কুলদা রায়

একাত্তরের চলচ্চিত্র কারিগর

২৬ মার্চ সকাল ১১টায় আনোয়ার শাহাদাত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুভি কারিগর দেখানো হবে চ্যানেল আইতে। একাত্তরের ছবি কারিগর। কাহিনী-সংক্ষেপ–একাত্তরে বরিশালের এক গ্রামে পাকবাহিনী হিন্দু নিধন করতে এসেছে। গ্রামের হাজাম (খাৎনাকারী) তাদের কাছে গিয়ে বলে– এখানে কোনো হিন্দু নাই। যারা ছিল তাদের মুসলমান করেছে তার বাবা আর সে নিজে। কারিগর এই কথাটা মাথায় পবিত্র কোর-আন শরীফ নিয়ে […]

 কুলদা রায়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা : ভিন্ন অধ্যায়

কুলদা রায় এমএমআর জালাল লিও কুপার জেনোসাইড নামে একটি বই লিখেছেন। বাংলা অর্থ গণহত্যা। বইটির প্রচ্ছদ করা হয়েছে কিছু সংখ্যা দিয়ে। লেখা হয়েছে—১৯১৫ : ৮০০,০০০ আর্মেনিয়ান। ১৯৩৩-৪৫ : ৬০ লক্ষ ইহুদী। ১৯৭১ : ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী। ১৯৭২-৭৫ : ১০০,০০০ হুটু। নিচে লাল কালিতে বড় করে লেখা জেনোসাইড। এই অংকের মানুষ গণহত্যার শিকার। এই আট লক্ষ, […]

 কুলদা রায়

স্মৃতি তুমি ব্যাদোনা : সুনীলের কেউ কথা রাখেনি

(উৎসর্গ : সুজন চৌধুরী) ১……………………………………………………………………………………………………………………………. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি খুব বিখ্যাত কবিতা। এই কবিতার মত জনপ্রিয় কবিতা বোধ হয় বাংলা ভাষায় আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি মারা যাওয়ার পরেও কবিতাটি অনেকে পড়বেন। এই কবিতাটির কারণেই সুনীল গাঙ্গুলী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়েছিলেন। আর আমি কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ইতিহাস এরকম নির্মম। সে কাউকে ক্ষমা করে না। ২…………………………………………………………………………………………………………………………….. […]

 কুলদা রায়

এ ব্রিফ ডাইরি অফ হারিকেন আইরিন

২৫ আগস্ট, ২০১১ ————— নিউ ইয়র্ক হাতে হারিকেন নিয়ে উড়িতেছে। নো বাস। নো ট্রেন। নো প্লেন। নো ক্লেইম। বুঝলা বাপা, আইরিন ইজ কামিং। আইরিন আসিতেছে। লে লে লে হালুয়া। –আইরিন ক্যাডা? –মিস আইরিন। এই পর্যন্ত শুনিয়া বেঞ্জামিন বেনী দাঁড়াইয়া গেল। বেনী টলিতেছে। এখন তাহার টলিবার সময়। বেনী মাথাটি একটু ইষৎ ঝুকিয়া পড়িল—বোঁ করিয়া কহিল, মিস […]

 কুলদা রায়

কী করে একটি অসাধু মিথ্যা মহৎ সত্য হয়ে ওঠে

কুলদা রায় এমএমআর জালাল ————————————————————————————————————————- নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর গত ২৫ বৈশাখ এনটিভিতে অভিযোগ করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। নূরুল কবীর  বাংলাদেশের অকুতোভয় সাংবাদিক কাম সম্পাদক। সুতরাং তিনি যখন কোনো তথ্য বলেন—দায় দায়িত্ব নিয়েই বলেন। খোঁজ খবর নিয়েই বলেন। রামাশ্যামাযদুমধুদের মত যা মুখে এলো তা বলবেন একজন সম্পাদক এটা […]

 কুলদা রায়

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে

আমাদের বাসার সামনে একটি তালগাছ। এই লাইনটি লিখেছে আমার ছোটো মেয়ে। ও বাংলা লিখতে পারেনা। খুব ছোটোবেলা দেশ ছেড়ে এসেছে। বাংলা লেখা ভুলে গেছে। ওর মা মাঝে মাঝে লেখা শেখায়। বলে, লেখো—স্বরে-অ। ছোটো মেয়েটি বলে, এই লিখিলাম স্বরে—অ। ও একটি বাংলা খাতা খুলেছে। অনেক কাটাকুটি করেএকটি পাতায় লিখেছে—আমাদের বাসার সামনে একটি তালগাছ। আর কিছু নেই। […]

