অধরা চাঁদের আলো
১.
ত্রিশূল আখ্যানে কোনো কল্পতরুর অহম যদি মনলোভা ফুলে ফুলে ডেকে নেয় শিল্পের ভ্রমর, অনন্ত আংটির বেড়ি পায়ে আকর্ষিক মধ্যমায় অধরা চাঁদের আলো যেন বিজন কুটির।
১৮.১২.১৫
২.
সমস্ত প্রণয় বীজ বুনে দেয়া জীর্ণ খোল-করতালে ছুটে আসে রবোটিক চিন্তার নিয়নকাঠি, “কোথায় জীয়নকাঠির দিন? শেকড়বাকর ছিঁড়ে যার খোঁজে হারিয়েছি ঋত সঞ্জীবনী, আয়নার হাত আর শীতার্ত আদর, কোথায় সে অরূপ রূপের ধন, একটিবার আনো তারে তাপিত হৃদয়ে…” মেঘদোলনায় দোল খেতে খেতে আকাশের পরী বলে— হে জন্মান্ধ ঋষি, নাড়াও নাড়াও কাঠি, খুলে যাবে ফোটনের দ্বার…।
১৯.১২.১৫
৩.
হাঁটু গেড়ে বসেছি দেবী হে,
নাদান এ পূজারির করজোরে ঢেলে দাও একফোটা মঙ্গলকথন,
শব্দের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দেহের কালান্তে আড়মোড়া ভাঙি,
বহুজন্ম পার হয়ে যে বর্ণমালায় তোমাকে সজ্জিত পাই
প্রণয় ও বিচ্ছেদের জৈব রসায়নে,
সে চক্করেই পৃথিবী ঘুরে ঘুরে এলে
নাভীমূলে বেড়ে ওঠে গৃহত্যাগী জোসনার ভ্রুণ…
পথই জেনেছে শুধু পথিকের অতিক্রান্ত দূরত্বপুরাণ। আমাদের অস্থি থেকে তাই একে একে খুলে গেছে দৌড়বেধের নকশা। মাংসপিণ্ডের কুহকে তীব্র স্বরলিপি। আমি তো জানি না তানপুরা কেমন ছোঁয়ায় ঘুম থেকে জেগে ওঠে রোজ। স্থানাংক পেরিয়ে এসে অতিপ্রাকৃত এ বিদ্যাবল প্রাকৃত করেছ দেবী!
পরাবাস্তব রশ্মিতে ফালি ফালি করে দাও নশ্বর যাপন,
একটিবার দয়ার্দ্র হও বামুনের।
এই দেহে ক্লান্ত ঘামে-প্রেমে ফুটে থাক সোনাবীজ,
আমাকে দেখাও তুমি ইথারের ফুল…
আমারও যে অনন্ত যাত্রাপথ প্রিয়!
১৯.১২.১৫
৪.
‘আরে নাহ্’ শব্দ দুটি দীঘল শ্বাসের খেদপুষ্প, এই বলে যে পাখিটা পাখা ঝাপটালো, তার ডানা থেকে খসে পড়ে অনাথ চোখেরা…
শুধুই কী দেখে যায় চোখ, শোনে না কী কোনো কথা, বলো সখি?
বায়ুপত্রে গমনের লিপি দেখে দেখে চোখের মধ্যেও বেড়ে উঠে কান আর কানের মধ্যেও চোখ, আমাদের।
৩০.১২.১৫
যবনিকার আগেই
দৃশ্যকল্প চিনে নিয়ো প্রতিটি শুরুর,
ঘুম ভেঙে
চোখেরা যেমন
নিত্যাকার ছন্দে হাঁটে
শরীর ও সংহারের যূথচারী পথে।
স্টেশন মানেই বহুবর্ণের প্রত্যাবর্তন
অথচ প্রত্যেকে
পায়ের বেড়ির কাছে কত অসহায়!
দিনরাত্রি
তবু বাক্যপোকরণ সূর্য মাখে নমিত অক্ষরে
যখন প্রতিটা বগি জোড়া দিলে
আস্ত রেলগাড়ি হয়ে যায়।
অভিনয় শেষ হলে গ্রিনরুমে পড়ে থাকে
দরিদ্র মেকাপ
আর মঞ্চের অদূরে হাড়িমুখ সিট,
ভুল করে ফেলে যাওয়া স্মৃতির রুমালে
বেভুল জোসনা এঁকে যায়
কোনো আদুরে হাতের
বাদামের খোসা।
০৯.০১.১৬
৬.
