মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস: শেষ কাতারের মানুষ
খাল কিংবা গাঙ যখন মরে যায় তখন সে জমির ওপর রেখে যায় তার অস্তিত্বের ছাপ। জায়গাটা মাটি ফেলে ভারাট করে ফেললেও সেখানকার ঘাস বা গুল্ম-লতাপাতা জাতীয় গাছ-গাছড়াতেও লক্ষ্য করা যায় ভিন্নতা। আশপাশে জন্মানো উদ্ভিদরাজির ভিড়েও তাকে সনাক্ত করা যায় আলাদা ভাবে। তেমনি আমাদের সমাজেও কিছু কিছু মানুষ থেকে যায় যারা সবার সঙ্গে মিশে থাকলেও তাদের […]
প্রতিদিন উড়ে যাই তোমার নিকট
একটি পিপাসার্ত কাচপোকার মত ভয়ে অথবা নিশঙ্ক চিত্তে একাগ্র ছুটে চলা আগুনের লকলকে শিখাটির দিকে; মাটি কিংবা হাওয়ার ক্যানভাসে নিশ্বাসের মিহি ছাপ রেখে একদিন পৌঁছে যাবো ঠিক তোমার নিকট। দীর্ঘ অদর্শনের যাতনা ভুলে তুমি হয়তো চমকে উঠতে প্রথম দিনের মত; অবাকের ভঙ্গীতে আমি তোমার মুখোমুখি দেয়ালের আরশী হয়ে চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতাম! হয়তো অনুরাগী অভিযোগে […]
আক্ষেপ
স্রোতের টানে ভেসে গেলে আকাঙ্ক্ষার খড়কুটো ভাটিতে উজানে থাকে না প্রত্যাশার বুদবুদ কিংবা সম্ভাবনার তরঙ্গমালা। চারপাশ খসে গেলে ভিন্ন কোনো অবলম্বন দিতে অক্ষম মাথার ওপর ছাদের বরাভয় অথবা পায়ের নিচে শক্ত মাটি: শতবর্ষী বৃক্ষের মত মেরুদণ্ডের ঋজুতা। প্রচলিত দত্তক প্রথা দিতে পারে লোকালয় অথবা জনারণ্যে মাথা তুলে দাঁড়াবার সান্ত্বনা কেবল; সন্তাপ পিতৃ-মাতৃহীনতার নাম-গোত্রহীনতার আক্ষেপ বলো […]
তিতিক্ষা
ঘটনার আবর্তে এতটা জড়িয়ে যাবে জানলে কখনোই এ মুখো হতো না রবিউল। কিন্তু এ কথা সে এখন ভাবছে, আসলে না এসেও সে পারছিলো না। কারণ বয়স্ক বন্ধুর কাছে মান খোয়ানোর চাইতে কিছুটা কষ্ট করে হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মত কষ্ট করা তার কাছে ঢের সহজ। এখানে না এলে হয়তো বাকি জীবন খোঁটা শুনেই কাটাতে হতো […]
একদিন সবই ছিলো
একদিন সবই ছিলো, সঘন সবুজের ওপারে পাখি ডাকা ভোরের শিশির ছাওয়া ভেজা পথে নিত্যদিন চলা, ফিরে আসা নিঃসঙ্গ ধূলোরাঙা চিরচেনা পথে। ছিলো গান, ছিলো কখনো কান্নাও ছিলো বিরহ-মিলনের দ্বৈরথ; কুসুম রাঙা দিনের মায়া। কখনো বা তার অবয়ব ছলছল চোখে অভিমান ম্লান যেন মেঘের আড়ালে শুকতারা। আজ যেন সব মেঘের ওপার, মহাশূন্য ছোঁয়া অনন্ত নীলিমায় ম্লান, […]
উপন্যাস: কালসাপ-১৫ (শেষপর্ব)
পরিকল্পনা মত কাজের কাজ কিছুই হয় না। স্কুলঘরের পেছনের ঢালে অ্যামবুশ করতে গেলে তাদের পেরিয়ে যেতে হবে কানা আজম আর তার সঙ্গী দুজনকে। অন্ধকারেই তাদের উঁচু কণ্ঠের কথাবার্তা শুনতে পেয়ে থমকে গেল দলটি। কোনোভাবে তাদের এড়িয়ে যেতে চাইলেও তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না। তাদের অবস্থান স্কুলঘর থেকে বেশ কিছুটা দূরে বলে তাদের মুখোমুখি না […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-১৪
