প্রত্যাখ্যাত
কলিং বেলটায় একবার চাপ দিয়েই
হাত গুটিয়ে বসে রইল তন্দ্রা। আজ আর রোজকার মত পরপর তিনবার বেল বাজিয়ে তার আসার আগাম বার্তা
জানাতে সাহস পেল না। দেখার আগেই ভিতর থেকে জেনে যাবে তাকে এ আজ তার জন্য বড়
লজ্জার। আগন্তুক ভাবুক। সেই ভাল। লজ্জা আড়ালের আরো দু’এক পলক সময় পাওয়া যাবে তাতে।
সুবীর দরজা খুলে ধরল বাম হাতে। তার চাহনী, মুখের প্রকাশে কোন
পরিবর্তনই এলো না। “এসো এসো। আমি মাত্র খেতে বসেছি। তুমি হাত মুখ ধুয়ে চলে এসো।
দেখো তো আমার রান্না খাওয়া যায় কিনা।” তন্দ্রা কোন কথা বলল না। পোশাক না ছেড়েই
বেসিনে হাত ধুয়ে বাধ্য মেয়ের মত খেতে বসল। সুবীরের পাশের চেয়ারে। রোজ মুখোমুখি
বসে। আজ পারল না। চোখে চোখ পড়তে পারে এই ভেবে। মনেমনে ভাবল,“ও চোখে আজ নিশ্চিত আগুন আছে।”
তন্দ্রার হাত শিথিল দোলায় মুখে ভাত দিচ্ছে। সুবীর সেই আগের
মতই ধীর, শান্ত। ভাতের
মধ্যে আঙুল কেটে তন্দ্রা ক্ষীণ সুরে বলল, “তুমি কিছু জানতে চাইলে না যে।” “ইচ্ছে হলে তুমি বোলো।”
সুবীরের কথার ভাঁজ সেই আগের মতই। নির্লিপ্ত। যেন কিছুই হয়নি। তন্দ্রা চুপ হয়ে গেল।
মুখের ভাতটা শেষ করে সুবীর বলল, “তারপরও যদি তোমর
মনেহয় আমি জানতে চাইলে তোমার জড়তা কাটবে তাহলে জিজ্ঞেস করতে পারি। হ্যা বলো,
কেন ফিরে এলে?”
নাক গড়িয়ে এক ফোঁটা জল পড়ল ভাতে। দ্রæত সামলে নিল তন্দ্রা। “আবির এক লাইনের একটা
চিরকুট দিয়ে চলে গেছে।” ও তাই! সুবীরের গলা থেকে বেড়োল। যদিও সে বলায় নেই কোন
কৌতুহল,উৎকন্ঠা বা উত্তেজনা,
এমনকি ঘৃনাও। কী লেখা
তাতে জানার আগ্রহ পেল না একদমই। কিন্তু সে জানে তন্দ্রা বলতে চায়। নেহাতই তাই
জানতে চাইল। “কী লেখা ছিল?” পেট ফুলিয়ে শ্বাস নিল তন্দ্রা। বলার জন্য
নিজেকে সাহস দিতে নাকি আপসোসের তা বোঝা গেল না। ম্লান স্বরে বলল,“শুধু লিখেছে-পাখির স্বভার ঘর ভেঙ্গে
ঘর গড়া।”
সুবীর আয়েশ করে কৈ
মাছের মাথা চিবাচ্ছে। কিছু বলতে পারল না। চাইলও না। মিনিট খানেকের নীরবতা ভেঙ্গে
তন্দ্রা জোরে নাক টানল। বড় একটা ঢোক গিলে বলল, “সুবীর তুমি আমিকে শাস্তি দাও। যেমন তোমার
ইচ্ছা।”
এক টানে পুরা জলটা শেষ করে মুখ থেকে গ্লাসটা সরাল সুবীর। “তুমি
কিন্তু বললে না, আমার রান্না কেমন
হয়েছে।” বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে বেসিনে হাত ধুল, কুলকচি করে মুখ সাফ করল। তন্দ্রা ভাতের মধ্যে
সমানে ইলি বিলি কাটছে। তাওয়ালে হাত মুছতে মুছতে সুবীর তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে
বলল, “তুমি দক্ষিণ পাশের রুমটায় থেকো। এ পাশের
ঘরটায় আমি আছি।” দম নিয়ে বাকিটা শেষ করল,“নিতান্তই প্রয়োজন হলে আমার রুমে এসো। তবে জানিয়ে এসো
কিন্তু।”
——লেখনীতে মনীষা
You must be logged in to post a comment Login