লেবার মার্কেট
১
মানুষের ভিড় দেখে ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে আব্দুল মজিদ। এত মানুষ শহরে করে কি? থাকেই বা কোথায়? আর তার মতো সব হা-ভাতে অভাবী মানুষগুলো কি ঢাকা শহর ছাড়া আর কোনো শহর দেখে না? একটা সময় নৌকা বেয়ে তার সংসার চলেছে। সংসারের যাবতীয় ব্যায় নির্বাহ শেষে কখনো উদ্বৃত্ত কিছু থাকলে নানা পার্বণে ভালো মন্দ কিছু হয়ে যেতো। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে যাওয়াতে তার ভাগ্য বলতে গেলে খরায় পুড়ছে তখন থেকেই। তার ওপর ছেলেরা যার যার সুবিধা মতো আলাদা হয়ে যে যেদিক পারলো চলে গেল। নয়তো এই বয়সে তাকে এখন কাজ খুঁজতে হতো না। সে শুনেছে, লেবার মার্কেট বলে শহরের বাজার বা স্টেশনের পাশেই গরু-ছাগলের হাটের মতো জন-কামলাদের হাট বসে। লোকজন এসে দেখে শুনে নিজেদের পছন্দ মতো লোকজন নিয়ে যায় প্রয়োজনীয় কাজ করাতে।
আব্দুল মজিদ গতকালই এসেছে কেওটখালি থেকে। কমলাপুর স্টেশনে রেলের কামরা থেকে নেমে সে প্রথমেই ঠিক করে মানিক নগর বস্তিতে গিয়ে দুর্গাপুরের কাশেমকে খুঁজে বের করবে। ছোটবেলা থেকেই কাশেম তাদের বাড়িতে মানুষ। তার বড় ফুপুর ছেলে কাশেমও ছেলে-মেয়েদের অবহেলা সইতে না পেরে গ্রাম ছেড়েছে প্রায় বছর দুয়েক আগে। এখানে ভালোই কাজ-কর্ম পাওয়া যায় নাকি। কাশেম তো বলেছিলো গ্রামের চেয়ে শহরই ভালো। সব কিছুই হাতের নাগালে। বছর খানেক আগে একবার গ্রামে গিয়েছিলো কাশেম। পরনে ছিলো ভালো পোশাক। চুল-দাড়িতে কলপ লাগিয়ে কালো করা ছিলো। সফল মানুষদের মতো প্রশান্ত মুখে পকেট থেকে দামী সিগারেট বের করে একটি নিজে ধরিয়ে আর একটি তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো, লও, দামী সিগেরেট টানতে ক্যামন লাগে দেইখ্যা লও! কিন্তু অভাবে অভাবে ততদিনে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে সে।
আব্দুল মজিদ সকাল এগারোটার দিকে কমলাপুর এলেও মানিক নগর পৌঁছুতেই তার সন্ধ্যা হয়ে যায়। ক্লান্ত পদক্ষেপে বস্তির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দম নেয়। দুটো হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে এদিক ওদিক তাকায় ঘোলা চোখে। এখান থেকেই কমলাপুর স্টেশনের সাপের ফণার মত বেরিয়ে থাকা ছাদের কোণাগুলো দেখতে পাওয়া যায়। অথচ এমন সামান্য দূরত্বটুকু পাড়ি দিতে তাকে কত পথই না ঘুরতে হয়েছে। শহরের মানুষ হয় বেকুব নয়তো কুটিল চরিত্রের। যাকে যাকে মানিক নগর আসার পথের কথা জিজ্ঞেস করেছে, তারাই তাকে হাত তুলে উল্টা-পালটা পথের সন্ধান দিয়েছে। একজন তো তাকে বলে দিয়েছিলো রেলের ওভার ব্রিজ পার হয়ে আসতে। যে কারণে তার সংক্ষিপ্ত পথটা দীর্ঘ হয়েছে আরো।
ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর আব্দুল মজিদ বস্তির প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে থেকে একজন মাঝ বয়সী লোককে দেখে শুধায়, বাজান, অ্যানো কাশেম বইল্যা কেওই থাহে?
