কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় বাতাস বইতে লাগলো। আমি আরেকটু আড়াল হতেই। রুমের দরজাখুলো গেলে। ভয়ে চমকে গেলাম। থমকে গিয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি । অনেকটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। বয়সের ভারে গায়ে চামড়ায় গুটি গুটি ভাজ পড়ে গেছে। আমাকে বললো “বাবা কে তুমি” ? কন্ঠ শুনে চিনে ফেললাম চাঁচীমা। উত্তরে বললাম চাচীমা আমি “বশির আহমেদ”। ও বশির তুই কেমন আছিস বাবা। আমি চোখে ভালো দেখতে পাই না। একলা একলা এই বাড়ীতে থাকতে থাকতে কেমন যেনো ভুতুরে হয়ে গেছি বাবা। আমার ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে ৪/৫ বছর পরপর আসে। বলতে না বলতে কেঁদে ফেললেন চাচীঁমা, খোঁ খো করে কাশিঁ দিচ্ছেন আর কাদঁছেন। আসুখে বিসুখে চাচীঁমা কেমন হয়ে গেছে ভাবতে অবাক লাগছে। যে চাচীঁমা আমাদের দাদাঁ-দাদী পরিবারের সবাইকে দেখাশুনা করতো অথচ আজ কি অবস্থা হয়েছে। ঘরের ভেতর থেকে দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা একজন মহিলা তাকে ঘরের ভেতর নিয়ে শুইয়ে দেয়। চাচীঁর মতো আমার ‘মা’ ও বৃদ্ধ হয়ে গেছে। আগের মাতো ভালো করে চোখে দেখতে পায় না। ঠিক ঠাক মতো হাটাচলাফেরা করতে পারে না। লাঠি ভর করে হাটে। ঠিকমতো হাটতে পারে না চোখেও ভালো দেখতে পায় না তবুও মা যেনো আমাদেরকে নিয়ে সারাদিন ব্যাস্ত থাকে। এটা সেটা এনে খাওয়ানো জন্য। সেই ছোট বেলায় আমাদের যেভাবে খাওয়াতো । আয়োজনের কোন কমতি নেই। মা যতটা সম্ভব ততটা আমাদের জন্য করবেই। মনে পরে যখন স্কুল শেষ করে কলেজে পড়ি । রাত জেগে পড়তাম। তখন মা আমাদের পাশে বসে থাকতো। শীতের রাত আমাদেরকে সুন্দর করে কাথা লেপ দিয়ে গুটিশুটি করে ঢেকে দিতে। আমরা আরাম করে পড়াশুনা করতাম। কিন্তু একদিন খেয়াল করালাম ‘মা’ শীতে ধরধর করে কাপঁছে। মা’, কে জিজ্ঞাসা করলাম ‘মা’ তুমি কাঁপছো কোন ? সেদিন মা কোন উত্তর দেইনি। আজ বুঝেছি। আমার বাবা খুব সাধারন আয়ের মানুষ ছিলেন। মাকে গরম কাপড় কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিলো না বাবার। আমাদের পরিবারে আমরা সাত ভাই বোন। আমার মা আমাদের কখনও অভাব বুঝতে দেই নাই। একদিন রাতের খাবার খেতে দেরী হচ্ছিলো মা বার বার আমাদের শান্তনা দিয়ে বলছিলো “আজ রান্না দেরী হচ্ছে। রান্নার চাউলগুলো খুব পুরোনো” তাই সিদ্ধ্য হতে একটু দেরী হবে । তোরা ঘুমিয়ে পর, রান্না হলো তোদের ঢেকে দেব। আমরা খিদে নিয়ে ঘুমিয়ে পরি। পরেরদিন সকাল হতেই বাবা বাজার করে বাসায় ফেরে। মা আমাদের তরিঘরি করে রান্না করে খাওয়ালো। আজ মনে পরে সেদিন ঘরে বাজার ছিলো না, মা সান্তনা দেওয়ার জন্য গরম পানি চুলোয় সিদ্ধ দিয়ে রেখেছিলো। আমরা না খেয়ে ঘুমিয়েছি বলে ‘মা’ সারারাত কেদেঁ কেদেঁ চোখ ফুলিয়েছে। আজ আমরা ৭ ভাই বোন সবাই অনেক বড় হয়েছি। অথচ অর্থের বিলাসিতায় ভাসছে আমাদের ভাইবোন গুলো। সবাই প্রয়োজনের দাগিতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা বসবাস করছে। বিচিত্র এই দুনিয়া রিতিনীতি এখন আর একসাথে কেউ নেই।
চাচীঁমা‘র কথা ভাবতে অবাক লাগছে বৃদ্ধ বয়সে তাকে একাকিত্¦ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এই বিশাল পৃথিবীর কাছে আজ চাচীঁমা বড় অসহায়। ঘরের ভেতর যেয়ে চাচীঁমা কে পা ধরে সালাম করে নিলাম। চাচীঁমা তখনও খো খো করে কাসি দিচ্ছে, আমার সাথে অনেক কথা বলার ছিলো হয়ত, কিন্তু বলতে পারছে না, শাররীর অসুস্থতার জন্য।