ভোর হওয়ার আগেই নিশিন্দার জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দলটিতে কেমন সাজসাজ রব পড়ে যায়। প্রতিটি সদস্যই যেন ধনুকের ছিলার মত টানটান হয়ে আছে উত্তেজনায়। যাদের অধিকাংশই যেন একটু ঢিল পেলেই ছুটে যাবে তীরের মত। হাসন আলি হঠাৎ লক্ষ্য করলো, কাশেম হাবিলদার কেমন কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। ঠিক তখনই হাপাতে হাপাতে ছুটে […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-১৩
হাবিলদার কাশেমের নির্দেশে হোসেন মৃধা দেলু আর ফালুকে নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে। এটা তার প্রশিক্ষণেরই একটি অংশ। তার অজ্ঞাতে আরো তিনজনের একটি দলকেও সেখানে পাঠানো হয়েছে। পরে দু’গ্রুপের বর্ণনায় কতটা মিল থাকে তারই পরীক্ষা হবে। আর এতে উত্তীর্ণ হতে পারলে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ দায়ীত্ব পাবে তাদের দলটি। হোসেন মৃধা সিদ্ধেশ্বরী গ্রামটির উত্তরাংশ দিয়ে […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-১২
প্যান্ট সার্ট পরে গাঢ় অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতেই তিনজনকে কেমন অচেনা মনে হয়। চেহারা বুঝতে না পারার কারণে হাসন আলি চান্দভানু , মমতা, আর জুলেখাকে আলাদা করতে পারে না। হোসেন মৃধা প্যান্ট-সার্ট পরে না। প্যান্ট-সার্টগুলো এখন মেয়েদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বেশি। সারাদিনের মৃত্যুভয় আর নিজকে রক্ষার উত্তেজনার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলেছিলো চারজনেই। এখন নিশ্চিন্তে শ্বাস ফেলতে পারছে […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-১১
অন্ধকারেই হাসন আলির ম্লান টর্চের আলোয় ওরা পুড়ে যাওয়া বেতের জঙ্গলের শেষপ্রান্তে হরি ঘোষের লাশ দেখতে পায়। পিতার লাশ দেখতে পেয়ে ফের ঝাঁপিয়ে পড়ে হুহু কান্নায় ডুকরে ওঠে মমতা। মৃত মানুষের পাশে কান্নারত মানুষের দৃশ্য আরো বেদনাদায়ক। চান্দভানু এগিয়ে গিয়ে মমতাকে টেনে তুলে বলে, এখন আমাগ হাতে সময় বেশি নাই। কান্দাকাটি কইরা সময় নষ্ট কইরা […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-১০
ভোরের দিকে বেতের জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে এলোপাথারি গুলির ট্যাশ ট্যাশ শব্দও ভেসে আসে। হোসেন মৃধা বললো, আর বুঝি রক্ষা হইলো না! চলো এহান থাইক্যা সইরা যাই! বেতের জঙ্গলের লেলিহান আগুন পটপট শব্দে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দও এগিয়ে আসতে থাকে। কোনো কোনো গুলি তাদের মাথার উপর দিয়ে গাছের ডাল-পাতা ছিন্নভিন্ন […]
ধারাবাহিক উপন্যাস: কালসাপ-৯
মজিবর মাস্টার হোসেন মৃধার সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার দিন তিনেক পর অন্ধকারে কাদা পানি ভেঙে হরি ঘোষ এসে দেখতে পায় হোসেন মৃধার ভিটা থাকলেও সেখানে ঘরের কোনো চিহ্ন নেই। একটু ঘন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে হরি ঘোষ ভাবছিলো যে, যদি মতিউর রহমান অথবা কানা আজমের দল ঘর দুটো পুড়িয়ে দিয়ে থাকে চালের টিনগুলো অন্তত থাকার কথা। টিনগুলোও […]