লোকটি আব্দুল মজিদের আপাদ-মস্তক একবার দেখে নিয়ে পিচিক করে থুতু ফেলে একটি মুচকি হাসি দিয়ে বলে, মমিনসিং তনে কবে আইলেন?
-আউজগাই!
-কোন কাশেম?
-দুর্গাপুরের।
-করে কি?
-জন-কামলার কাম হরে!
-বয়স কিরাম?
-আমার মতনই। বছর দুয়েক বেশি অইবো!
লোকটি ফের থুতু ফেলে বললো, এহানে জন কামলার কাম করার মতন কোনো কাশেম নাই। একজন আছে মুরগা কাশেম। মুরগি ছিলার কাম করে। আরেকজন আছে ফকিরা কাশেম। ভিক্ষা করে। এমন রিকশা কাশেম, কাটা কাশেম, ল্যাংড়া কাশেম, মোটকা কাশেম, পাতলা কাশেম, বাটকু কাশেম, লাম্পা কাশেম, কানা কাশেম, বয়াতি কাশেম, মোল্লা কাশেম, দালাল কাশেম, বাবুর্চি কাশেম আর আছে বয়রা কাশেম। আপনে কোন কাশেমরে খোঁজেন?
বিভ্রান্ত আব্দুল মজিদ কী বলবে ভেবে না পেয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে লোকটির মুখের দিকে। বেলা ডুবতে বেশি দেরি নেই। পশ্চিমাকাশের কমলা ছোপ বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য তার কাজ শেষ করে ঘুমুতে যাবে। যেখানে বিজলি বাতি নেই সেখানটায় হামলে পড়বে রাত্রির অন্ধকার। এখানে কাশেমকে না পেলে এত বড় শহরের কোথায় কোথায় ঘুরবে সে? রাতটা নিশ্চিন্তে কাটাতে পারলে না হয় সকালের দিকে কোনো কাজ-কর্ম খুঁজে নিতে পারতো। তা ছাড়া লেবার মার্কেটে গিয়ে দাঁড়ালে কাজ পাওয়া তো নিশ্চিত।
লোকটি যুগপৎ কণ্ঠে আর দৃষ্টিতে অপার কৌতুক ফুটিয়ে বললো, চাচা, খাড়াইয়া খাড়াইয়া আপনে ভাবেন আর এহানেই থাইকেন। কাশেমরা আইলে আপনের কাশেমটারে চিন্যা লইতে পারবেন!
আব্দুল মজিদ কাশেমের প্রতীক্ষায় আর কতক্ষণ দাঁড়াবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছিলো না। ক্ষুধায় তার সমস্ত শরীর কাঁপছিলো। নিজেই অনুভব করতে পারছিলো, দেহটা কোমরের উপরাংশ থেকে সামনের দিকে হেলে পড়েছে। কিছু না খেতে পেলে যেন আর দাঁড়াতে পারছে না সে। সঙ্গে আছে চার টাকা মাত্র। চার টাকায় কী খাওয়া যেতে পারে? বস্তির পাশেই একটি ছোটোখাটো দোকান দেখা যাচ্ছিলো। সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে সে ভাবে যে, কাশেমকে না পেলে রাতটা স্টেশনেই কাটিয়ে দেবে।
২
মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছিলো। হয়তো কাছাকাছি কোনো মসজিদ থেকেই ভেসে আসছে। সে মাথা ঘুরিয়ে আজানের উৎস খুঁজতে এদিক ওদিক তাকায়। কিন্তু আশপাশে মসজিদের মিনার বা গম্বুজ চোখে পড়ে না। তারপর কলা, পাউরুটির পাশাপাশি পলিথিনের প্যাকেটে ঝুলিয়ে রাখা বনরুটির দিকে হাত তুলে দোকানে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করে, বন কত হইরা?