চয়নবিদ্যা জানি না বলে
পাখির ডানার শব্দ বুকে নিয়ে ডাকি-
ও ভোর আমার, সূর্যবান্ধব চোখ, হে ঋতসখি,
অঙ্গের মুখোশ নিভে গেলে
অধরা চাঁদের আলোটুকু রেখো নিঃসঙ্গ রোদনে,
জীর্ণ ছনঘরে
আত্মরতির শীৎকারে আরো একবার
সেঁটে দিয়ে যাবো
স্বতঃমুচলেকা আর ছিন্ন শ্বাসগ্রাফ,
এসব বাণিজ্য প্রহরের
অভিজাত বর্ণরেখা ছেড়ে।
আচমকা নেচে না উঠলে
যুগল পা ভুলে যাবে পথের প্রণয়,
স্যাঁতারোদে উঁকি দেবে ধুতুরার ফুল,
বোহেমিয়ান ছত্রাক-বায়ু
সেঁতুর ওপারে
ডেকে নেবে অজানা সিডর।
স্বরচিহ্নের উঠোনে জিরিয়ে নেবার পিঁড়ি নেই,
ডুমুরজীবন নিয়ে তাই অন্ধমিস্ত্রি
কখনো দেখে নি
বিন্যস্ত পরাগায়ণে কী রকম পুষ্পশিল্পকাম
সঙ ছুঁয়ে সার করে তোলে
কালপুরুষের উপবন;
তবু একদিন বুননবিদুষী গায়-
‘মিলন হবে কতদিনে…’
চয়নবিদ্যা জানি না বলে
পাখির ডানার শব্দ বুকে নিয়ে বলি-
সাঁইজি হে, ত্রিদিব চাতক, কী সেই ‘বিরলে কিরণ উদয়…?’
তুমিই তো জানো-
একমাত্র নদীর কাছেই পথের মধুর পরাজয়!
১১.০১.১৬
৭.
ক্যান এতো উপেক্ষা তোমার
মৃত্যুমুখী মায়ের মতন?
রোদ্দুর নাড়ার তারে ঝুলছে হাত-পা,
তার নাম প্যারালাইসিস।
আর না দেখার ভান করে
চোখকে শাপমুক্তির বাজারে তুলেছ,
সেটাই উল্বণ
আর ত্রিনয়নী দ্যুতি ভোর না ফোটালে
রক্তে মাছিপোকা কিলবিল করে খুব,
ঘন হয় বিড়িপোড়া দিন
বুকের নিকট।
জাল ছাড়াতে ছাড়াতে যে কাঁটাতারের বেড়া পাই,
সেখানেই যত কেনা-বেচা
বণিক রাজ্যের।
অথচ পাখির ভিসা পাসপোর্ট নেই…
এমন উপেক্ষা শেষে রাতের কঙ্কাল
অধরা চাঁদের আলো মেখে
ফাঁস নেয় বহুগামী দিন,
সেটুকুই হত্যা
শিমুল ও পলাশের বনে।
বিমূর্ত নয়নে আকাশটা ছিঁড়ে গেছে
কলসের জলে নদী আঁকার সময়।
ভাঙা নৌকা দোলে
দীঘির পানিতে, স্বপ্নে কাঙ্ক্ষিত নদীর
বালুময় দেহে তবু বিম্বের আয়না
মনমুখোশের প্রতিনিধি।
উপেক্ষার বিষবাণে টলে গেছে সূর্য
জুবুথুবু জঙ্গলের কাছে,
দুরারোগ্য ব্যাধি তার গোপন সৃজন।
মুচলেকার অক্ষরে লিখি-
ধন্বন্তরি, মলমে কী সব ক্ষত সারে?
১৯.০১.১৬
৮.
এমন দূরত্ব রাখো ধরে
অতিক্রমণে পেরিয়ে যাক মহাকাল,
তারপর মুখোমুখি হবো।
কশ্যপালোকের ওমে খুলে যায় যদি
প্রতিটি কোষের বাতায়ন-
জেনে রেখো, ধনুর্মনের টঙ্কার মুছে অবশ্যই
ছেড়ে যাবো প্রিয় ছায়াগিরি,
নিকট বৃক্ষের সানগ্লাস, রেশমি চুড়ির মায়া…
গেয়ে যাও তুমি ‘দেখেছি রূপসাগরে
মনের মানুষ কাঁচা সোনা…’
অজানা শহর চিনে নেবে একতারাভোর।
০৯.০২.১৬
৯.
ঘোড়া আনার আগেই চাবুক আনলে।
ভুলে গেছো লাগামের কথা!
পথ আঁকার সময় যে নদীটি রেখে যাও তা শীতনিদ্রার পাইথন। প্রতি গ্রীষ্মে তুলিই সে খেয়ে ফেলে আর লেজ দিয়ে পৃথিবী নাড়ায়। সে কারণে পথগুলোর সমাপ্তি নেই।
2 Responses to অধরা চাঁদের আলো
You must be logged in to post a comment Login