“চাচীঁমা আমি আসি” পরে আবার আসবো, বাহিরে ঝড় কিছুটা কমে গেছে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আমি যেতে পারবো। বলেই আমি চলে আসি। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম চাচীঁমা নিষ্ফালক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চলে যাওয়ার দিকে। আমার চোখের বাঁধবেয়ে পানি জমলেও কিছু করার নেই । যেভাবেই হোক আমাকে যেতে হচ্ছে “মা” হয়ত এতক্ষন আমাকে খুজঁতে বেড়িয়েছে। বৃদ্ধ ‘মা’ এই বৃষ্টির মধ্যে আমাকে খুজেঁ বেড়ালে অসুস্থ হয়ে পরবে। তরিঘরি বের হয়ে পরলাম। বাহিরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠের কোল ঘেষে পাশেই বিশাল পুরাতন জরঝির্ন খাল। আমি তরিঘরি হাটছি আর বৃষ্টিতে ভিজছি। হঠাৎ বৃষ্টির বেগ আবারও বেড়ে গেলে। দৌড়ে একটু সামনে যেতেই রমিজ মামার দোকান। দোকানটি বন্ধ। রমিজমামা মারা গিয়েছে তাও বছর তিনেক হবে। দোকানটি কোল ঘেসে পাশেই একটি কুড়ে ঘড় সেখানে মাঝে মাঝে বাউল গানের আড্ডা হয়। নবান্নের উৎসবের সময় গ্রামের কৃষক লাঙ্গল কাধেঁ, মাঝি, মাল্লা সবাই এখানে বাউল আর মুর্শিদি গানের রমরমা আড্ডা জমায়। আজ এখানে কেউ নেই। খাঁ খাঁ অন্ধকার চারিদিক। ভুতুরে ভয় আমাকে গ্রাস করছে। বৃষ্টিতে ভিজবার কারনে শরীরে শীত ধরে গেছে। কিন্তু আমাকে যেতে হবে “মা” আমাকে খুজঁছে। যে ভাবা তেমন কাজ। বৃষ্টিতে ভিজে রওনা হলাম কিছুদুর এগুতেই পেছন থেকে একজন আমাকে বললো “খোকা বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন” “ তোর বুকে ঠান্ডা লেগে যাবে”। পেছন ফিরে তাকালাম দেখলাম এক হাতে একটি নিবু নিবু বাতি অন্য হাতে ছাতা নিয়ে আমাকে ডাকছে। সে আর কেউ নয় আমার “মা”। এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শুদ্ধ এবং মধুর একটি নাম ”মা”। বৃদ্ধ “মা” লাঠি ভর করেও ঠিকমতো হাটতে পারে না অথচ এই বৃষ্টি মাঝে আমাকে নিতে এসেছে। “মা” আমার মাথার উপর ছাতাটা দিয়ে বললো চল বাড়িতে, এত দেরি করলি কেন ? মায়ের হাতে নিবু নিবু হারিকেনের বাতিটি। তাকিয়ে দেখি মা বৃষ্টিতে ভিজঁছে। ছাতাটা শুধু আমার মাথার উপর। মা কে অনুরোধ করলাম। মা বললো “ খোকা আমার কিছু হবে না, তুই বাড়ি চল।
পুরাতন ভাঙ্গাচোরা একটি বাড়ী। ‘মা’ এখানে একলা থাকেন, বাড়ি ফিরতেই মা একটি পুরাতন তোয়ালে দিয়ে আমার শরীর মুছে দিয়ে বলে ‘বাবা ঠান্ড লাগলে তো তোর বুকে ব্যাথা করে আমি জানি, যাই সরিষার তৈল নিয়ে আসি তোর বুকে মলিক করে দেই। মা চোখে ভালো দেখে না তবুও এদিক সেদিক খেয়াল করে অনেক কিছু রান্না করেছে। বয়সের ভারে মা শুকিয়ে গেছে, চামড়া ভাজ পরে জির্নসির্ন হয়ে গেছে এই বয়সে আমার জন্য এতকিছু রান্না করেছে ‘মা’ । কতই না কষ্ট হয়েছে। গরমভাত, পুটি মাছের জোল আমার খুব পছন্দের। খুব মজা করে খেয়ে শুয়ে পরি। পরেরদিন পরিস্কার সকাল, চারিদিক পাখিদের কলকাকলি। কে যেন আমাকে ডাকছে “বাবা ও বাবা তুমি ওঠো, এভাবে ছাদে শুয়ে ছিলে কেন ? তুমি আম্মুর সাথে ঝগড়া করে কোথায় গিয়েছিলে।” আমি তোমাকে কাল, সারাবাড়িতে খুজেঁছি। চোখ মেলতেই জেগে উঠে দেখি আমার মেয়ে জয়িতা আমাকে ডাকছে। আমি বাড়ীর ছাদেঁর উপর আছি। আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললাম আম্মু “ আজ আমার “মা” তোমার দাদুমনিকে স্বপ্ন দেখলাম। “মা” মারা গিয়েছে প্রায়ই পাচঁ‘ বছর হবে। পৃথিবীর সবকিছুই ঠিকঠাক মতো আছে, কিন্তু আমার মা নেই কেন ?. . . . . . . . . . . . . . . . . . .

শৈলী.কম- মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ম্যাগাজিন। এখানে ব্লগারদের প্রকাশিত লেখা, মন্তব‍্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর। ধন্যবাদ।


You must be logged in to post a comment Login