চাইর ট্যাকা! বলার সময় দোকানীর কণ্ঠস্বরে ফুটে ওঠা অবজ্ঞা গোপন থাকে না।
দোকানের সামনে পেতে রাখা কাঠের বেঞ্চে বসে বগলের নিচে চেপে রাখা কাঁথাটা কোলের ওপর রেখে আব্দুল মজিদ বললো, একটা দেইন যে! তারপর বন হাতে নিয়ে সামান্য ছিঁড়ে মুখে দিতেই দোকানী জানতে চায়, আর কিছু লাগবো, কলা, চা?
আব্দুল মজিদ একবার অসহায়ের মতো লোকটির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লে লোকটি কী বোঝে কে জানে। পাশের একটি বালতিতে চুবিয়ে পানি সমেত একটি প্লাস্টিকের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে, পানিতে ভিজাইয়া খাও। নাইলে গলায় বান ঠেকতে পারে!
দোকানীর কথা মতো বনরুটি ছিঁড়ে তা পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে খাওয়ার পর মজিদের মনে হয় ক্ষুধার যেন কোনো রকম তারতম্য ঘটেনি। যে কারণে নিজের ওপর তার বিরক্তি আর অসন্তোষ দুটোই বাড়ে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনের চাহিদাগুলো একে একে স্তিমিত হওয়ার বদলে বেড়ে যাওয়াটা যেন কোনোমতেই মেনে নিতে পারে না সে। কিন্তু প্রকৃতিতে যা অনিবার্য তাকে প্রতিরোধ করার সাধ্য কারই বা আছে?
দোকান থেকে উঠে সে কমলাপুর স্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকে। তখনই রাস্তার পাশে জ্বলতে থাকা হলদেটে মরা আলোয় দেখতে পায় ঠিক কাশেমের মতই একজন বয়স্ক লোক প্রায় পুরোটাতে তালি মারা একটি ঝোলা কাঁধে নিয়ে, হাতের লাঠিটা পাকা সড়কের ওপর ঠুকে ঠুকে তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে পাগড়ীর মতো করে লুঙ্গী বাঁধা মাথা নিচু করে। সাদা দাড়ি-গোঁফে আচ্ছাদিত মুখটা ঠিকমত দেখা না গেলেও আবছা মতো অবয়বটাকে কাশেম বলেই মনে হয়। সেই একই রকম খানিকটা হেলে-দুলে চলার ভঙ্গী। নাকের ওপর সেই একই স্থানে রুদ্রাক্ষের দানার মতো কালো আঁচিল। পেছন থেকে খানিকটা তাকিয়ে থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় আব্দুল মজিদ। লোকটির পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে সে ডাকে, ম্যা বাই! অ ম্যা বাই! হুনসুইন?
লোকটি মজিদের ডাকে কর্ণপাত না করলে সে কণ্ঠস্বরে আরো জোর দিয়ে বলে ওঠে, ম্যা বাই, কদ্দুর হানিক খাড়োইন যে! বলতে বলতে সে লোকটির একটি বাহু ধরে নিজের দিকে আকর্ষণ করে।
লোকটি কোনো কারণে বিরক্তি বা অস্থিরতা প্রকাশ না করে স্থির হয়ে মজিদের দিকে তাকায়। তারপর শান্ত স্বরে বলে ওঠে, কী কইবাইন?
আব্দুল মজিদ বেশ উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। সেই একই কণ্ঠস্বর আর চাহনি। অকস্মাৎ তরল কণ্ঠে সে বলে ওঠে, ম্যা বাই আমারে চিনতেন পারতাসুইন না? আমি আব্দুল মজিদ!
লোকটি নিরাসক্ত কণ্ঠে বলে, কোন আব্দুল মজিদ? বাড়ি কই?
মইনসিং, কেওটখালি। আফনের বাড়ি মইনসিং। আফনে দুর্গাপুরের কাশেম বাই না?
না, না! লোকটি মাথা নিচু করে এদিক ওদিক নাড়াতে থাকে। আফনে ভুল করতাসুইন!
আব্দুল মজিদ বিস্মিত হয়ে বলে, কতা কইতাসুইন মইনসিঙ্গের, আবার মাতা লাড়াইতাসুইন ক্যারে?