 কুলদা রায়

খড়মবাড়ি

১. আমার আজা মশাইয়ের একজোড়া পাদুকা মাত্র। কাঁঠালকাঠের। একে খড়ম বলে। এই খড়ম পড়লে জগৎ ভ্রমাণো যায়। তখন আকাশে বাতাসে ধ্বনি ওঠে—খট্টাস খট্টাস। লোকে ফট্টাস ফট্টাস করে বুঝতে পারে—মাস্টারবাবু চরাচর ভ্রমাইতে বাহির হইয়াছেন। সন্ধ্যাকালে ফিরিবেন। ফিরিয়া লাভ আছে। কহিবেন, এ জগতে সকলই  সবার। ইহার তুল্য বাক্য নাই। এই বাক্য বলিয়া তিনি গাহিতেন, আমার সোনার বাংলা […]

 কুলদা রায়

এক পা কাটা– তিন পাঅলার আষাঢ়ে গপ্প

লিমন নামের এই ছেলেটির জন্মের আগে থেকেই এক পা কাটা ছিল। তার বাবারও পা কাটা। মায়েরও তাই। এই ব্যান্ডেজটি ভুয়া। খুলে দেখতে পারেন। লিমনের দাদাজানের পা কাটা ছিল। নানাজানেরও তাই। এরা বংশগতভাবেই এক পা-কাটা। চণ্ডাশোকের আমলের কলিঙ্গ যুদ্ধের আগে থেকেও লিমনের চৌদ্দপুরুষের পা কাটা ছিল। অশোক স্তম্ভে সেরকম সাক্ষ্য আছে। বিভারেজ সাহেবের বাকেরগঞ্জের ইতিহাস বইয়ের […]

 কুলদা রায়

মুক্তিযুদ্ধের গল্প: কাঠপাতার ঘর

আমার বাবা আর ঠাকুর্দা দুজনে মিলে কাঠপাতার ঘর বানিয়েছিল। ছোটখাট ঘরটি। মাটির মেঝে। চালে কাঠপাতা। নতুন গাঁ থেকে বাঁশ এনে তিনটি মাঁচাও বানানো হয়েছিল। বড় মাঁচায় বাবা মা আর ভাইবোনগুলো। মাঝারি মাঁচায় বড়দিদি আর জামাইবাবু। ঘরটির একটি বারান্দাও ছিল। সেখানে আমার ঠাকুর্দা আর পাগল ঠাম্মা। দরমার বেড়া দিয়ে হু হু করে হাওয়া ঢুকত।  মাঝে মাঝে কাঠপাতার […]

 কুলদা রায়

আমাদের কখনো জন্ম হয় না

আমার জন্মদিন কবে সত্যি আমার জানা নেই। আমার মায়েরও নেই। বাবারও ছিল না। ঠাকুরদার তো মনে থাকার কথাই নেই। এসব বালাই তাদের ছিল না। ভাগ্যিস আমারও নেই। আমার ভাইবোনদের কারোরই জন্মদিন বলে কোনো ব্যাপারে কখনো আগ্রহ দেখা যায়নি। সবার একটা জন্মদিন আছে বটে–সেটা বানানো। স্কুল থেকে দেওয়া। যেদিন ভর্তি হয়েছিলাম স্কুলে ক্লাশ টুতে– হুজুর স্যার […]

 কুলদা রায়

ও টগর, ও কুক্কুট : দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্বের লিংক : দ্বিতীয় পর্ব মেজ ঠাম্মার দীর্ঘ চাচর কেশ। গন্ধরাজ তেল মাখতে মাখতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠেই আবার গন্ধরাজ তেল মাখতে শুরু করে। ততক্ষণে সূর্যটা পশ্চিমপূর্ব দিক থেকে কিছুটা মাথাও উপরে উঠে যায়। সারি সারি নারিকেল গাছের পাতায় ছায়া দোলে। দেখতে দেখতে মেজ ঠাম্মা উচ্চস্বরে বলে, অ বিনা, টাকি মাছ দিয়া নটেশাক […]

 কুলদা রায়

ও টগর, ও কুক্কুট…

প্রথম পর্ব বরইগাছটার গায়ে সামান্য আগুনের তাপ লেগেছে। কয়েকটি ডাল শুকিয়ে গেছে। বাঁকলের একটি অংশ কালো। দূর থেকে বোঝা যায় না এই ডালে আগুনের আঁচ লেগেছিল। বরই ধরেছে প্রচুর। গোল গোল। দাঁতে কাটলে কচ করে শব্দ হয়। টক এবং মিষ্টি। বরইগাছটির নিচে একটি বাঁধানো চবুতরা। সবাই জামাকাপড় কাঁচে। মা কাঁচে না। এক বালতি জল এনে […]