লোকটি খানিকটা রাগত কণ্ঠে বলে উঠলো, মইনসিঙ্গের কতা কইলেই তোমার দুর্গাফুরের কাশেম অইন লাগবো ক্যারে? মাতাৎ কালা পাগড়ী বানলেই মুক্তাগাসার খালু না, এই কতা মনো রাহোইন যে! বলেই লোকটি হন হন করে হেঁটে চলে মানিক নগর বস্তির দিকে।
আব্দুল মজিদ ঠায় তাকিয়ে থেকে দেখে লোকটির চলে যাওয়া। যতক্ষণ লোকটি বস্তির ভেতর অদৃশ্য না হলো ততক্ষণ সে তাকিয়ে থাকলো সেদিকেই। তারপর উলটো ফিরে কমলাপুরের দিকে চলতে চলতে মনে মনে বলে, তোমারে আমি চিন্যা এলসি! যতই মাতা লাড়াও, তুমি অহন হইরা কাশেম অইলেও আমরার কাশেমঅই!
৩
রাতভর প্রায় বিনিদ্র থেকে সকাল সকাল মানিক নগর লেবার মার্কেটে এসে অন্যান্য শ্রমিকের ভিড়ে মিশে যায় আব্দুল মজিদ। তার আশপাশের লোকজন বিভিন্ন জনের সঙ্গে চলে গেলেও তাকে কেউ কোনো কথা জিজ্ঞেস করলো না। বিরস মুখে মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার প্রত্যাশা পূরণ হয় না। ধীরে ধীরে তার ক্ষুধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের উত্তাপও বাড়তে থাকে। গলার দিকে, বগলে আর কানের পাশে ঘামের অস্তিত্ব অনুভব করলে ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠতে থাকে সে। ঠিক তখনই পান চিবাতে চিবাতে সাদা লুঙ্গী আর সাদা পাঞ্জাবি পরা একটি লোক এসে হাঁক দিয়ে বললো, ছাদ ঢালাই আছে!
সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় হুড়মুড় করে লোকজন ছুটে গিয়ে লোকটিকে ঘিরে ফেলে। কেউ কেউ জানতে চায়, কতজন লাগবো, কোনহানে, কয় তালার ছাদ?
আমার পোনরো জন মানুষ লাগবো। তোমরা কতজন আছ আর ট্যাকা রোজে না চুক্তিতে নিবা?
দু-একজন চুক্তির কথা বললেও বাকিরা বললো, রোজ হিসাবে।
আড়াইশো কইরা রোজ পাইবা।
ভিড়ের ভেতর গুঞ্জরন ওঠে। কেউ কেউ বলে পুরা একশ কম!
লোকটি বললো আবার, বেলা কত অইছে দেখছো? আমি গেলে আইজকার কামাই ফক্কা! তিন শ কইরা দিমু।
কেমনে যাইতে হইবো?
বেশ শক্ত সমর্থ দেহের এক যুবক সবার পক্ষ থেকে কথা বলে।
লোকটি জানায়, ট্রাক নিয়া আইছি। দূরের নাকি নজদিগ তা তোমাগো চিন্তা করতে হইবো না!
আব্দুল মজিদ গুণে গুণে দেখলো সাকুল্যে তারা আছেই পনেরো জন। মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে সে। তখনই লোকটির চোখে চোখ পড়ে মজিদের। তাকে দেখেই হয়তো লোকটি বলে ওঠে, বুইড়া মানুষ দিয়া কাম হইবো না। তুমি অব যাও!
ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ে আব্দুল মজিদ। কান্নার দমকে পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে চায়। কিন্তু নিজকে সে শক্ত রাখতে চেষ্টা করে। তার ভেতরকার ভাঙচুরের লক্ষণ হয়তো তার আচরণ বা অবয়বেও ফুটে ওঠে কিছুটা। আর তাই যেন নিতান্ত দয়া দেখাতেই লোকটি বলে উঠলো, পঞ্চাশ ট্যাকা পাইবা। যাইবা?
কোথায় তিনশ আর কোথায় পঞ্চাশ! বার্ধক্যের প্রতি যৌবনের তিরস্কারে যার পর নেই অপমানে কালো হয়ে যায় মজিদের মুখ। কোনো কথা না বলে এমন কি লোকটির দিকে দ্বিতীয় বার দৃষ্টিপাত না করেই ভিড়ের ভেতর থেকে সরে আসে সে। যেন এ দলের কিংবা এই লেবার মার্কেটের সঙ্গে তার কোনো সংশ্রব নেই বা ছিলো না।
খানিক পর সুর্যের তাপ আরো তেজী হয়ে উঠলে লেবার মার্কেট জনশূন্য হয়ে গেলে আসন্ন ক্ষুধা আর অভাবের কথা ভেবে দু চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে সে। সামনের অনিশ্চয়তা পূর্ণ দিনগুলো যেন তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অনাহারে আর বিনা চিকিৎসায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে বা স্টেশনের প্লাটফরমে পড়ে আছে সে। নিষ্ঠুর মৃত্যু যেন ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। সূর্য তাপ শরীরের চামড়া ফুঁড়ে হাড়ে গিয়ে বিঁধছিলো যেন। সে পুনরায় রেল স্টেশনেই ফিরে যাওয়ার মনস্থ করে। সে সময় হাতের লাঠি ঠুক ঠুক করে ফকিরা কাশেমকে তার দিকেই আসতে দেখা যায়। কাছাকাছি হতেই সে বলে উঠলো, কি, কামের ভাও অইসে না?
আব্দুল মজিদ কী জবাব দেবে? তার যাবতীয় জবাব যেন ফুরিয়ে গেছে। কাশেমের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে না। মনে হচ্ছিলো চোখ তুললেই টপ টপ করে পানি ঝরতে আরম্ভ করবে।
আব্দুল মজিদের নীরবতা দেখে ফকিরা কাশেম কৌতুকপূর্ণ স্বরে ফের বলে উঠলো, দোফোর বেলা খাওনের ট্যাহা আসে?
আব্দুল মজিদের বলতে ইচ্ছে হয় যে বলে, বিয়ানের খানার খবর নাই আবার দোফোর! কিন্তু তার মুখে কোনো কথা জোগায় না। সে মাথা নিচু করে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে কালো পিচে ঢাকা পাথুরে রাস্তার ওপর।
আব্দুল মজিদের নীরবতায় একই রকম চুপচাপ থেকে হাতের লাঠিটা দিয়ে রাস্তার ওপর কয়েক বার ঠুক ঠুক করে কাশেম। সেই সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে ভাবে হয়তো। তারপর মুখ তুলে খানিকটা ইতস্তত করে সরাসরি প্রস্তাব দেওয়ার ভঙ্গীতে বললো, আমার লগে লেবারি করলে তিন বেলা খাওন পাইবা। আর হাত খরচ বিশ ট্যাহা! যাইবা?
আব্দুল মজিদ কাশেমের উৎসুক মুখের দিকে তাকিয়ে সজল কণ্ঠে বলে ওঠে, ম্যা বাই, আমারে দেইখ্যা না চিননের ভান ক্যারে করসুইন অহন বুঝতাম পারতাসি! কিন্তু আমরার দিন কি অ্যামনেই শ্যাষ অইয়া গেল?
তখনই কাশেম সকৌতুকে বলে উঠলো, নডি বুড়া ঘইট্যা সার, ব্যাডা বুড়া কামের বার! তারপর সে হঠাৎ ডুকরে উঠে বললো, কামের বার বইল্যাই আমি আউজগা হইরা কাশেম। হারা দিন ভিক্ষা কইরা বেড়াই!
(সমাপ্ত)
২৯ জুন ২০১১।
***(লেখাটি আগে ভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত।) ছবিটি সমকাল-এর সৌজন্যে
12 Responses to লেবার মার্কেট
You must be logged in to post a comment Login